১০ বছরে ছয়বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বিগত ১০ বছরে ৬ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এরমধ্যে ২০১১ সালে দুই বার এবং ২০১২, ২০১৪, ২০১৫ এবং ২০১৭ সালে একবার করে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পায়। বিদ্যুতের দাম কমানোর পরিকল্পনা সরকারের নেই।
সোমবার জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সংসদে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গ্রীষ্মকালীন সময়ে দৈনিক বিদ্যুতের গড় চাহিদা প্রায় সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট হতে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বর্তমানে মোট স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২২ হাজার ৫৬২ মেগাওয়াট। এ উৎপাদন ক্ষমতার বিপরীতে দেশের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।
বিভিন্ন মেয়াদে সরকারের নেওয়া পরিকল্পনার তথ্য তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী জানান, বর্তমানে মোট ১৫ হাজার ৯৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৪৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০১৯ হতে ২০২৭ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে। এছাড়া ৩ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের চুক্তি সাক্ষর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০২১ হতে ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে।
অন্যদিকে ১ হাজার ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০২১ সাল হতে ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে। এছাড়াও ১৯ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনাধীন রয়েছে। এনিয়ে মোট ৮৭টি কেন্দ্র হতে ৩৯ হাজার ৮৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
এছাড়াও আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ভারতের ২টি স্থান থেকে ২ হাজার ৮৩৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ আমদানি কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে, যা ২০২১ সাল হতে ২০২২ সালের মধ্যে চালু হবে। বর্তমানে (২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় ৬ দশমিক ০১ টাকা।
একই প্রশ্নকর্তার আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা এবং ভবিষ্যতে বিদ্যুতের চাহিদার কথা বিবেচনা করে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে ৮৭টি নতুন কেন্দ্র হতে ৩৯ হাজার ৮৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৫৬২ মেগাওয়াট। তবে গ্রিডভিত্তিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৯ হাজার ৪২৮ মেগাওয়াট। এরমধ্যে সরকারিখাতে মোট ৯ হাজার ৭৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫৪টি ও বেসরকারিখাতে ৮ হাজার ৫২৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে এবং এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। বতর্মানে (২০১৮-১৯ অর্থবছর) সরকারি ও বেসরকারি উভয়খাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় ৬ দশমিক শূন্য ১ টাকা এবং গড় বাল্ক বিক্রয় মূল্য ৪ দশমিক ৮০ টাকা।
তিনি বলেন, বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় ছিল ৬ দশমিক ২৫ টাকা এবং গড় বাল্ক বিক্রয় ছিল ৪ দশমিক ৮২ টাকা। বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় কিছুটা হ্রাস পেলেও বিক্রয়মূল্যের চেয়ে উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদ্যুতের উৎপাদন ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যে অসামঞ্জস্যতার কারণে সরকার বিদ্যুৎখাতে প্রায় সাত হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা বাজেটারি সার্পোট দিয়েছে। ফলে বিদ্যুতের মূল্য কমানোর কোনো পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই।