ইয়াবার বিনিময়ে অস্ত্র!
আধিপত্যের দ্বন্দ্বে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে অস্ত্রের মজুদ। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় এজেন্টদের মাধ্যমে ইয়াবা পৌঁছে দিয়ে বিনিময়ে আগ্নেয়াস্ত্র নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের বাকলিয়া থেকে আব্দুর রাজ্জাক নামে এক রোহিঙ্গা আটক হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে লেদা ক্যাম্প থেকে কামাল হোসেন নামে আরেকজনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ইয়াবার বিনিময়ে ক্যাম্পের জন্য অস্ত্র সংগ্রহের চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। এরপর রোহিঙ্গাদের অস্ত্রের উৎস সন্ধানে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য রোহিঙ্গারা অস্ত্র বহন করছে। ক্যাম্প এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অস্ত্র ও ইয়াবা কারবারিতে জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত কয়েক মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যতবারই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তাতে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার হয়েছে। এমনকি গত মাসে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আটজন নিহত ও বহু আহত হয়। রোহিঙ্গাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রকে অশনিসংকেত বলছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তারা ক্যাম্প ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় নজরদারি, প্রয়োজনে অভিযানের পরামর্শ দিয়েছেন।
সিএমপির উপকমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান জানান, গত ৪ নভেম্বর নগরীর বাকলিয়া এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পিস্তল ও দুটি ম্যাগাজিনসহ ‘রোহিঙ্গা মাস্টার’ আব্দুর রাজ্জাককে আটক করা হয়। পরে লেদা ক্যাম্প থেকে কামালকে ধরা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ৩০ হাজার ইয়াবা ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে ক্যাম্পের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়ার কথা জানান।
আব্দুর রাজ্জাক পুলিশকে জানান, ঢাকার এক ব্যক্তির কাছে ইয়াবাগুলো পৌঁছে দিলে তিনি পিস্তলটি দেন। এটি কামালের কাছে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আটক করে পুলিশ। ঢাকার ওই ব্যক্তি ইয়াবা কারবারি।
অস্ত্রের বিনিময়ে টেকনাফ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে সারা দেশে নিয়োজিত এজেন্টদের মাধ্যমে বিক্রি করেন তিনি। রিমান্ডে গ্রেপ্তার দুই রোহিঙ্গা আরও অনেক তথ্য দিয়েছেন। ৫-৬টি জেলায় তারা তৎপর। তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান মেহেদী হাসান।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ৩২টি সশস্ত্র গ্রুপ রোহিঙ্গাদের ৩৪টি ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ করছে। ইয়াবার বিনিময়ে যারা অস্ত্র আনেন ক্যাম্পে তাদের ‘মাস্টার’ বলা হয়। এসব গ্রুপে শতাধিক মাস্টার রয়েছেন। রাত নামলে ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গারা আতঙ্কে থাকেন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং তুচ্ছ ঘটনাতেও অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে।
মূলত জন্মভূমি মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চয়তা না পেয়ে রোহিঙ্গারা হতাশা থেকে অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ড করছে। ইয়াবা দিলেই আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যাবে, এটি তাদের মনে স্থায়ীভাবে গেঁথে গেলে মুশকিল বাড়বে। দ্রুত অস্ত্রের জোগানদাতাদের সন্ধান ও প্রয়োজনে ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চালানো উচিত।’
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক কারবার, চোরাচালান ও মানব পাচারের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। টেকনাফের বাসিন্দাদের তারা অস্ত্র দিয়ে শাসন করতে চাইছে।
স্থানীয়দের তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। তাদের এখনই থামানো উচিত।’
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ক্যাম্পে ফাঁড়ি ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে। ক্যাম্পের সশস্ত্র গ্রুপ দমনে প্রতিটি ক্যাম্পে একটি করে ফাঁড়ির পরিকল্পনা রয়েছে।’