অভিযান কোনও ‘ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়’: খোকনকে ইঙ্গিত তাপসের
রাজধানীর ফুলবাড়ীয়া সুপার মার্কেটে (ব্লক-২) নকশা বহির্ভূত দোকান উচ্ছেদে চলমান অভিযান কোনও ‘ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়’ জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ‘ওই উচ্ছেদ অভিযান অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে। কোনোভাবেই এ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।’
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) ডিএসসিসি’র ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসাবো বালুর মাঠ সংলগ্ন এলাকায় বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের (এসটিএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে ফুলবাড়ীয়া সুপার মার্কেটে (ব্লক-২) দোকানের বৈধতার কথা বলে ৩৪ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মার্কেটের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমাম মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি আগামী ৩১ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার একই আদালতে করা এ মামলা সাঈদ খোকন ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরকার, উপসহকারী প্রকৌশলী মাজেদ, কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদ।
গতকাল মামলা দায়ের আবেদনের পরই মেয়র তাপসকে ‘ইন্ধনদাতা’ হিসেবে ইঙ্গিত করে ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সবাই বলছে, বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলুকে দিয়ে এসব নোংরামি করাচ্ছেন। এতে করে তার (তাপস) নিজের ও দলের ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’
সাঈদ খোকনের ওই বক্তব্যের পর আজ কোনও ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে মেয়র তাপস বলেন, ‘আমি আবারও খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমাদের এই অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম কোনও ব্যক্তিকেন্দ্রিক না। কোনও ব্যক্তি যদি এতে হেয় প্রতিপন্ন হন, লজ্জিত হন, সেটা ওই ব্যক্তির বিষয়। ডিএসসিসি’র বিষয় নয়।’
অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান থাকবে জানিয়ে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, ‘কোনোভাবেই এ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। আমরা কোনোভাবেই আপস করবো না।’
এদিকে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকনসহ অন্য আসামিরা দোকান বরাদ্দের কথা বলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করে মোট ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৫৭৫ টাকা বেনামে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গ্রহণ করেন। বাদী এ লেনদেনে বাধা দেয়ায় আসামিরা তার প্রাণনাশের চেষ্টা করেন। আসামিরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন, কিন্তু কোনও দলিলাদি দেননি।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৪/১০৯/১২০(খ)/৪০৬/৪১৭/৪৬৮/৪৭৭ (ক)/৫০৬ ধারায় অর্থ আত্মসাৎ এবং অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গসহ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়।
ডিএসসিসি’র মালিকানাধীন ওই মার্কেটের তিনটি ব্লকে নকশাবাহির্ভূত ৯১১টি দোকান ছিল। এসব দোকান উচ্ছেদে গত ৮ ডিসেম্বর অভিযান চালায় ডিএসসিসি কর্মকর্তারা। ওইদিন দোকান মালিক ও কর্মচারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের পরই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০টি দোকান অপসারণ করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের অভিযোগ, নকশাবহির্ভূত এসব দোকান বৈধ করতে তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকনের সময় কয়েক কোটি টাকা দিয়েছেন তারা। এরপর থেকে দোকানগুলো থেকে নিয়মিত ভাড়াও আদায় করেছে ডিএসসিসি।
এদিকে প্রায় এক তৃতীয়াংশ দোকান উচ্ছেদ হওয়ায় সেখানকার ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ফুলবাড়িয়ার নগর প্লাজা, জাকের সুপার মার্কেট ও সিটি প্লাজায় নকশাবহির্ভূত অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদের কারণে বৈধ দোকানিরাও বিপাকে পড়েছেন। শীত মৌসুমে গরম কাপড়ের অবৈধ দোকান উচ্ছেদে বিপাকে পড়েছেন বৈধ ব্যবসায়ীরাও। অবৈধ দোকান উচ্ছেদকে তারা সাধুবাদ জানালেও ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শংকা তাদের চোখেমুখে। উচ্ছেদ অভিযানের কারণে সেখানকার দোকানগুলোতে ক্রেতা সমাগম কমে গেছে বলেও জানিয়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।
গত ৮ ডিসেম্বর ফুলবাড়িয়া সুপারমার্কেট-২ এর এ, বি ও সি ব্লকের সিটি প্লাজা, নগর প্লাজা ও জাকের সুপার মার্কেটে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এই তিন মার্কেটে বৈধ দোকান হচ্ছে মাত্র ৫৩১টি, অবৈধ ৯১১টি।