চাল আটা তেল ডালের দাম বাড়তি
আকাশপথে পেঁয়াজ আমদানি করেও সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমদানি বাড়ায় কমতে থাকা পেঁয়াজের দাম হঠাৎ আবারও বেড়ে গেছে। দুই দিন ধরে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকা ছুঁই ছুঁই। পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার মধ্যে চাল, ভোজ্য তেল, আটা ও ডালের দাম বেড়ে গেছে। খুচরা বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রতি কেজি চালের দাম ছয়-সাত টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারি বাজারে মিনিকেট চালের বস্তায় (৫০ কেজি) ২৫০-৩০০ টাকা বাড়তি।
আমাদের ঢাকার বাইরের প্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, পেঁয়াজের পাশাপাশি সবজি, ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। দিনাজপুরের হিলিতে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০-৪৫ টাকা। খুচরা বাজারে ১৩০-১৪০ টাকা দামের পেঁয়াজ হঠাৎ ১৮০ টাকা হয়েছে। বরগুনার আমতলীতে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। পেঁয়াজ, ডিম, দেশি ও ব্রয়লার মুরগি, শীতের সবজির দাম বেড়ে গেছে। ময়মনসিংহের ফুলপুরে পেঁয়াজের জোগান বাড়লেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি দাম, অভিযান চালানো হলেও দাম বাড়ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার আমদানি করা ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। খোলা আটা-ময়দা, ডাল, ডিম, আলু ও মুরগির দামও বেড়েছে। টিসিবির তথ্যে গতকাল চালের দাম বাড়েনি বলা হলেও কার্যত বাজারে এক-দুই টাকা করে চালের দাম বাড়তি ছিল।
গত এক মাসের টিসিবির তথ্য বলছে, বাজারে সরু চালের দাম বেড়েছে ৬.৯৩ শতাংশ। অর্থাৎ ৪৫-৫৬ টাকার চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৬০ টাকায়। মাস ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এই চালের দাম ৩০-৩৮ টাকা থেকে এখন ৩৪-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল চালের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি ও মাঝারি মানের চাল দাম বেড়েছে ৪.৪৪ শতাংশ।
ঢাকার মধ্য বাড্ডার কয়েকটি আড়তের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাইকারিতে বিআর-২৮ চাল ৩০-৩২ টাকা থেকে বেড়ে ৩৩-৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় এই চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়। পাইকারি বাজারে স্বর্ণা জাতের মোটা চাল ২৭-২৮ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩২-৩৪ টাকায়, যা খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা।
চালের দামের পাশাপাশি খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে তিন-পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। মাস ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১.৮৫ শতাংশ, বোতলজাত তেলের দাম বেড়েছে ২.৪৪ শতাংশ আর পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৮-৯.৮৫ শতাংশ। খোলা আটার কেজি দুই টাকা বেড়ে ৩০ টাকা, ময়দা কেজিতে ছয় টাকা বেড়ে ৪২ টাকা, দেশি মসুর ডাল কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও বাজারে জোগান খুব কম। দেশি নতুন পেঁয়াজ বাজারে সেভাবে আসেনি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম কমে যেতে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
টিসিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে গড়ে ৫০০ শতাংশ। এক বছর আগে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৫-৪০ টাকায়, যা বর্তমানে ১৬০-২৩০ টাকা। এর মধ্যে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫৭২ শতাংশ অর্থাৎ ২৫-৩০ টাকার পেঁয়াজ এখন ১৬০-২১০ টাকা। আর ৩০-৪০ টাকার দেশি পেঁয়াজ বর্তমানে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫৪২ শতাংশ।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি পণ্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সোমবারের মতো গতকালও একই দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২১৫-২২০ টাকা। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৮২-১৯৫ টাকা, পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১৮০ টাকা, মিসরের পেঁয়াজ ১৭০ টাকা ও চীন থেকে আনা বড় বড় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা।
শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের দিনের তুলনায় পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে। দেশি পেঁয়াজ ২০০ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হয়েছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৭০-১৭৮ টাকা, চীনের পেঁয়াজ ১০০ টাকার কিছু বেশি দামে বিক্রি হয়। আর পাকিস্তানের পেঁয়াজ ১৬০-১৬৫ টাকা এবং দেশি নতুন পেঁয়াজ ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।