চাঁদা না দেয়ায় মারধর করে মোটরসাইকেল কেড়ে নিলেন ছাত্রলীগ নেতা

0

বরিশালের মুলাদী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আহম্মেদ জুয়েলের বিরুদ্ধে চাঁদার দাবিতে এক ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে মারধর ও মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বুধবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মুলাদী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

জুয়েল মুলাদী পৌর শহরের তেরচর এলাকার মো. শাহজাহান বেপারীর ছেলে। এছাড়া তিনি জ্বালানি তেলের ব্যবসায়ী। তেরচর এলাকার মামুন সিনেমা হলের বিপরীতে তার একটি তেলের দোকান আছে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী রাহুল চৌধুরী বলেন, ‘তেরচর বন্দর বাজারে আমার কাঠের দোকান রয়েছে। আট বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে ওই দোকান ও ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। আমার দোকান সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে ছাত্রলীগ সভাপতি জুবায়ের আহম্মেদ জুয়েল নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঝে মধ্যে চা পান করতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে আড্ডাও দিতেন তারা। গত ২৬ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে জুয়েল আমাকে বাসার সামনে থেকে ডেকে নিয়ে যান। এ সময় তার সঙ্গে কয়েকজন যুবক ছিল। তারা আমাকে মোটরসাইকেলসহ তেরচর এলাকায় জুয়েলের তেলের দোকানের সামনে নিয়ে যান। এরপর দোকানের ওপর দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে আমাকে আটকে রাখেন।’

তিনি বলেন, ‘ওই কক্ষটি জুয়েলের ক্লাবঘর নামে পরিচিত। কিছুক্ষণ পর সেখানে জুয়েল ও তার অনুসারী অভি প্রবেশ করেন। এ সময় জুয়েল আমাকে বলেন, মুলাদীতে ব্যবসা করতে হলে তাকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। তাকে জানাই, করোনার কারণে মন্দা যাচ্ছে। এত টাকা আমার কাছে নেই। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে আমাকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ক্লাবঘরে থাকা হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে জুয়েল ও তার অনুসারী অভি আমাকে বেদম মারধর করেন।’

রাহুল চৌধুরী বলেন, ‘মারধরের একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পানির ছিটা দেয়ার পর জ্ঞান ফিরে এলে তারা আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। এরপর আমার ২ লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যের মোটরসাইকেলটি রেখে দেন জুয়েল। পাশাপাশি আমার সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও তারা কেড়ে নেন। এসব ঘটনা কাউকে জানালে হত্যা করা হবে বলে জুয়েল হুমকি দিয়ে আমাকে ছেড়ে দেন। এরপর স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিই। বেশকিছু দিন অসুস্থ ছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘জুয়েল এলাকায় প্রভাবশালী। জুয়েল ও তার বাহিনী এমন কোনো কাজ নেই করতে পারে না। ওই ঘটনার পর থেকে টাকা চেয়ে আমাকে প্রায় দিনই হুমকি দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সম্প্রতি বিষয়টি আমার আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার গণ্যমান্যদের জানাই। তারা আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন। এর প্রেক্ষিতে সকালে থানায় জুবায়ের আহম্মেদ জুয়েল ও তার অনুসারী অভির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

এ বিষয়ে জুবায়ের আহম্মেদ জুয়েলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি নগদ টাকা দিয়ে রাহুল চৌধুরীর কাছ থেকে মোটরসাইকেলটি ক্রয় করেছেন। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মুলাদী থানার ভার্রপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়েজ উদ্দিন জানান, তেরচর বন্দর বাজারের রাহুল চৌধুরী নামে এক কাঠ ব্যবসায়ী একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আহম্মেদ জুয়েল ও অভি নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ আনা হয়েছে। দুপুরে অভিযোগটি হাতে পাওয়ার পর তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুজিবুর রহমানকে।

মুলাদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুজিবুর রহমান জানান, চাঁদাবাজির অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাতে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আহম্মেদ জুয়েলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডাকা হয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com