জামিন পাওয়া নেতাকর্মীদেরও সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ: মির্জা ফখরুল
উচ্চ আদালতে জামিনে পাওয়ার পরও সাদা পোশাকে পুলিশ নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে এক আলোচনা সভায়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘একটু আগে আমি খবর পেলাম, আমাদের উত্তরার তুরাগ থানার সভাপতি-সম্পাদক তাদেরকে গতকাল হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হওয়ার পথে সাদা পোশাকে পুলিশেরা তুলে নিয়ে গেছে, এখনও ওদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এটা অহরহ ঘটছে এখন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি খুব স্পষ্ট করে সরকারকে বলতে চাই যে, অবিলম্বে এদেরকে ফিরিয়ে দেন তাদের পরিবারের কাছে, অবিলম্বে এদেরকে মুক্তি দিন। অন্যথায় জনগণের যে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হবে সেই তরঙ্গ কিন্তু আপনাদেরকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে বন্দি, আমাদের তরুন সম্ভবনাময় নেতা তিনি নির্যাতিত হয়ে মিথ্যা মামলায় বিদেশে অবস্থান করছেন। আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ৩৫ লক্ষ্যের ওপরে, গুম হয়ে গেছেন আমাদের প্রায় ৫‘শর উপরে নেতাকর্মী এবং নিহত হয়েছেন সহাস্রাধিক এবং গত কয়েকদিন আবারো গুম হয়েছেন ৩/৪ জন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গতকাল দুপুর ১টার দিকে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হওয়ার পর সাদা পোষাকে পুলিশ তুরাগ থানা যুব দলের সাধারণ সম্পাদক মামুন পারভেজ তন্ময় ও সহসভাপতি তৌহিদুলি ইসলাম হাসিবকে তুলে নিয়ে যায়। উত্তরার পশ্চিম থানা যুব দলের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস মজুমদার মাসুমকে গত রাত সাড়ে ৭টায় উত্তরা ৫ নং সেক্টার থেকে ধরে নিয়ে যায় তার সাদা পোষাকে সদস্যরা, পল্টন থানা যুব দলের যুগ্ম সম্পাদক লিয়ন হক বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। এদের কাউকে এখনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘এখন দেশে প্রকৃতপক্ষে কোনও সরকার আছে বলে মনে হয় না। এই সময়ে সুশাসন দূরের কথা এখানে শাসন বলতে কিছু নেই।’
‘প্রতি পত্র-পত্রিকার তাদের(ক্ষমতাসীন) দুর্নীতির খবর আসছে। ভয়াবহ দুর্নীতি, হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচার হয়ে যাচ্ছে। সেদিকে কোনও খেয়াল নেই, দুই-একটা চুনোপুটিদের ধরে জনগনকে বিভ্রান্ত করছে।’
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
তারেক রহমানের জন্মদিনে দলের পক্ষ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের নেতার জন্মদিনে কোনও উৎসব পালন করতে পারছি না। তার এই জন্মদিনে আমরা কেক কাটবো না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা তার জন্য দোয়া করব। আল্লাহ যেন তাকে দীর্ঘজীবন দান করুন এবং তাকে সেই শক্তি দিন যে শক্তি দিয়ে সে তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করে বাংলাদে্শের জনগনকে মুক্ত করতে। আমাদের মনে রাখতে হবে তার পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মুক্তি জন্য স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে এবং এই যুদ্ধ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের নেতা(তারেক রহমান) ব্যক্তিগত জীবনে অনেক দুঃখকষ্টে আছেন। তার পিতাকে হারিয়েছেন তিনি খুব ছোট বয়সে, মা অন্তরীন। তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো চলে গেছেন এই সরকারের নির্যাতনের কারণে। নিজে নির্বসিত অবস্থায় বাস করছেন। সুতরাং তাকে (তারেক রহমান) সাহস দিতে হবে আমাদেরই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই নেতার দিকে শুধু বিএনপি নই, সারা দেশের মানুষ তাকিয়ে রয়েছে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুক্ত হবে আরেকবার, তার নেতৃত্বে বাংলাদে্শের মানুষ ফিরে পাবে তাদের অধিকার সেই আশা-ভরসা নিয়ে এদেশের মানুষ তাঁকিয়ে আছে। আমরা সবাই আজকে শপথ নেবো তার জন্মদিনে তার হাতকে শক্তিশালী করে বাংলাদেশের জনগনকে একত্রিত করে, ঐক্যবদ্ধ করে আমরা এই ভয়াবহ যে দানব যে আমাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে ধবংস করে দিচ্ছে তাকে আমরা পরাজিত করবো।’
তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তারেক রহমানের নানা কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি দুঃখিত যে, আপনাদের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারিনি। কারণ এখন আমার বাসাতে করোনা ধরা পড়েছে। যার ফলে ১৪ দিনের যে আইসোলেশন সেই ই্সোলেশনে আমাকে থাকতে হচ্ছে।’
চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘মহাসচিবের শ্যালক কাজী একরামুল রশীদ উত্তরার বাসায় করোনায় পজেটিভ ধরা পড়ে। বর্তমানে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘করোনা এখন সব জায়গাতে ছড়িয়ে পড়ে্ছে। আমাদের সিনিয়র লিডার মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আমাদের মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসসহ অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক নেতাকে আমরা এই করোনায় হারিয়েছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসানসহ এরকম অনেক নেতাকে ইতিমধ্যে আমরা করোনার কারণে হারিয়ে ফেলেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করবো সবাইকে, এখন একটা কঠিন সময়, একটা দুঃসময় । এই দুঃসময় আমাদের কিন্তু জাগ্রত হতে হবে, জেগে উঠতে হবে এবং জেগে উঠতে হবে মনের দিক থেকে…।’
ব্যারিস্টার মীর হেলালের সভাপতিত্বে ও এম সাব্বির আহমেদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির বিশেষ সম্পাদক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, এনামুল হক চৌধুরী, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের গোলাম সারোয়ার, ছাত্রদলের নাজমুল হাসান, মিজানুর রহমান শরীফ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।