দুঃস্থ ও আর্তজনের সেবাযাঁর কাছে ইবাদততুল্য

0

জীবে দয়া করে যেইজন,

সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।

এ হচ্ছে প্রাচীন এক কবির উক্তি। অধুনাকালেও এক কবি এরকম ভাবসমৃদ্ধ পংক্তি রচনা করেছেনঃ

হাশরের দিন খোদা বলিবেন

হে আদম সন্তান

আমি চেয়েছিনু ক্ষুধায় অন্ন

তুমি করো নাই দান..।

নাতিদীর্ঘ এই কবিতাটিতে শেষ বিচারের দিনে খোদা এবং তার বান্দার কথোপকথনের একটি কল্পচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। খোদা যখন বলবেন, আমি ক্ষুধায় অন্ন চেয়েছিলাম; তুমি তো দাওনি। বান্দা বিস্মিত হয়ে জবাব দেবে, কই তোমাকে তো দুনিয়ায় কখনো দেখিনি। তখন খোদা বলবেন, তোমার আশেপাশে যেসব মানুষ ক্ষুধায় কাতরিয়েছে আমি তো তাদের মধ্যেই ছিলাম।

এ কথার সংক্ষিপ্ত ভাবরূপ হচ্ছে-স্রষ্টা তার সৃষ্টির মধ্যেই বিরাজ করেন। তাই সৃষ্টির সেবা করলে স্রষ্টার সংশ্লিষ্ট মেলে; তাকে পাওয়া যায়।

আমরা সংসারী মানুষরা নিজেদের নিয়ে এতোই ব্যতিব্যস্ত যে, এইসব গূঢ় বিষয় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করার অবকাশ কমই পায়। সৃষ্টির সেবা করার মানসিকতাই বা আছে আমাদের কমনের? ভাবনে বিস্মিত হতে হয়, রাজনীতির মতো জটিল বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও এ বিষয়ে তারেক রহমান এক বিরল গুণের অধিকারী। কথাটা আরো পরিষ্কার করে বলা যায়- তাঁর রাজনীতি আর সৃষ্টির সেবা একাকার। সৃষ্টির সেবা করার মধ্যেই তিনি আনন্দ লাভ করেন রাজনীতির সার্থকতাও খুঁজে পান।

আজ থেকে ১৫ বছর আগের কথা। উত্তরাঞ্চলে এখন শৈত্যপ্রবাহ বইছে। কনকনে ঠাণ্ডায় শরীর জমে যাওয়ার মতো অবস্থা। তারেক রহমান দিন-রাত তখন দুঃস্থ শীতার্থ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে চলেছেন। সংবাদকর্মী হিসেবে ওইসময় আমার তার সঙ্গে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। ২০০৫ সালে এমনি একদিন রাতে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে করতে ভোর হয়ে গিয়েছিল। ঠাকুরগাঁয়ের নাম না জানা একটি গ্রামের পথ ধরে যাবার পথে নিজেকে আর সামলাতে পারছিলাম না। ঘোন কুয়াশার মধ্যে গাড়ি চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। কাজেই রাস্তায় এক জায়গায় থামতে হলো। এই সুযোগে গাড়ির সীটে হেলান দিয়ে বসেছি। ঘুমে চোখ দুটো জুড়িয়ে আসছিল। আধো ঘুম আধো জাগরনের মধ্যে শুনতে পেলাম কে যেন কানের কাছে এসে বলছেন, কি ক্লান্ত লাগছে? ঝট করে চোখ খুলে দেখি তারেক রহমান। তিনি গাড়ির জানালার পাশে উঁকি দিয়ে আমার দিকেই স্নেহের কণ্ঠে প্রশ্নটি ছুঁড়ে দিয়েছেন। আমি থতমত খেয়ে গেলাম। লজ্জা পেলাম। তারপর গাড়ি থেকে এক লাফে নিচে দাঁড়িয়ে বললাম, না ভাইয়া, সবঠিক আছে। তারপর গ্রামের পথ ধরে তাঁর সাথে সামনে অগ্রসর হতে লাগলাম। তিনি হা্টঁছেন তাঁর স্বাভাবিক গতিতেই। কিন্তু পদক্ষেপ এতো লম্বা লম্বা যে, বার বার দৌড়ের মতো করে ছুটেও পিছে পড়ে যাচ্ছি। সত্যিই সেদিন খুব ক্লান্তি ভর করছিল আমাকে!

হাঁটতে হাঁটতেই গ্রামের পরিবেশ, মানুষের অবস্থা, একথা যেস কথা নানান কথা হচ্ছিলো। হঠাৎ এক ফাঁকে বলে দেখলাম, ভাইয়া আপনি যে গত কয়েকদিন ধরে রাত জেগে জেগে সমাজ সেবার কাজ করে বেড়াচ্ছেন, আপনার ক্লান্তি আসে না? সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, তোমার ক্লান্তি এলে, আমারও তো আসার কথা। কারণ, আমিও তো মানুষ। তবে এসব কাজ করে আমি খুব আনন্দ পাই। অসহায় দুঃস্থ মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়িয়ে যখন দেখি ওদের মুখে হাসি ফুটেছে, তখন সব ক্লান্তির কথা ভুলে যাই। আসলে, এসব কাজকে আমি ইবাদতের সমান মনে করি। আল্লাহ্র ইবাদত ঠিকভাবে করলে কোনো মুসলমানেরই সহজে ক্লান্তি আসার কথা নয়। আর কখনো ক্লান্তি এলেও তা কেউ অন্যের কাছে মুখ ফুটে বলার প্রয়োজন মনে করে না।

তাঁর এ জবাবে আমার ক্লান্তি কোথায় হারিয়ে গেল! মুখে আমার আর কথা সরে না। বোবার মতো সুষ্ঠু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম তাঁর মুখপানে। তিনি মিষ্টি করে একটু হাসলেন; তারপর দের ছুটলেন লোকালয়ে। মিষ্টি করে একটু হাসলেন; তারপর দের ছুটলেন লোকালয়ে। আমিন সব ক্লান্তি ঝেড়ে ছুটলাম তার পিছু পিছু।

সেদিন থেকেই তাঁকে আমি বিশেষ শ্রদ্ধার চোখে দেখতে থাকি। আমার বিশ্বাস, তাঁর মধ্যে যে মানবিক গুণ বিকশিত হয়েছে, তাতে তিনি এক অনন্য মানুষ মানবসেবার মতো মহান কাজ তাঁকে যে আত্মিক উচ্চতায় নিয়ে গেয়ে সেখান থেকে কেউ নামাতে পারবে না। প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে যতোই চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্রের জাল বুনুক, তার জনপ্রিয়তার এতটুকু ক্ষতি ক্রয় পারবে না। তাঁর কাজের ধারা যারা কাছে থেকে দেখেছেন তারাই বিস্মিত ও আবেগ-আপ্লুত হয়েছেন। সে সময়ের অনেক সংবাদকর্মী তাঁর এসব কর্মকাণ্ডের সাক্ষী হয়ে আছেন। ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকের স্বনামধন্য সংবাদিক জনাব চৌধুরী এসব কর্মকাণ্ডের কিছু বর্ণনা দিয়েছেন ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সংখ্যায়। তিনি লিখেছেন; বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব তারেক রহমানের জীবনের একটি বড় স্বপ্ন হচ্ছে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তাই যখনই সুযোগ পেয়েছেন তিনি ছুটে গিয়েছেন দুঃস্থ, অভাবী ও দুর্গতদের পাশে। সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রচণ্ড গরমে অন্যরা যখন এসি রুমে বসে আরাম করবেন এখন তারেক রহমানকে দেখা গেছে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ গ্রাম থেকে ও গ্রাম ঘুরে অভাবী মানুষের মাঝে হাঁস-মুরগী-ছাগল বিতরণ রাতে। অথবা অর্থাভাবে যে মেধাবী ছাত্রটির মাঝপথে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে তার হাতে পড়ালেখার খরচ তুলে দিতে। আবার প্রচণ্ড শীতে যখন লেপ, কাঁথা আর কম্বল গায়ে জড়িয়ে অন্যরা ঘুমাতেন, হাড় কাঁপানো সে শীতে (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রায়) তারেক রহমান শীতবস্ত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন শীতার্থদের মাঝে। শীতে নিজে থর থর করে কাঁপবেতন, তারপরও থামতেন না। ছুটছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে শীতার্থ মানুষের সঙ্গে কাট ভাগাভাগি করে নিতে। এভাবে তিনি হয়ে উঠেছেন একজন ‘কারণ রাজনীতিক। গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে এটা ছিল স্বপ্নের হতো। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে এ শীতে আমাদের কাছে ছুটে এসেছেন। এটাও কি সম্ভব; পরক্ষণেই তারা নিজেদের সুধরিয়ে নিতেন-হ্যাঁ, তারেকই তো আমাদের দুঃসময়ে আসবেনÑ সে যে খালেদা জিয়ার ছেলে। আমাদের গর্বের ধন।

এভাবে মানুষের সুখÑদুঃসময়ে আসবেনÑ সে যে খালেদা জিয়ার ছেলে। আমাদের গর্বের ধন। এভাবে মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে তিনি একজন আদর্শ সমাজসেবক, মানবতাবাদী ও দেশপ্রেমিক নেতা হিসেবে অর্জন করে লেন দেশবাসীর আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসায়। তাই তিনি যেখানে যান সেখানেই জনতার ঢল নামে। বয়োবৃদ্ধরা তারেক রহমানের মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করেন।

তারেক রহমান জিয়াউর রহমান ফাউণ্ডেশনের পক্ষ থেকে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষকে হাঁস-মুরগী, ছাগল ও কৃষিপণ্য দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার চান দেখিয়ে যাচ্ছেন। বন্ধু-বান্ধব, দলের নেতা-কর্মী ও সমাজের বিত্তবানদের তিনি দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নানাভাবে উৎসাহিত করছেন। ২০০৩ সালের ৬ মে তারেক রহমান ছুটে যান দারিদ্রপীড়িত ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। সেখানে গিয়ে তিনি ২৬৮টি দুঃস্থ পরিবারের মাঝে হাঁস-মুরগী ও ছাগল বিতরণ করেন। এসব অসহায় পরিবারের সদস্যরা এক সময় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন যাপন করতো। এখন আর তাদের সেই কষ্ট নেই। ওই দিন কালীগঞ্জ গাজীর বাজারে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় তারেক রহমান সমাজের বিত্তশালীদের নারীর, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান। সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়নে কোনো মতপার্থক্য থাকা উচিত নয়। ৩২ বছর ধরে বিতর্ক করে অনেক সময় নষ্ট করেছি। এখন আর সময় নষ্ট করা ঠিক হতে না। তাই যে যে অবস্থানে আছেন সেখান থেকে দেশসেবায় ব্রতী হোন।

২০০৩ সালের পয়লা বৈশাখে তারেক রহমান নববর্ষ উদযাপন করেন কক্সবাজারের গরিব, অসহায় মানুষদের সঙ্গে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তিনি বক্সবাজারের গ্রামে গ্রামে ঘুরে দরিদ্র মানুষদের মাঝে হাঁস-মুরগী ছাগল বিতরণ করেন। তাঁর এই ব্যতিক্রমী কর্মসূচী সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ৫ এপ্রিল দৈনিক মানবজমিন নববর্ষে কক্সবাজারে অন্যরকম তারেক রহমান শীর্ষক রিপোর্টে লিখেছিল, “তারেক রহমান গতকাল কক্সবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়েছেন মাইলের পর মাইল। গ্রামের লোকের তাকে কাছে পেয়ে আনন্দে আপ্লুত হয়ে ওঠে। অসহায় মানুষের মাঝে তিনি হাঁস-মুরগী ও ছাগল বিতরণ করেন। জিয়াউর রহমান ফাউণ্ডেশনের পক্ষ থেকে দেয়া হয় চিকিৎসা সেবা।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তারেক রহমান মৌলভীবাজারের বন্যার্তদের পাশে ছুটে যান। সেখানেও তিনি কয়েকশ পরিবারের মাঝে হাঁস-মুরগি, ছাগল, সবজি ও ধান বীজ বিতরণ করেন। শৈলকূপা, চাঁপাইবাবগঞ্জ, দিনাজপুরের প্রত্যন্ত এলাকাসহ দেশের আরো অনেক গরীব-অধ্যুষিত অঞ্চলে তিনি অবিরামভাবে সেবা দান করে যান। বগুড়ায় তিনি স্থাপন করেন এ্যাজমা সেন্টার। প্রতিবছর সেখানে শত-সহস্র মানুষ সুলভে চিকিৎসা লাভ করে থাকে। ঠোঁট কাটা সমস্যাসহ অর্ধপঙ্গু মানুষদের সুলভে চিকিৎসা দেবার জন্য তিনি বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ এনে গাইবান্ধায় অস্থায়ী ক্যাম্প করেন। এতেও শত-সহস্র মানুষ উপকৃত হয়।

বস্তুত, ২০০১ থেকে ২০০৭ অবিদ ৬ বছরে তারেক রহমান অসংখ্য সেবামূলক কাজ করেছেন প্রবাসে থেকেও তিনি থেমে নেই। গেল বছর ডিসেম্বর মাসের কোনো একদিন বগুড়ার গাবতলী বাগবাড়ীতে অটিস্টিকদের মাঝে সহস্রাধিক হুইল চেয়ার প্রদান করেন। অনলাইন পেপার পত্রিকাতে খোঁজ নেন দেশের অসহায় মানুষদের। খোঁজ রাখেন যারা, স্বাস্থ্য সেবা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। (খোঁজ রাখেন যত সামান্য আর্থিক …পাঠান এবং যদি তাও না পারেন তাহলে তার আস্থাভাজন বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে যা বলে সান্ত্বনা দেন। পরচর্চ্চা, গীবত, বাকসর্বস্ব রাজনীতির গণ্ডি অতিক্রম করে তিনি রাজনীতিকে দিতে চেয়েছেন এক মাত্রা। যন মূল কথা হবেÑ সত্যিকার জনসেবা, আর্ত-মানুষের সেবা আর দেশের উন্নয়ন। কিন্তু কায়েমী স্বার্থবাদীদের চোখে তা ভালো লাগবে কেন? তাদের দুর্বার আনলে পুড়ে পুড়েই তারেক রহমানকে আজ প্রবাসী জীবন কাটাতে হচ্ছে, অর্ধপঙ্গু দশা থেকে সেরে উঠতে ধৈর্য্যরে কঠিন পরীক্ষা আর মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এরপর বিরুদ্ধবাদীদের চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে নেই। তবে আর্ত-মানুষের সেবা যার কাছে ইবাদতের তুল্য, আল্লাহর অপার রহমতের ধারা তার ওপর নিরন্তর, বর্ষিত হবে; তিনি পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে আবার এদেশের হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াবেনÑ এটাই ঐকান্তিক কামনা ও প্রার্থনা।

আতিকুর রহমান রুমন

লেখক : সাংবাদিক-কলাম লেখক

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com