দেশকে বাঁচাতে হলে সকলকে আজ ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে: বিএনপি
অসুস্থ বাংলাদেশকে সবার আগে সুস্থ করে তুলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও যুবদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
গতকাল বুধবার (১৮ নভেম্বর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে খালেদা জিয়া, মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাসের আশু রোগমুক্তি কামনায় অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন
আলাল বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে সব দিক থেকে অসুস্থ। এই দেশ আজ দুর্নীতির দিক থেকে অসুস্থ, গণতন্ত্রের দিক থেকে অসুস্থ, স্বাধীনতার যে মূলমন্ত্র ছিলো, যে ঘোষণা ছিলো সাম্য ও মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার, সেই জায়গা থেকেও বাংলাদেশ আজ গভীরভাবে অসুস্থ। বাংলাদেশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। অসুস্থ বাংলাদেশকে সবার আগে সুস্থ করে তুলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে, ২০০৯ সালের কাউন্সিলে আমাদের প্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্লোগান নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন- “দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও”। তিনি এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, দেশ অসুস্থ হবে। এদেশের মানুষ অবহেলা-অযত্নে মারা যাবে, নিপীড়ন-নির্যাতনে মারা যাবে, দুর্ঘটনা, ক্রসফায়ারে মারা যাবে, বোনেরা ইজ্জত সম্ভ্রম হারিয়ে মারা যাবে। যে কারণে তিনি (খালেদা জিয়া) এক কথায় বলে দিয়েছিলেন- “দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও”। দেশকে বাঁচাতে হলে সকলকে আজ ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে।’
যুবদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে মানবিক কারণে নাকি মুক্তি দেয়া হয়েছে। এটা আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর চ্যালা-চামুন্ডারাও বলেন। বেগম খালেদা জিয়াকে মানবিক কারণে মুক্তি দেয়া হয় নাই। তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়েছে করোনার কারণে। ডাক্তার, নার্সরা সবাই ভয়ে ছিল কার থেকে কার ছড়ায়। সেই ভয়েই তাকে (খালেদা জিয়া) মুক্তি দেয়া হয়েছে। এটা মুক্তি দেয়া না, একটা স্থানান্তর। এটা সেই পাখির মত যে পাখির পায়ে শেকল বেঁধে খাঁচার দরজা খুলে দেয়া।’
তিনি বলেন, ‘সমুদ্রে কোনও ঢেউ নেই। কোনও উত্তাল অবস্থা নেই। হঠাৎ করেই কয়েকটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হল। এ মামলায় করোনা আক্রান্তদেরও আসামি করা হয়েছে। বরিশালের আমাদের দুই নেতা সে সময় আদালতে ছিলেন। তাদেরকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। হযরত আলীকে গ্রেফতার করেছে এবং রিমান্ডে নিয়েছে। অথচ পুলিশ ভিডিও ফুটেজে দেখেছে হযরত আলী সে তার দোকানে বসে ছিলেন। দুই বছর ধরে প্যারালাইস হয়েছে এমন লোকদেরও আসামি করা হয়েছে। আর শেখ হাসিনা সংসদে বসে একটা রেকর্ডই বাজিয়ে শোনান। ভালো, এখন আনন্দ করার সময় আনন্দ করেন।’
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন বাসে আগুন দিয়েছে সরকারের এজেন্টরা। তারই প্রেক্ষিতে তারা (আওয়ামী লীগ) বলেছে, সরকারতো শান্তিপূর্ণভাবে দেশ চালাচ্ছে, বাসে আগুন দেবে কেন? তাহলে আমার প্রশ্ন হল, ২০০৪ সালে বিএনপিতো শান্তিপূর্ণভাবেই দেশ চালাচ্ছিল, তাহলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হলো কেন?’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির ২০ দলীয় জোটের কোনও কোনও মন্ত্রী বলেছিল বাংলা ভাই বলতে কেউ নাই। এটা মিডিয়ার সৃষ্টি। পরবর্তীতে সেই বাংলা ভাইকে গ্রেফতার করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজমের ভগ্নিপতি শায়খ আব্দুর রহমানকে গ্রেফতার করতে হয়েছে। তাদের বিচার করেছে বিএনপি। বিএনপির আমলে তাদের সাজাও হয়েছে।’
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনাদের বরিশাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাইদুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিল বাস পোড়ানো সম্পর্কে। সে সময়ে ঢাকায় যে বাসগুলো পোড়ানো হয়েছিল তা আওয়ামী লীগের এমপি পঙ্কজ দেবনাথ তার বিহঙ্গ পরিবহনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করেছে। এখনও এই ভিডিও ইউটিউবে খুঁজে পাবেন। তারপরও আমরা দেখেছি, ঢাকা মেডিকেলে বার্ন ইউনিটে ভর্তি মহিলা ও শিশুর ছবি তুলে সরকারের কিছু এজেন্ট মিডিয়ায় প্রকাশ করেছে ‘বাসে আগুন লেগে আহত শিশু-মহিলা’। অথচ তারা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত হয়েছিল। সুতরাং এই আওয়ামী লীগ করতে পারে না এমন কোনও কিছু নাই।’
মহিলা দলের সহ-সভাপতি নুরজাহান মাহবুবের সভাপতিত্বে ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, নেওয়াজ হালিমা আরলি, নিলোফার চৌধুরী মনিসহ মহিলা দল নেতারা বক্তব্য রাখেন।