১৪-২৪ বছর বয়সী নারীরা বেশি সাইবার হয়রানির শিকার: আইজিপি
১৪ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীরাই সাইবার ওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
সাইবার ওয়ার্ল্ডের ঝুঁকি মোকাবিলায় আইজিপি বলেন, ‘দেশের নারীদের সাইবার ওয়ার্ল্ডে নিরাপদ রাখতে বাংলাদেশ পুলিশ চালু করেছে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ (পিসিএসডব্লিউ)।
তিনি বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম একটা বাউন্ডারিলেস ক্রাইম। সাইবার ওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হন নারীরা এবং তাদের বেশিরভাগ বয়স ১৪ থেকে ২৪ বছর।’
সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ উদ্বোধনকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে টেকনোলজির দিক থেকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের ১১ কোটি মানুষ সেলফোন ব্যবহার করে। ৭ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। জাতিসংঘের একটি জরিপে দেখা যায়, বিশ্বে তিন চতুর্থাংশ নারীরাই হয়রানির শিকার হন। সাইবার অপরাধে ৬৮ শতাংশই হচ্ছে নারী। প্রযুক্তির সহজলভ্যতা যেমন আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তেমনই বিভিন্ন সমস্যারও সৃষ্টি করছে। সেসব সমস্যা মোকাবিলায় পুলিশের এই সেবা।’
আইজিপি বলেন, ‘সাইবার ওয়ার্ল্ডে অপরাধীরা সবচেয়ে বড় যে সুবিধা পায় তা হলো নিজের নাম-পরিচয় ও দেশ গোপন রেখে নারীদের হয়রানি করতে পারা। এটিই নারীর প্রতি ডিজিটাল হয়রানির নতুন রুপ। এটি শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বব্যপী একই চিত্র।’
তিনি জানান, এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৭৩ শতাংশ নারী সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন। ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, গুগল, ফেসবুক, ফেক আইডি খুলে, অনলাইন পোর্টাল খুলে, ব্লগে মিথ্যা প্রচারণা ও মানুষের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়।
দেশে সাইবার অপরাধ দমনের জন্য অনেক আইন রয়েছে। এরমধ্যে ডিজিটাল সিকিউরিটি আ্যাক্ট, পর্নোগ্রাফি আ্যাক্ট, টেলিকমিউনিকেশন কন্ট্রোল আ্যাক্ট, আইসিটি আ্যাক্ট। সাইবার ওয়ার্ল্ডকে নিরাপদ করার জন্য বাংলাদেশ সরকার এই সমস্ত আইনগুলো প্রচলন করেছে। এই আইনগুলোতে ৬ হাজার ৯৯টি মামলা হয়েছে যার অধিকাংশ ভিক্টিমই হচ্ছে নারী।
আইজিপি আরও বলেন, ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের সকল অফিসাররাই হবেন নারী। যারা কল রিসিভ করবেন, পরামর্শ দিবেন, সহয়তা করবেন, তদন্ত করবেন তারা সবাই নারী কর্মকর্তা।’
৯৯৯ থেকেও পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সেবা পাওয়া যাবে জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘দেশের সমস্ত স্থান থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিনামূল্যে এই সেবা নারীরা গ্রহণ করতে পারবেন।’
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সাইবার ওয়ার্ল্ডে আমরা দীপ্তভাবে পদচারণা করবো, কিন্তু সাইবার ওয়ার্ল্ডে যে ঝুঁকি আছে সে বিষয়ে প্রত্যেককে সচেতন হওয়া উচিত। অনেক সময় নিজের অজান্তেই সাইবার ওয়ার্ল্ডে হয়রানির শিকার হন অনেকে। সেটাকে আমরা বলি অনিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার। আমরা চাই সবাই নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার করুক। সেফটি ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে। এরপরেও যদি কোনও ধরনের ঝামেলা হয়ে যায় তাহলে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন নারীদের সহায়তা করবে।’
তিনি বলেন, ‘সাদাত হোসেন নামের একটি ছেলে যার বাড়ি নড়াইলে। এই ছেলেটি একটি গ্রুপ তৈরি করেছিল ‘সাইবার টিমস’ নামে। যারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয় এই গ্রুপের মাধ্যমে তাদেরকে সহায়তা করার উদ্যোগ নেয়। আমাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগে সে সাইবার বুলিংয়ের ৮টি সমস্যার সমাধান করে। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরে পুলিশ তাকে সহায়তা করে সাইবার বুলিংয়ে সেই সমস্ত অপরাধীকে গ্রেফতার করে। ছেলেটি ইন্টারন্যাশনালি কাজ করছে। আমরা চাই সাদাত হোসেনের মতো সারা দেশে এমন গ্রুপ তৈরি হোক। যারা সাইবার বুলিং নিয়ে কাজ করবে। তাদেরকে সমস্ত সহায়তা দেবে পুলিশ। সাইবার ওয়ার্ল্ডে নারী থেকে শুরু করে শিশুসহ সমস্ত মানুষের জন্য নিরাপদ করবো। এই সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।’
যেভাবে কাজ করবে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’: ‘Police Cyber Support for Women’ নামক ফেসবুক পেজে, ইমেইল: cybersupport.women@police.gov.bd ও হটলাইন মোবাইল নম্বর: ০১৩২০০০০৮৮৮ ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করতে পারবেন নারীরা।
উল্লেক্ষিত যোগাযোগমাধ্যমে শুধু নার্থীরা যারা সাইবার বুলিং, আইডি হ্যাক, স্পর্শকাতর তথ্য-ছবি- ভিডিও প্রকাশ, সাইবার স্পেসে যৌন হয়রানি ইত্যাদি অপরাধের শিকার হচ্ছেন তারা এখানে অভিযোগ জানাতে পারবেন এবং সম্পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে ভিকটিমের তথ্য গোপন রেখে প্রয়োজনীয় সেবা ও আইনি সহায়তা প্রদান করা হবে।
পাশাপাশি নিরাপদ সাইবার স্পেস তৈরিকরণে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সচেতনামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।