গুম-খুন ও গ্রেফতারের নেশায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জোরজবরদস্তির অনৈতিক সরকার: বিএনপি
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরের চলতি দায়িত্বে থাকা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার রাষ্ট্রক্ষমতাকে চিরকাল কুক্ষিগত রাখতে দেশব্যাপী বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকে হত্যা, বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা ও গুম করার মাধ্যমে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
প্রিন্স বলেন, বর্তমান সরকার বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে গুমের মতো নিষ্ঠুর অপকর্ম করছে। সরকার বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করে দিতে চাচ্ছে। ‘আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই ছাত্রদল নেতা মোস্তাফিজুর রহমান এবং মিজানুর রহমান মিজানকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, গুম হয়ে যাওয়া এই দুই নেতাকে শীগ্রই জনসম্মুখে নিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি। নচেৎ তাদেরকে নিয়ে অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। এসময় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা চট্রগ্রামের সীতাকুন্ডের ইউনিয়ন যুবদল নেতা জামশেদ উদ্দীনকে হত্যার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
দেশ এক মৃত্যু উপত্যকা ও গুমের রাজ্যে পরিণত হয়েছে দাবি করে বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য ও এক ব্যক্তির শাসন কায়েম করতে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে তাদেরকে কারান্তরীণ করার পাশাপাশি গুম-খুনের নেশায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বর্তমান জোরজবরদস্তির অনৈতিক সরকার। বিগত ১২ বছরে সরকার তাদের বিভিন্ন অনুগত বাহিনী বা এজেন্সি দ্বারা বিএনপি’র ৫ শতাধিক নেতাকর্মী ছাড়াও ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক, লেখক, পরিবেশবাদী কর্মীদের গুম করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রিন্স বলেন, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন সিনেটর সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশে আওয়ামী সরকারের নির্দেশে র্যাব কর্তৃক ৪ শতাধিক মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা, গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহবান জানিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের মান-মর্যাদা ধুলিস্যাৎ হয়েছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। তার পরেও সরকার গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করার সংস্কৃতি থেকে বিরত থাকছে না।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি গত ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচন ও রাজধানীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা প্রসংগ টেনে বলেন, সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নজীরবিহীন ভোট ডাকাতি, জালিয়াতি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে প্রহসনের নির্বাচন সম্পন্ন হবার পর নির্বাচন থেকে জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই ঢাকায় কয়েকটি গণপরিবহনে আগুন লাগিয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৫ শতাধিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বানোয়াট ও হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পত্রিকার সংবাদের ভিত্তিতে মামলার এজাহারে বাদী হিসেবে যার নাম রয়েছে তিনি মামলা দায়ের করেননি বলে জানিয়ে এই নেতা বলেন, এসব মিথ্যা মামলায় করোনাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল বা বাসায় কোয়ারেন্টাইন বা চিকিৎসাধীন থাকা নেতাকর্মী, পঙ্গুত্ব বরণকারী নেতাকর্মী, রাজনৈতিক-সাংগঠনিক বা ব্যবসায়িক কাজে ঐদিন ঢাকার বাইরে অবস্থান করা নেতাকর্মী, স্থায়ীভাবে ঢাকার বাইরের অঞ্চলে বসবাসরত নেতাকর্মীদেরকেও জড়ানো হয়েছে। তাতে প্রমানিত হয়েছে-সরকার অতীতের মতো এখনও প্রতিহিংসা ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে হয়রানী করতে বদ্ধপরিকর।
গতরাতে উত্তরা-পশ্চিম থানা বিএনপি’র নেতা মিলনকে বাসা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এমন অভিযোগ টেনে প্রিন্স বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের গ্রেফতারের জন্য তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশের অভিযান চালানোর তীবত নিন্দা জানাচ্ছি। নেতাকর্মীদের বাসায় না পেয়ে বাসার সদস্যদের সাথে পুলিশ অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে।
বিএনপি সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে বিএনপির এ সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগের দায়-দায়িত্ব উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপি’র ওপর চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে।