নূর হোসেনকে নিয়ে বক্তব্যের জন্য দুঃখিত ও অনুতপ্ত জাপা মহাসচিব
শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে করা অবমাননাকর বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মসিউর রহমান। তিনি তাঁর বক্তব্যের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও অনুতপ্ত।
কঠোর সমালোচনার মুখে জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে তাঁর বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। মসিউর রহমানের পক্ষে জাপার যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।
রোববার জাপার এক আলোচনা সভায় শহীদ নূর হোসেনকে ‘নেশাগ্রস্ত’ বলে মন্তব্য করেন মসিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘নূর হোসেন একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর ছিল। তাঁকে নিয়ে গণতান্ত্রিক দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নাচানাচি করছে।’
শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করায় মসিউর রহমানের সমালোচনা হচ্ছে। তাঁর বিচার চেয়েছেন নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রনেতারা। নূর হোসেনের মা মরিয়ম বিবি বলেছেন, মসিউরকে তাঁর বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। তাঁর বিচারও দাবি করেন তিনি। গতকাল সোমবার বিকেলে নূর হোসেনের মা-সহ পরিবারের ১২ জন সদস্য জাতীয় প্রেসক্লাবের মূল ফটকের পাশের ফুটপাতে জাপা মহাসচিবের বিচারের দাবিতে অবস্থান নেন। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে ছিলেন।
এমন প্রেক্ষাপটে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করলেন মসিউর রহমান।
জাপা মহাসচিব তাঁর বিবৃতিতে বলেন, গত ১০ নভেম্বর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ের মিলনায়তনে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ঘরোয়াভাবে আয়োজিত গণতন্ত্র দিবসের আলোচনা সভায় তাঁর কিছু বক্তব্য নিয়ে কোনো কোনো মহল, বিশেষ করে নূর হোসেনের পরিবারের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বছর নূর হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে কয়েকটি সংগঠনের আলোচনা, বক্তব্য ও বিবৃতিতে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়। এমনকি তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালিও করা হয়। এর ফলে জাতীয় পার্টির কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সেই প্রেক্ষাপটে কর্মীদের উত্তেজনার মধ্যে বক্তব্য প্রদানকালে অনিচ্ছাকৃতভাবে তাঁর মুখ থেকে নূর হোসেন সম্পর্কে কিছু অযাচিত কথা বেরিয়ে গেছে। যা নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যদের মনে আঘাত করেছে। এর জন্য তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও অনুতপ্ত।
বিবৃতিতে মসিউর রহমান বলেন, ‘নূর হোসেনের পরিবারের প্রতি আমাদের প্রয়াত চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু এরশাদও সমব্যথী ছিলেন। অতএব, অসতর্কভাবে বলে ফেলা আমার বক্তব্যে যে আঘাত লেগেছে, তার জন্য আমি নূর হোসেনের মায়ের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। একই সাথে আমার যে বক্তব্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, সেসব বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আশা করি, এই বিষয়ে আর কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না।’
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লেখা স্লোগান নিয়ে মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন নূর হোসেন। মিছিলটি রাজধানীর জিরো পয়েন্ট (বর্তমান শহীদ নূর হোসেন চত্বর) এলাকায় পৌঁছানোর পর পুলিশের গুলিতে তিনি শহীদ হন। তাঁর আত্মত্যাগে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরও বেগবান হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন ঘটে।