একটি কুচক্রী মহল প্রধানমন্ত্রীকে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে ঠেলে দিয়েছে: সুলতান মনসুর
জেটিভি রিপোর্ট:
একটি কুচক্রী মহল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’-এ ঠেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গণফোরামের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মাদ মনসুর আহমেদ। রবিবার (২৩ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মনসুর বলেন, “যারা পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর গাছের আগারটা খেতেন তলারটাও খেতেন, তারা আজও সংসদে আছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে স্বৈরাচারদের যারা সমর্থন করতেন তারাও আছেন। ‘ওয়ান-ইলেভেন’-এ যারা সুবিধা নিয়েছেন তারাও আজ সংসদে আছেন।”
‘এদের দিয়ে সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হবে না’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘সংসদ নেতাকে আহ্বান জানাবো ২০২০-২১ মুজিববর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিতে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার ভূমিকা রাখবেন। এরই মধ্য দিয়ে আপনাকে সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক সমাজব্যবস্থা এবং দুর্নীতি ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় সঠিক এবং কঠিন পথে এগোতে হবে।’
মনসুর বলেন, “বঙ্গবন্ধু কোনোদিন জনগণ ছাড়া সংগঠন ছাড়া কোনও নীতি নির্ধারণের দিকে এগোতেন না। আজ ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সেই ২৩ জুনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে বলবো, কুচক্রী মহল তাকে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’-এ ঠেলে দিয়েছে, তাদের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠান জন্য আওয়ামী লীগকে সুসংহত করতে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য মানুষদের নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।”
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘আমি যখন একটি রাজনৈতিক কারাগারে ছিলাম, জাতীয় নেতা, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ড. কামাল হোসেনকে সামনে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে একাত্ম হয়ে রাজনীতি করি, যার মধ্য দিয়ে আগামীদিনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে সহযোগিতা করা যায়। আমি কিন্তু আওয়ামী লীগ ছাড়িনি। আওয়ামী লীগ আমাকে বহিষ্কারও করেনি।’
সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে মনসুর বলেন, ‘আমি শপথ না নিলে বিরোধী দলে যে কয়েকজন আছেন, তারাও শপথ নিতেন বলে আমার মনে হয় না। আমি বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যাকে দেখে রাজনীতি শিখেছিলাম, যাকে লক্ষ্য করে রাজনীতি শিখেছিলাম, তার আদর্শের প্রতি আস্থা রেখে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে শপথ নিয়েছিলাম।’
সরকারি দলের প্রতি ইঙ্গিত করে গণফোরামের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমার আজকে হয়তো ওইদিকেই থাকার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২০০৮ সাল থেকে… জানি না, সেই অজানা ইতিহাস এখন বলার সুযোগ নেই; বলতে পারছি না। আজকের সংসদ নেত্রী আমাকে ছাত্রলীগের সভাপতি বানিয়েছিলেন। তিনি আমাকে ডাকসুর ভিপিও বানিয়েছিলেন।’
মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতার পরে যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, ২০০৮ সাল থেকে আমিও সেই প্রক্রিয়ার ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার ওই প্রান্তে (সরকারি দলে) যে জাতীয় নেতৃবৃন্দ আছেন, তারা অনেকেই জানেন, অনেকেই সেই সময়ে ছিলেন। যা-ই হোক, আমি সেদিকে যাবো না।’
তিনি বলেন, ‘বাজেটে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে টাকা দেওয়া হয়, কিন্তু সেগুলো যদি স্বচ্ছভাবে মানুষের কাছে না পৌঁছে তাহলে লাখ-কোটি টাকার বাজেট করে মানুষের কী হবে, সেটা আমরা সবাই বুঝতে পারি। স্বচ্ছভাবে টাকাগুলো যেন ব্যয় হয়, সেটা দেখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, “আমি সব মন্ত্রণালয়ের কথা বলবো না। একটি জায়গা থেকে শুরু করুন। যেকোনও একটি মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে শপথ নিই— ‘যে ঘুষ খাবে আর যে ঘুষ দেবে তার শাস্তি হবে’।”
এই বাজেটের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের অনেক মাত্রা যোগ হয়েছে মন্তব্য করে সুলতান মনসুর বলেন, ‘১ লাখ ২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। ব্যাংকে টাকা পাওয়া যায় না। এই অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের সঠিক হতে হবে।’