করোনার কারণে বৃটেনে প্রায় ১০ মিলিয়ন লোকের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন

0

করোনা ভাইরাস সংকট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনার পরও বছরের পর বছর ধরে এর প্রভাব অনুভূত হবে বলে শীর্ষস্থানীয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

বছরখানেক ধরে করোনা ভাইরাস সঙ্কটে নিমজ্জিত থাকার প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়ার ফলে বৃটেনে ১.৫ মিলিয়ন শিশুসহ প্রায় ১০ মিলিয়ন লোককে নতুনভাবে বা অতিরিক্ত হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার প্রয়োজন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষত এশীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ব্যাপক প্রভাব স্পষ্ট এবং এ সংখ্যা দ্রুত বাড়তে পারে।  

বৃটেনের রয়্যাল কলেজ অফ সাইকিয়াট্রিস্টের প্রেসিডেন্ট ডা. অ্যাড্রিয়ান জেমস বলেছেন, এই রোগের সংমিশ্রণ এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিণতি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। মহামারীটি অনেক দিন থাকার ফলে দীর্ঘকাল এর ক্ষতিকর প্রভাব অব্যাহত থাকবে।

বৃটেনে কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে এই ভবিষ্যদ্বাণীটি আসে এবং  মানসিক অসুস্থতা বিকাশের আগেই তা প্রতিরোধের পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতি যাতে আরো খারাপ না হয় সেটি নিশ্চিত করার জন্য বিশেষজ্ঞরা  তাগিদ প্রদান করছেন।

ডা. জেমস বলছেন, করোনা সংকট দ্রুত সমাজদেহে  প্রবেশ করছে। এটি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে চলেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এটি সম্ভবত মানসিক স্বাস্থ্যের সবচেয়ে বড় আঘাত। অথচ মহামারী শুরু হওয়ার সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ হ্রাস পেয়েছে। লোকেরা জিপি সার্জারি এবং হাসপাতাল থেকে দূরে রয়েছেন বা চিকিৎসা সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন।

এনএইচএস ডিজিটাল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মানসিক স্বাস্থ্য সেবার সাথে যোগাযোগের  সংখ্যা কখনও এতো বেশি হয়নি। কিছু কিছু হাসপাতালের ট্রাস্ট তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ওয়ার্ডগুলি স্পষ্টতই চাপের মধ্যে রয়েছে বলে রিপোর্ট করেছে।

মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মডেলিং পূর্বাভাস দিয়েছে, করোনা ভাইরাস মহামারীর প্রত্যক্ষ ফলাফল হিসেবে ১০ মিলিয়ন লোককে নতুন বা অতিরিক্ত মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে প্রায় ১.৩  মিলিয়ন মানুষ যাদের আগে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল না। তাদের মধ্য থেকে গুরুতর উদ্বেগের জন্য চিকিৎসা এবং মাঝারি থেকে গুরুতর অসুখের জন্য ১.৮ মিলিয়ন চিকিৎসার প্রয়োজন হবে বলে তারা আশংকা করছেন।

সামগ্রিক পরিসংখ্যানটিতে উদ্বেগ ও হতাশার ঝুঁকিতে থাকা দেড় মিলিয়ন শিশু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।  আইসোলেশন বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, কোয়ারেন্টিনে পৃথকীকরণ, পরিবারের সদস্যদের হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যুর ফলে এদের মধ্যে মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।  বিশেষত কালো, এশীয় এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, কেয়ার হোমস এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব স্পষ্ট এবং এ সংখ্যা দ্রুত বাড়তে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে লকডাউনের বিরুদ্ধে যুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। তবে জেমস বলেছেন, ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে মানসিক স্বাস্থ্যের কারণগুলি উপেক্ষা করা উচিত নয়। সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা বা দুর্বল প্রিয়জনরা অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয় ছড়িয়ে মারাত্মক রোগে ভুগলে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি ভয়ংকর হতে পারে। প্রিয়জনকে হারানোর পরে প্রায়শই ব্যক্তিগতভাবে বিদায় জানাতে না পারায় জটিল শোকের প্রতিক্রিয়াগুলি অন্যতম ক্ষতির কারণ। কর্মসংস্থান, আবাসন এবং সামনের বিস্তৃত অর্থনৈতিক কষ্টের বিষয়ে অনিশ্চয়তার বোঝা এটিকে আরো বাড়িয়ে তুলবে।

জেমস বলেছেন, পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সেবাগুলি আরও সুন্দর করে সাজাতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, তরুণ কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষেরা প্রাথমিক পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে প্রায়ই অনিচ্ছুক থাকে।  এসব সমস্যা স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার মাধ্যমে সমাধান করা প্রয়োজন।

করোনায় মানসিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব নিয়ে ইতিপূর্বে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ডব্লিউএইচও বলছে, করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। গত জুন থেকে আগস্ট মাসে ৯৩টি দেশে পরিচালিত জরিপের উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত সেপ্টেম্বর মাসে সতর্কতা জারি করে বলেছে, করোনা ভাইরাসের সংকটময় সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য উপেক্ষা করা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপের অন্তর্ভুক্ত ১৩০টি দেশের ৮৩ শতাংশ করোনা মহামারী বিষয়ক পরিকল্পনায় মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অন্তুর্ভুক্ত করেছে। সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিচালক দেভোরা কেসটেল ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে মানসিক স্বাস্থ্যখাতে অবিলম্বে তহবিল বাড়ানোর তাগিদ দেন। তিনি বলেন, এটি কোভিড-১৯ এর উপেক্ষিত দিক।

করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে গত কয়েক মাসে আমাদের জীবনে যেসব নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে, তাতে সর্বত্র মানসিক দুশ্চিন্তা অনেক বেড়ে গেছে। এক নতুন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, অভিভাবকরা বিশেষ করে তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com