করোনাকালে বছরজুড়ে সাহায্য কার্যক্রমে এগিয়ে ছিলেন যারা
চলতি বছর অর্থাৎ ২০২০ সাল করোনার তাণ্ডবে বিশ্বের অন্য সব কিছুর মতো বিনোদন জগৎও থমকে গেছে। এ ভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী গরিব ও স্বল্প আয়ের মানুষের অবস্থা শোচনীয়।
তাদের সাহায্যার্থে বিশ্বের বিনোদন জগতের তারকারাও সাধ্যমতো পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের কেউ কেউ এককালীন সাহায্য দিয়েছেন; কারও কারও সহযোগিতা এখনও চলমান। হলিউড-বলিউডের মতো বাংলাদেশি তারকারাও চেষ্টা করেছেন গরিব অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে। বছরজুড়ে তারকাদের মহানুভবতা নিয়ে এ প্রতিবেদন।
করোনাকালে বছরজুড়ে বাংলাদেশি তারকাদের মধ্যে অনন্ত ও বর্ষা করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। করোনা পরিস্থিতির শুরুতে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অনন্ত জলিল তার কারখানার শ্রমিকদের ১২ কোটি টাকা পারিশ্রমিক দিয়েছেন।
দু’বার পাঁচ শতাধিক বেকার শিল্পীকে সহায়তাসামগ্রী দিয়েছেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নিজ বাসার সামনে ৩৫০ জন মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন খাদ্য ও জীবাণুনাশক সামগ্রী। নিজ গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে ১০০০ পরিবারের মধ্যে একইভাবে খাদ্য ও জীবাণুনাশক সামগ্রী বিতরণ করেন চিত্রনায়িকা বর্ষা। পাশাপাশি ৫০০ অসহায় মায়েদের কাছে তার সন্তানের জন্য এক মাসের দুধ ও খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়েছেন এ নায়িকা।
করোনাকালীন ঈদে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অসহায় ভক্তদের জন্য দু’দফায় ২০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন অনন্ত। তাদের বিভিন্ন ধরনের সাহায্য কার্যক্রম এখনও চলমান। করোনায় বছরব্যাপী আরও এক নায়িকার সহায়তা কার্যক্রম চোখে পড়েছে। তিনি নিপুণ। নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীকে প্রতি মাসে বেতন চালু রেখেছেন। কুমিল্লায় গ্রামের বাড়ি এলাকার অসহায় মানুষের চাহিদা অনুযায়ী আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। ঈদে এফডিসির শিল্পী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের ঘরে ঘরে ঈদ উপহার পাঠিয়েছেন।
এছাড়া তার কাছ থেকে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকেই সহযোগিতা পেয়েছেন। তার কার্যক্রম এখনও চলমান। চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপিও নিজ এলাকা খুলনায় কয়েকবার অসহায় মানুষের মধ্যে খাদ্যদ্রব্যসহ মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস ও স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন। চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকেও দেখা গেছে সাহায্য করতে। করোনার শুরুর দিকে তিনি শতাধিক কর্মহীন অসহায় মানুষের মধ্যে খাবার, মাস্ক ও গ্লাভস বিতরণ করেছেন। চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী নারায়ণগঞ্জে নিজ এলাকার কয়েকটি গার্মেন্ট শ্রমিকের মধ্যে সাহায্য বিতরণ করেছেন।
চিত্রনায়ক জায়েদ খানকে দেখা গেছে শিল্পী সমিতির ব্যানারে অনেকের জন্য সাহায্য এনে দিতে। চিত্রনায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম ও মিষ্টি জান্নাতসহ আরও কিছু অভিনেত্রী বিচ্ছিন্নভাবে করোনাকালে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন।
বলিউডে করোনাকালে সবচেয়ে বেশি সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন শাহরুখ খান, তার স্ত্রী গৌরী খান ও চিত্রনায়িকা জুহি চাওলা। ৭টি ফান্ডে ১০০ কোটি রুপিরও বেশি অনুদান দিয়েছেন তারা। এছাড়া শাহরুখ হাজার হাজার পিপিই দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি ও মহারাষ্ট্রের সরকারকে। করোনা শুরুর দিকে এক মাসের জন্য প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের অন্ন সংস্থানের দায়িত্ব পালন করেছেন শাহরুখ-জুহি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষিত বিশেষ তহবিলে সর্বোচ্চ ২৫ কোটি ভারতীয় রুপি দান করেছেন অভিনেতা অক্ষয় কুমার। সালমান খান দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে কাজ করা ২৫ হাজার দিনমজুরের দায়িত্ব নিয়েছেন।
বছরজুড়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সহায়তা করতেও দেখা গেছে তাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ দিনমজুরের ঘরে মাসিক রেশন দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন অমিতাভ বচ্চন। পিএম কেয়ার ফান্ড, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল, ফিল্ম ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং অনেক এনজিওকে অনুদান দিয়েছেন আমির খান। অসহায়, বয়স্ক, অসচ্ছল, বেকার ও দিনমজুর- এ ধরনের ১ লাখ ২০ হাজার মানুষের খাবারের দায়িত্ব নিয়েছেন হৃত্বিক। দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা রজনীকান্ত প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে ৫০ লাখ রুপি দান করেছেন।
এ ছাড়া বছরজুড়ে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা জগতে কর্মরত দিনমজুরদের জন্যও অর্থ সাহায্য করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ত্রাণ তহবিলে করোনা মোকাবেলায় ২৫ লাখ রুপি দান করেছেন অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত। পিএম কেয়ার ফান্ডে ৪ কোটি রুপি অনুদান দিয়েছেন ‘বাহুবলী’খ্যাত দক্ষিণ ভারতীয় জনপ্রিয় অভিনেতা প্রভাস। তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কেরালার সরকারকে ১ কোটি ২৫ লাখ রুপি অনুদান দিয়েছেন দক্ষিণ ভারতের অভিনেতা আল্লু অর্জুন।
রোহিত শেঠি ও অজয় দেবগন পশ্চিম ভারতীয় চলচ্চিত্র শ্রমিকদের সাংগঠনিক তহবিলে প্রত্যেককে ৫১ লাখ রুপি করে অনুদান দিয়েছেন। অভিনেত্রী শিল্পা শেঠি ও তার শিল্পপতি স্বামী রাজ কুন্দ্র প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে দিয়েছেন ২১ লাখ রুপি।
ভিকি কৌশাল, কার্তিক আরিয়ান ও নানা পাটেকর পৃথকভাবে ১ কোটি রুপি ও বরুণ ধাওয়ান ৩০ লাখ রুপি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান দিয়েছেন। এছাড়া কারিনা কাপুর-সাইফ আলি খান দম্পতি, আনুশকা শর্মা-বিরাট কোহলি দম্পতি, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া-নিক জোনাস দম্পতি ও ক্যাটরিনা কাইফ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে মোটা অঙ্কের রুপি দান করেছেন। তবে তারা গণমাধ্যমে সেটির অঙ্ক প্রকাশ করেননি।
এসব তারকাদের মধ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বছরজুড়ে সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কথাও শোনা গেছে। কলকাতায় নায়ক দেব পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তহবিলে ১ কোটি রুপি অনুদান দিয়েছেন। একই তহবিলে দেড় লাখ রুপি দিয়েছেন সংসদ সদস্য ও অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। অভিনেত্রী ও সংসদ সদস্য নুসরাত জাহান নানাভাবে বছরজুড়ে সাহায্য করছেন অসহায়দের।
হলিউডের তারকাদেরও বছরজুড়ে ত্রাণ কার্যক্রমে নিজেদের ব্যস্ত রাখতে দেখা গেছে। বিশ্বখ্যাত গায়িকা টেইলর সুইফট এ মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ভক্তদের ৩ হাজার ডলার করে অনুদান দিয়েছেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেককেই সাহায্য করেছেন এ গায়িকা, যা এখনও চলমান। মহামারী প্রশমনে হলিউডে চুক্তিভিত্তিক কাজ করা লোকদের জন্য অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি দিয়েছেন ১০ লাখ ডলার।
এছাড়া বছরজুড়ে বিভিন্ন সময় বিশ্বব্যাপী অনেক এনজিওতে ব্যাপক অর্থ অনুদান দিয়েছেন তিনি। করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কিম কারদাশিয়ান ও তার বোন মডেল কাইলি জেনার ১০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন। করোনা দুর্গতদের জন্য গায়িকা রিয়ান্না দিয়েছেন ৫০ লাখ ডলার।
তার সাহায্য বছর শেষেও চলমান বলে জানা গেছে। জেনিফার অ্যানিস্টন কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য অনেক অর্থ অনুদান দিয়েছেন। এছাড়া অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, তারকা দম্পতি রায়ান রিনোল্ডস ও ব্লেক লাইভলিও করোনা দুর্গতদের বছরজুড়ে সাহায্য করেছেন বলে খবর প্রকাশ হয়েছে।