ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে আরেকটি ঐতিহাসিক বিপ্লব জাতির ভবিষ্যৎ রচনা করবে: নূরুল ইসলাম বুলবুল
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বাংলাদেশ আজ গভীর সঙ্কটের আবর্তে নিমজ্জিত। আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত, গণতন্ত্র নির্বাসিত ও মানবাধিকার বিপন্ন। গুম, খুন ও ধর্ষণ মহামারি আকারে বিস্তার লাভ করছে। চারদিকে অসহায় ও বিপন্ন মানুষের হাহাকার। দেশের গণতন্ত্র ও মানুষকে মুক্ত করতে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে প্রয়োজন আরেকটি ঐতিহাসিক বিপ্লব, যা এই জাতির ভবিষ্যৎ রচনা করবে।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে আধিপত্যবাদীর বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য সিপাহী-জনতার সফল বিপ্লব সংঘটিত হয়। সেদিন নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবারের ধ্বনিতে যেভাবে একনায়কতান্ত্রিক, শোষণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে দেশ ও ইসলামপ্রেমিক জনতা বাংলাদেশে একদলীয় শাসনের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিল। আগামী দিনেও একইভাবে সকল আধিপত্যবাদী শক্তির মোকাবেলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানী ঢাকার একটি মিলনায়তনে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহা. আব্দুল জব্বার, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির, অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও যুব নেতা কামাল হোসাইন, শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম।
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শূরা সদস্য সিরাজুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার সুমন, আশরাফুল আলম ইমন, শাহীন আহমদ খান প্রমুখ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ৭ নভেম্বর জাতীয় জীবনের এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সৈনিক-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিলো জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় অঙ্গিকার নিয়ে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালে দেশে গণতন্ত্রের কবর রচিত হয়েছিল। ৭ নভেম্বর সৃষ্টি না হলে এদেশ আধিপত্যবাদীদের হাতের ক্রিড়নকে পরিণত হতো।
বর্তমান ক্ষমতামীন আওয়ামী সরকার সেই আধিপত্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে আজ নিজ দেশের স্বাধীনতাকে বিকিয়ে দিতে চলেছে। সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র ও ক্ষমতার অপব্যহার করে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ সকল মৌলিক অধিকারের পথ সংকুচিত করে চলেছে। এই সঙ্কটময় অবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে আন্দোলনের বিকল্প নেই।
৭ নভেম্বরের চেতনা মূলত আধিপত্যবাদী ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে এক ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের চেতনা। তাই বিপ্লব দিবসের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও জুলুমতন্ত্র মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে।
মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বর পূর্ব সময়ে দেশে ব্যাংক ডাকাতি, লুটপাট, ধর্ষণ ও নির্যাতনসহ সব অন্যায় জুলুমের মাত্রা ছড়িয়ে গিয়েছিল। সেই একই ধারায় বর্তমানেও শাসক গোষ্ঠী ও তার ঘনিষ্ঠজনেরা একই পদ্ধতিতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানাবিধ অপরাধে লিপ্ত। এখনকার বাস্তব চিত্র তৎকালীন সময়ের চেয়েও ভয়াবহ। বিপ্লব ও সংহতি দিবসের প্রকৃত লক্ষ্য বাস্তবায়নে সংবিধানে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা পুনঃস্থাপন, দ্রব্যমূল্যসহ জনদুর্ভোগ লাঘব এবং বিচারের নামে প্রহসন বন্ধ করে অবিলম্বে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার পথ উন্মুক্ত করতে হবে।
তিনি দেশ, জাতিস্বত্তা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সকলকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, রুশ বিপ্লব, ফরাসি বিপ্লবসহ পৃথিবীতে নানা বিপ্লবের ইতিহাস দৃশ্যমান রয়েছে। সকল বিপ্লবের মূল চেতনা হলো মানুষের কল্যাণ আর মানুষের কল্যাণের মূল কারিগর ছিলেন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা:।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে না, কেননা তারা পরাধীনতার শৃঙ্খলে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল। ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব শৃঙ্খলামুক্ত হয়েছিল। আধিপত্যবাদী অপশক্তি ও তাদের দোসররা আমাদের স্বাধীকার হরণের যে নীলনকসা প্রণয়ন করেছিল তা সিপাহী-জনতার যুগপৎ বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিহত করা হয়েছিল। আজও সেই একই রকম পরিস্থিতি দৃশ্যমান। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে আমাদের রান্না ঘর থেকে শুরু করে সংসদ ভবন, গণভবনসহ সর্বত্রই ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ ইসলামের প্রকৃত আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি