স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে গণতন্ত্র কখনও একসঙ্গে যায় না: দুদু
‘গণতন্ত্রের পক্ষে এবং বিপক্ষে’ অবস্থান তুলনা করে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে পার্থক্যের কথা জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান এবং কৃষকদলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু।
তিনি বলেছেন, ‘স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে গণতন্ত্র কখনও একসঙ্গে যায় না। আপনি হয় গণতন্ত্রী হবেন না হয় স্বৈরতান্ত্রিক হবেন। বিএনপি গণতন্ত্র মানে আর আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় গেলে সব সময় স্বৈরতান্ত্রিক ভূমিকা পালন করে। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির পার্থক্য, শেখ হাসিনার সঙ্গে বেগম জিয়ার পার্থক্য। বাংলাদেশে শহীদ জিয়া এবং তার পরিবার গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতীক আর স্বৈরতন্ত্রের প্রতীক হচ্ছে আর একটি পরিবার। সব সময় তারা স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে ভূমিকা পালন করে।’
শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডাকসু এবং নব্বইয়ের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য আয়োজিত বিএমএ’র তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা ডা. শামসুল আলম মিলনের ৩০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘যদি বেগম খালেদা জিয়ার কারাগারে মৃত্যু হয় ইতিহাসের এত বড় জঘন্য অপরাধ বাংলাদেশের কেউ কখনও মেনে নেবে না। আমরা এটা চোখে দেখতে পারি না, এটা ভেবে আমরা বসে থাকতে পারি না। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার অর্থই হল গণতন্ত্রকে মুক্ত করা, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার অর্থই হলো একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার অর্থ হল নিজেদের সম্মানিত করা।’
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সংগঠনটির সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘কাজ একটাই, খুব সংক্ষেপ কাজ। ইতিহাসে বর্তমান ছাত্র নেতৃবৃন্দরা তাদের নাম লেখাবে কিনা, এটা তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা যারা ছাত্রনেতা ছিলাম আমরা তখন স্বপ্ন দেখতাম পূর্বে যারা ছাত্রনেতা ছিলেন তাদের মতো করে আমরা ভূমিকা পালন করব কিনা, রাস্তায় নামবো কিনা এসব নিয়ে। পূবসূরিরা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যে ভূমিকা পালন করেছে আমরা তেমন ভূমিকা পালন করব কিনা?’
দুদু বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজন্ম আপসহীন নেত্রী। তিনি যতদিন থাকবেন ইতিহাসে আপসহীন হয়ে বেঁচে থাকবেন, এই ব্যাপারে কোনও দ্বিমত কারোর মধ্যে থাকা উচিত না। তিনি আপস করে বাসায় গিয়েছেন এটা ভাবার কোনও কারণ নাই, বাসাটাও কারাগার। এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে আমরা বদলি হই না- এটাও সেরকমই। বেগম জিয়াও এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে রয়েছেন।’
তিনি বলেনম, ‘বেগম খালেদা জিয়া সরকারের কাছে কোনও আবেদন করেন নাই, বিএনপির পক্ষ থেকে কোনও আপস করে সরকারের কাছে তাঁকে সুবিধা দেয়ার জন্য কোন আবেদন করা হয় নাই। তার পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসার সুবিধার্থে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেজন্য যদি কেউ মনে করে আপস করে দেশনেত্রী বাসায় গিয়েছেন, তবে এটা ভুল হবে। এটা ঠিক হবে না।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘ডা. মিলন গণতন্ত্রের সৈনিক, তিনি গণতন্ত্রের জন্য শহীদ হয়েছিলেন, গণতন্ত্রের জন্য তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি যে রাজনৈতিক প্লাটফর্মে রাজনীতি করেছেন তারা তার সাথে বেঈমানি করেছিল। দেশবাসী মিলনকে শ্রদ্ধা করে। আমরা নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে মিলনকে শ্রদ্ধা দেখিয়েছি। এখনও দেখাই। বর্তমান ছাত্র নেতৃবৃন্দের প্রতিও পূর্ণ আস্থা রয়েছে আমাদের। তাদেরকে আরও উদ্যোমী হতে হবে, আমরা তাদের সঙ্গে থাকবো।’
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, বিশেষ সম্পাদক ড.আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক ছাত্রনেতা জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, খন্দকার লুৎফর রহমান, সাইফুদ্দিন মনি কামরুজ্জামান রতন ও আসাদুজ্জামান আসাদ ও ছাত্রদলের সাবেক নেত্রী আরিফা সুলতানা রুমা প্রমুখ বক্তব্য দেন।