ভ্যাকসিন রফতানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা, ‘জানেই না’ বাংলাদেশ
অক্সেফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার পর আগামী কয়েক মাসের জন্য রফতানি অনুমতি বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। তবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি থাকার পরও ভ্যাকসিন আমদানিতে বাংলাদেশকে এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
এ পরিস্থিতিতে টিকা পেতে বাংলাদেশকে সম্ভবত আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। আর সেটা কত দিন তা-ও প্রায় অনিশ্চিত। দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণের যখন মহামারি তখন ভ্যাকসিন আমদানিতে ভারতের ওপর নির্ভরতায় নতুন করে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
সোমবার সকালে দেশের একাধিক বেসরকারি টিভি চ্যানেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হচ্ছে, টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জানা নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চাইলে দিল্লির সঙ্গে কথা বলবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত শনিবার (০২ জানুয়ারি) অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয় ভারত সরকার। এর আগে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ভারতের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন কিনতে চুক্তি করে।
করোনা ভ্যাকসিন ক্রয় চুক্তির ধারা অনুযায়ী, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ৬ মাসে বাংলাদেশকে ৩ কোটি টিকা দেয়ার কথা রয়েছে। প্রতিমাসে টিকা আসবে ৫০ লাখ করে। বাংলাদেশ সরকার জনগণকে বিনামূল্যে এ টিকা দেয়ার ঘোষণা আরও আগেই দিয়ে রেখেছে। এছাড়া বেক্সিমকো বেসরকারিভাবেও ৩০ লাখ টিকা আনবে, যার প্রতি ডোজের দাম পড়বে ১ হাজার ২০০ টাকা।
এদিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার ভ্যাকসিন কিনতে ভারতকে অগ্রিম হিসাবে ৬০০ কোটি টাকারও বেশি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ।
দুদিন আগেই গেল শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, চলতি জানুয়ারি মাসের মধ্যেই করোনা ভাইরাসের টিকা দেশে আসবে। এ সপ্তাহেই সেরাম ইনস্টিটিউটকে অক্সফোর্ডের এ টিকার আগাম ৬০০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘জানুয়ারি মাসেই কোনও একসময়ে আমরা টিকা পেয়ে যাবো। আমাদের তো পেপার ফরমালিটি যা ছিল সেটা প্রায় কমপ্লিট হয়ে গেছে। অ্যাডভান্সের টাকাও চলে যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের ১০ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার প্রাথমিক লক্ষ্য সরকারের। এক্ষেত্রে একটি টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে কখন কারা কীভাবে টিকা পাবে সেই তালিকা তৈরির কাজ চলছে।’
একাধিক উন্নয়নশীল দেশের জন্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকার ১০০ কোটি ডোজ উৎপাদনের চক্তি করেছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। চলতি বছর যত করোনার টিকা উৎপাদন করা হবে তার সিংহভাগই যাবে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর কাছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভ্যাকসিন উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত টিকাগুলোর বেশিরভাগই উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ভারত টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ফলে বিশ্বের অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোকে টিকা হাতে পেতে খুব সম্ভবত আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে।