বরিশালে পুলিশ হেফাজতে যুবকের মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন
বরিশাল নগরীতে পুলিশি নির্যাতনে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রবিবার (০৩ জানুয়ারি) দুপুরের পরে ৩ সদস্য বিশিস্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়ছে।
মৃত ওই যুবকের নাম রেজাউল করিম (৩০)। তিনি নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাগরদী হামিদ খান সড়কের মো. ইউনুস মুন্সির ছেলে। রেজাউল করিম আইন কলেজ গত বছর এলএলবি (পাস) ডিগ্রি অর্জন করে ছিলেন।
রেজাউল করিমের বাবা মো. ইউনুস মুন্সি অভিযোগ করেন, গত বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ বাড়ি সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে বসা ছিলো তার ছেলে রেজাউল করিম। রাত সাড়ে ৮টার দিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মহিউদ্দিন সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে যান। পরে এসআই মো. মহিউদ্দিন জানান রেজাউল করিমের কাছ থেকে ১৩৮ গ্রাম গাঁজা এবং ৪পিস নেশাজাতীয় ইনজাকশন উদ্ধার করা হয়েছে। ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে রেজাউল করিমকে আসামি করে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা মাদক আইনে মামলা করেন এসআই মো. মহিউদ্দিন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পরদিন শুক্রবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ।
মু. ইউনুস মুন্সি বলেন, এসআই মো. মহিউদ্দিন ধরে নেয়ার সময় রেজাউল সুস্থ ছিল। তার শরীরে মারা যাওয়ার মত কঠিন কোনো রোগও ছিল না। তবে শুক্রবার তাকে আদালতের সোপর্দের সময় রেজাউলকে গুরুতর অসুস্থ ছিল। সে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছিল না। আদালতের নির্দেশে রেজাউলকে প্রথমে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে খোজ নিয়ে জানতে পারি সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে শুক্রবার (০১ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে মৃত্যু হয় রেজাউলের।
মো. ইউনুস মুন্সি বলেন, নির্যাতনের কারনেই ছেলে রেজাউলের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিস্ট পুলিশ কর্মকর্তার তিনি বিচার দাবি করেন।
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, ১ জানুয়ারি রেজাউল করিম নামে ওই হাজতি আসামিকে কারা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার হাজতি পরোয়ানায় বাম পায়ে একটি পুরাতন জখমের কথা উল্লেখ ছিল। হস্তান্তরের পর প্রথমে তাকে কারাহাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই দিন রাতেই তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে তার মৃত্যু হয়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মু. মহিউদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) নরেশ কর্মকার জানান, পুলিশ হেফাজতে রেজাউল করিমকে নির্যাতন দূরের কথা, তার সঙ্গে কেউ দুর্ব্যবহারও করেননি। রেজাউল করিম চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। গত আগস্ট মাসেও ১৬০ পিস নেশাজাতীয় ইনজাকশনসহ আটক হয়েছিল রেজাউল। ২০১৯ সালেও তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা হয়েছিল। রেজাউল নিজেও নেশাজাতীয় ইনজাকশন পুশ করে নেশা করতেন। এ কারণে তার বাম পায়ের উপরের অংশে একটি ক্ষত ছিল। ওই ক্ষততে ইনফেকশন হয়ে রক্ত ক্ষরণের কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনা মু. শাহাবুদ্দিন খান জানান, হাজতি রেজাউল করিমের মৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্য বিশিস্ট কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে নির্যাতনের অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।