রাজপথে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে: মেজর হাফিজ
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন, ভোটে নয়, রাজপথে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
সোমবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জ্বল হোসেন মানিক মিয়া হলে জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে ‘ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য এবং গৃহবন্দি থেকে নিঃশর্ত মুক্তির করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
মেজর হাফিজ বলেন, `জনগণের যেহেতু ভোটের মাধ্যমে আর পরিবর্তনের সুযোগ নেই। যত দিন এই সরকার আছে ততদিন ভোট কেন্দ্রে সাধারণ নাগরিক যেতে পারবে না। সুতরাং একমাত্র উপায় গণঅভ্যুত্থান।’
‘জনগন যদি রাস্তায় নেমে আসে। ওই যে আমি বলেছি, দুই লাখ লোক দুইদিন রাস্তায় থাকেন পালিয়ে যাবে তারা(আওয়ামী লীগ সরকার)। সেই সাহস সঞ্চয় করে আসুন আমরা আগামী দিনে এই সরকারকে বিতাড়িত করতে রাজপথে আবার নেমে আসি।’
চলমান ব্যবস্থায় দলের নির্বাচনে অংশ গ্রহণে নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘কেন আমরা এই ধরনের নির্বাচনে যাই? যখন নির্বাচনে যাওয়া উচিত না তখন যাই, যখন যাওয়া উচিত তখন যাই না। যে দিন সংসদে যাওয়া উচিত না সেই সংসদে গিয়ে আমরা বসে থাকি। যার জন্য আজকে বিএনপিকে চার‘শ ভোট দেয়। তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে ওদের প্রার্থী পেয়েছে এক লাখ ৮৮ হাজার ভোট আর আমাদের প্রার্থী পেয়েছে ৪‘শ ভোট।’
‘আরে বিএনপির এজেন্টই তো হাজারের বেশি। আমাদের কোনো এজেন্ট ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন না, কোনো ভোটার ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে না এমনকি আওয়ামী লীগের সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে না-এই হলো বাংলাদেশের গণতন্ত্র।’
সাবেক এই সেনাকর্মকর্তা বলেন, ‘যদি আমরা জিয়াউর রহমানের আদর্শের অনুসারী হয়ে থাকি তাহলে আমাদের দলেও তার প্রতিফলন থাকতে হবে। জিয়াউর রহমানের মতো সৎ হতে হবে, তার মতো সাহসী হতে হবে এবং দেশের স্বার্থে কখনো কোনো ধরনের আপোষ করা যায় না।’
‘বেগম খালেদা জিয়া আপোষ করেননি। কিন্তু আমরা অনেকে আপোষ করে বসে আছি। আজকে দূঃখের বিষয় খালেদা জিয়ার মতো নেত্রী বছরের পর বছর জেলে কাটালেন আমরা কী করতে পেরেছি?।’
`উগ্রবাদীদের উত্থানে উদ্বেগ’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘সবচাইতে বড় অশনিসংকেত আমি দেখতে পারছি- বিএনপি তো এখন ডাক দিলে রাস্তায় নামাতে পারে না। আমাদের এতো শক্তিশালী ছাত্রদল ছিলো তাদেরকে রাস্তায় নামাতে পারে না। কেন তাদের নামাতে পারেন না আমি জানি না। কারণ আমি এই দলের এত বিরাট নেতাও না। কিন্তু অন্যদিকে যে, তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। ইসলামী দলগুলোর মিছিল দেখেন, তাদের সংখ্যা দেখেন রাজপথে।’
তিনি বলেন, ‘যদি আমরা সক্রিয় হই। এই সরকার তো যাবে, আওয়ামী জাহিলাতের অবসান হবেই । এই ধরনের একটা নষ্ট পঁচা সরকারকে বাংলাদেশের মানুষ বেশি দিন সহ্য করবে না। কিন্তু তার পরিবর্তন কীভাবে আসবে? কারা এদেরকে সরাবে-এটাই দেখার বিষয়। আমরা যেটা দেখতে পারবো, এটা বেশি দূরে নয়।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দুঃখ লাগে এই সামরিক বাহিনী আমরা সৃষ্টি করেছি। কত সন্মানের পাত্র ছিলো তারা। নির্বাচনের সময়ে সেনাবাহিনী যেখানে যেতো দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যেতো। আর এ্খন। গত নির্বাচনের আগের রাতে সব ভোট দিয়ে ফেললো আর সেনা প্রধান বললেন, এতো ভালো ভোট আমি জীবনে দেখিনি। সুতরাং আমাদের যে শেষ ভরসার স্থল সেটিও চিন্তাভাবনার বিষয় তাদের অবস্থান কী? অত্যন্ত দুঃখ লাগে সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাক, এই সেনাবাহিনীর জন্য কষ্ট লাগে- আমরা এই সেনা বাহিনী সৃষ্টি করেছি একাত্তর সালে। ২৫ জন সেনা কর্মকর্তারা পাকিস্তান আর্মিতে আমরা যারা ছিলাম আমরা বিদ্রোহ করে মুক্তিবাহিনী এবং বাংলাদেশ সেনা বাহিনী গড়ে তুলেছি। গত ৫/৭ বছরে এরা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখনো সাধারণ সৈনিকেরা ভালো আছে, জুনিয়র অফিসার-মিড লেভেল অফিসাররা ভালো আছে। শীর্ষ পর্যায় কয়েকজন নষ্ট হয়ে গিয়ে্ছে। আমরা সেনাবাহিনীকে রাজনীতি মুক্ত চাই। সেনাবাহিনী যেন বাংলাদেশের কোনো দলের সেনাবাহিনী নয়, জনগনের সেনাবাহিনী হয়-এটাই আমরা আশা করি।’
‘অটো প্রমোশন প্রসঙ্গে’
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সারা বিশ্বের মানুষ করোনা আক্রান্ত, যুক্তরাষ্ট্রে ১১ লাখ লোক মারা গেছে, এক কোটির উপরে লোক আক্রান্ত, যুক্তরাজ্যের কত লোক আক্রান্ত। কোনো দেশে পরীক্ষা বন্ধ হয় নাই, সব দেশে পরীক্ষা হয়েছে। এই এক অভাগা বাংলাদেশ। বিনা পরীক্ষায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি দিয়ে দিলো। মানে এমনই মেধা শূণ্যতা এসেছে আমাদেরকে গ্রাস করেছে, এমনই অপদার্থের দেশ বাংলাদেশ-একটা লোক মাথা খাটিয়ে বললো না, একটা লোককে জিজ্ঞাসাও হয়ত করে নাই যে, ভাই কিভাবে আমরা পরীক্ষাটা নিতে পারি?’
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে পরীক্ষা চলছে, যাদের লক্ষ লক্ষ লোক মারা যাচ্ছে তারা পরীক্ষা নিতে পারছে। আর আমাদের সরকারি হিসেবে ৬ হাজার লোক মারা গেছে- আমরা কেনো পরীক্ষা নিতে পারছি না। আমাদের জাতিকে মূর্থের জাতিতে পরিণত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কি শিক্ষা ব্যবস্থা এদে্শে এখন আছে। পরিকল্পিভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার। এক অদ্ভুত উটের পীঠে চলছে বাংলাদেশ। মেধাশূণ্য করতে তারা(সরকার) এই অটোপ্রমোশন দিলেন।’
‘মেধাবী লোক সরকারের শত্রু’
হাফিজ বলেন, ‘মেধাবী লোক হচ্ছে এদের শত্রু। ড. মুহাম্মদ ইউনুস(নোবেল বিজয়ী)কে সারা বিশ্ব কত সন্মান করে। পৃথিবীর যেখানে যাবেন রাষ্ট্রপতি বাড়ির বাইরে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে তাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে যাবেন। আমাদের দেশে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়, তাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়, তাকে সুদখোর বলা হয়।’
সংগঠনের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন খোকনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন,প্রফেসর শাহ আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা একেএম আবুল কালাম আজাদ ও কৃষকদল নেতা কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন বলেন, আওয়ামীলীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। অনেকে মনে করেন বিএনপি নিস্তেজ হয়ে পড়েছে, এটা সঠিক নয়। বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল।দিন দিন আওয়ামী লীগের জনসমর্থন কমছে আর বিএনপির বাড়ছে। দেশের নব্বই ভাগ মানুষ বিএনপির সাথে আছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একবার ক্ষমতাচ্যূত হলে আর জীবনে আর ক্ষমতার মুখ দেখবে না।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন,পুরনো ব্যবস্থাকে দুমড়ে মুছড়ে নতুন রাজনৈতিক সমাজ গড়ার উদ্যোগই হল বিপ্লব।সাত নভেম্বর তেমনি একটি বিপ্লব। ৭নভেম্বরের পরের বাংলাদেশ তার আগের বাংলাদেশ থেকে স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে। এ স্বাতন্ত্র্য সুন্দর ও মজবুত হয় অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে। সুন্দর হয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও। ৭ নভেম্বরের আগের বাংলাদেশে বিদ্যমান অগণতান্ত্রিক একদলীয় বাকশালের ঘন কুয়াশা ৭ নভেম্বরের পরের বাংলাদেশে কেটে গেছে। বহদলীয় গণতন্ত্রের অনুসারী দলগুলো ক্রমেই বিকশিত হতে শুরু করেছে। সংবাদপত্রের মুখে নতুনভাবে কথা ফুটেছে। আগের বন্ধ চোখে দৃষ্টি ফিরেছে। কান খাড়া হয়েছে। নির্বাহী কর্তৃত্বের নিয়ন্ত্রণ থেকে সরে ক্রমেই বিচার বিভাগ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে।
তিনি বলেন, ৭ নভেম্বরের পর থেকেই রুশ-ভারতের অন্ধকার কক্ষপথ থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি মুক্তিলাভ করে বিশ্বময় বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ লাভ করে।৭ নভেম্বরের আগে যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ছিল নিঃসঙ্গ, বন্ধুবিহীন, একাকী সেই বাংলাদেশ বিশ্বময় বহুসংখ্যক সুহৃদ ও শুভানুধ্যায়ীর গতিশীল হতে থাকে। ভারতীয় আগ্রাসন থেকে মুক্তি পায়।
সমাজতন্ত্রের নামে দেশে যে অপচয়প্রবণ দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক কাঠামো বিদ্যমান ছিল তার অবসান ঘটতে থাকে। ব্যক্তি উদ্যোগ এবং সৃজনশীল প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হয়। হেনরি কিসিঞ্জারের সেই নির্মম অভিধা- ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র শতছিদ্র একে একে বন্দ হতে থাকে।৭ নভেম্বরের বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্যের আর একটি দিক হলো সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরে আসে।