হোয়াইট হাউজের অন্দরমহল ও ক্ষমতার পালাবদল

0

মার্কিন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু বলা হয় হোয়াইট হাউজকে। ২০০ বছরেরও বেশি পুরনো সাদা রঙের এই বাড়িটিতে আমেরিকার প্রেসিডেন্টরা বসবাস করেন। এখান থেকেই তারা দেশ পরিচালনা করেন, গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন। হোয়াইট হাউজের ভেতরের পরিবেশ ও এর ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে লিখেছেন পরাগ মাঝি

হোয়াইট হাউজ

১৭৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ১৬০০ পেনসিলভানিয়া এভিনিউয়ে হোয়াইট হাউজ নির্মাণের জন্য জায়গাটি বেছে নিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন। পরের বছরই শুরু হয় এর নির্মাণকাজ। হোয়াইট হাউজের নকশার জন্য স্থপতিদের মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলে আইরিশ বংশোদ্ভূত স্থপতি জেমস হোবানের নকশাটি পছন্দ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন। এরপর টানা ৮ বছর ধরে চলে এর নির্মাণকাজ। ১৮০০ সালের ১ নভেম্বর সুবিশাল এই ভবনের প্রথম বাসিন্দা হিসেবে পা রাখেন দ্বিতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস ও ফার্স্টলেডি অ্যাবিগেইল অ্যাডামস।

প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস যখন হোয়াইট হাউজে বসবাস শুরু করেন তখনো এর নামকরণ করা হয়নি। কাজও কিছু অসম্পূর্ণ রয়ে গিয়েছিল। বাড়িটি রং করার আগে চুনাপাথর ব্যবহার করে হোয়াইট ওয়াশ করেছিলেন নির্মাণ শ্রমিকরা যেন এর ওয়াল চুইয়ে ভেতরে পানি প্রবেশ করতে না পারে। স্থানীয় বাসিন্দারা তখন থেকেই এই ভবনকে হোয়াইট হাউজ ডাকতে শুরু করেন। কেউই প্রেসিডেন্ট হাউজ বলতেন না। পরে ১৯০১ সালে আমেরিকার ২৬তম প্রেসিডেন্ট থিয়োডর রুজভেল্ট লোকমুখের ‘হোয়াইট হাউজ’ নামটিকেই সরকারি নাম হিসেবে গ্রহণ করেন। চুনাপাথরের বদলে পরবর্তী সময়ে লেড পেইন্টের ব্যবহারের ফলে হোয়াইট হাউজের রং আরও উজ্জ্বল সাদা হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সময়ে এই বাড়িটির সংস্কার, পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। প্রেসিডেন্টরা তাদের নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী হোয়াইট হাউজকে সাজিয়েছেন।

কী আছে ভেতরে

হোয়াইট হাউজ নামে বিখ্যাত বাড়িটির তিনটি অংশ। মাঝখানের মূল ভবনটিতে বসবাস করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবার। এই অংশের দুই পাশে রয়েছে আরও দুটি অংশ; যার একটি ইস্ট উইং ও অন্যটি ওয়েস্ট উইং। সারা বাড়িতে ৬টি ফ্লোর, ১৩২টি কক্ষ, ৩৫টি বাথরুম ছাড়াও রয়েছে ৪১২টি দরজা, ১৪৭টি জানালা, ২৮টি ফায়ারপ্লেস, ৮টি সিঁড়ি ও ৩টি লিফট।

গুরুত্বপূর্ণ কক্ষগুলোর বেশিরভাগই ওয়েস্ট উইংয়ে অবস্থিত। এগুলোর মধ্যে ওভাল অফিস, সিচুয়েশন রুম, রুজভেল্ট রুম উল্লেখযোগ্য। প্রেসিডেন্টের প্রধান কার্যালয় হলো ওভাল অফিস। এখান থেকেই সরকারি নানা দাপ্তরিক কাজ করেন প্রেসিডেন্ট। এই অফিসের ঠিক সামনেই রয়েছে হোয়াইট হাউজ গার্ডেন। হোয়াইট হাউসের নানা অনুষ্ঠান এই বাগানের ভেতরে অনুষ্ঠিত হয়। আগত অতিথিদের শুভেচ্ছা জানানোর কাজটিও করা হয় এখানে।

ওয়েস্ট উইংয়ের গুরুত্বপূর্ণ কক্ষগুলোর একটি হলো রুজভেল্ট রুম। এখানে সাধারণত নতুন কর্মকর্তাদের মনোনয়নের ঘোষণা করা হয়। এই কক্ষের দেয়ালে থিয়োডর ও ফ্রাংকলিন দুই রুজভেল্টেরই আঁকা ছবি রয়েছে।

হোয়াইট হাউজের প্রেস ব্রিফিং রুমকে বলা হয় ‘জেমস এস ব্র্যাডি প্রেস ব্রিফিং রুম’। সাবেক হোয়াইট হাউজ প্রেস সচিব জেমস ব্র্যাডিকে সম্মান জানিয়ে ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এই কক্ষের নামকরণ করেন। জেমস ব্র্যাডি প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান প্রশাসনের প্রেস সচিব ছিলেন। ১৯৮১ সালে রোনাল্ড রিগ্যানকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার সময় ব্র্যাডি মারাত্মকভাবে আহত হন।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কক্ষের মধ্যে রয়েছে ক্যাবিনেট রুম, যেখানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট। মাঝখানের মূল ভবন বা রেসিডেন্স ভবনের নিচতলায় আছে একটি ম্যাপ রুম। ছোটখাটো সামাজিক জনসমাবেশ ও টেলিভিশন সাক্ষাৎকারের এই কক্ষটি ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট এই কক্ষে মানচিত্রের মাধ্যমে যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করতেন। পরবর্তী প্রেসিডেন্টরা এসব কাজের জন্য সিচুয়েশন রুম ব্যবহার করা শুরু করেন। মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ব্লু রুম। ডিম্বাকৃতির এই কক্ষে প্রেসিডেন্ট তার অতিথিদের আনুষ্ঠানিকভাবে আপ্যায়ন করেন।

বক্তৃতা, উৎসব, কনসার্ট ও নাচের জন্য ব্যবহার করা হয় ইস্ট রুম। রেসিডেন্স ভবনের সবচেয়ে বড় কক্ষ এটি। মূল ভবনের তৃতীয় তলায় আছে ট্রুম্যান ব্যালকনি। বিল ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটন রেসিডেন্স ভবনের চতুর্থ তলার বসার কক্ষটিকে মিউজিক রুমে রূপান্তর করেন। বিল ক্লিনটন যেন সেক্সোফোন বাজাতে পারেন এ কারণেই তিনি এটি করেছিলেন। মিউজিক রুমের পাশেই রয়েছে একটি জিম বা ব্যায়ামের কক্ষ।

রেসিডেন্স ভবনের নিচতলায় রয়েছে চকলেট শপ। এটি হোয়াইট হাউজের একটি আকর্ষণীয় রান্নাঘর। এখানকার পাচকরা বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে ডেজার্ট জাতীয় খাবার প্রস্তুত করেন। হোয়াইট হাউজের ইস্ট উইংয়ে একটি থিয়েটার রুমও রয়েছে। প্রেসিডেন্টের পরিবার দিনের যেকোনো সময় এখানে বসে সিনেমা দেখতে পারেন। এমনকি কোনো সিনেমা মুক্তির আগেই তাদের দেখার সুযোগ রয়েছে। ফ্রাংকলিন ডি রুজভেল্ট এই থিয়েটারটি তৈরি করেন।

ওয়েস্ট উইংয়ের নিচতলায় যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর পরিচালিত একটি ডাইনিং রুম আছে। এছাড়াও হোয়াইট হাউজের ভেতরে রয়েছে ক্যালিগ্রাফি অফিস, গেম রুম, সোলারিয়াম, চায়না রুম, ফ্লাওয়ার শপ, ব্যক্তিগত স্টাডি রুমসহ আরও অসংখ্য স্থাপনা।

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার সিচুয়েশন রুম

ওয়েস্ট উইংয়ের বেসমেন্ট বা মাটির নিচে ৫ হাজার বর্গফুটেরও বেশি জায়গা নিয়ে অবস্থান করছে সিচুয়েশন রুম। গুরুত্বপূর্ণ ও নিিদ্র নিরাপত্তার এই কক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট গোয়েন্দা তথ্য ও জরুরি সহায়তা পেয়ে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গোপন বিষয়গুলো নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হয় এখানে। সিচুয়েশন রুমে শুধু নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিরই প্রবেশাধিকার রয়েছে। জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রেও এই কক্ষটি ব্যবহার করা হয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। সিচুয়েশন রুমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যুক্ত থাকেন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের কর্মকর্তারা।

সিচুয়েশন রুম তৈরি করা হয়েছিল ১৯৬১ সালে জন এফ কেনেডির আমলে। অত্যন্ত সুরক্ষিত এই কক্ষটিতে জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় নেতারা নিয়মিতভাবে বৈঠক করেন। অনেকে এই কক্ষকে ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকা’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এই কক্ষটি এমন একটি জায়গা যেখানে পরমাণু শক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত কর্মকর্তারাসহ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব বাহিনীর মধ্যে বৈঠক হয়। এখান থেকে গোয়েন্দা তৎপরতার ওপরও নজর রাখা হয়।

সিচুয়েশন রুমের ভেতরে বসেই ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার মিশন প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সে সময় তার সঙ্গে অবস্থান করছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

সিচুয়েশন রুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কিংবা দিনের পর দিন পালাক্রমে কাজ করেন একদল কর্মকর্তা। তাদের বলা হয় ‘ওয়াচ টিম’। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঘটনার ওপর নজর রাখেন তারা। সন্ত্রাসী হামলা, গৃহযুদ্ধ অথবা অন্যান্য যেকোনো ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ব্যাপারে তারা সেখানে প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেন।

হোয়াইট হাউজের ওয়েস্ট উইংয়ে মাটির তলায় অবস্থিত এই সিচুয়েশন রুম। এই কক্ষে এমন একটি জায়গা আছে যেখানে বহু মানুষ বসতে পারেন। শুধু তাদেরই সিচুয়েশন রুমে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় উচ্চ পর্যায় থেকে যাদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা তাদের অতীত ও বর্তমান ইতিহাস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই অনুমতি দিয়ে থাকে। সিচুয়েশন রুমসহ হোয়াইট হাউজের ভেতরে আরও যেসব সুরক্ষিত এলাকা আছে সেখানে কীভাবে চলাচল করতে হবে সেসব বিষয়েও তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ওবামা প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা ব্রেট বুয়েন বলেছেন, ‘কক্ষটির বাইরে ছোট্ট একটি বক্সে কিংবা লকারে ফোন রেখে ভেতরে যেতে হয়। মিটিংয়ের সময় লকারের ছোট্ট একটি চাবিই শুধু সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া যায়। সিচুয়েশন রুমে মোবাইল ফোনের ব্যবহার কিংবা অন্যান্য আরও অনেক বিষয়ে বিস্তারিত দিকনির্দেশনার কথা উল্লেখ করা আছে হোয়াইট হাউজের কিছু পুস্তিকায়।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউজের মাটির নিচে বেজমেন্টের হলওয়েতে অ্যালার্মের মতো নিরাপত্তাজনিত কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপন করা আছে। তবে সিচুয়েশন রুমে ঢোকার যে পথ সেটি দেখতে বিমানবন্দরের গেটের চাইতেও সাধারণ।

যেভাবে হয় ক্ষমতার পালাবদল

প্রতি চার বছর পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দ্বিতীয় মেয়াদে কেউ নির্বাচিত না হলে সবসময় নতুন প্রেসিডেন্ট আসেন এই ভবনে। বিদায় নেন পুরনো প্রেসিডেন্ট। কিন্তু, এই যাওয়া আসার মাঝখানের সময়টায় কী ঘটে? কীভাবে হয় ক্ষমতা ও দায়িত্বের হাতবদল? এসব নিয়মকানুন যিনি নতুন করে লিখেছিলেন- সেই সিনেটর টেড কফম্যানের এক সাক্ষাৎকার নিয়েছিল বিবিসি।

টেড কফম্যান বলেছিলেন, ‘হোয়াইট হাউজের ওয়েস্ট উইং এমনই একটা জায়গা যে- এর ভেতর ঢুকলে আপনার গায়ে কাঁটা দেবে!’

২০০৮ সালে ওবামা যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তখন টেড কফম্যান ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রধান রাজনৈতিক উপদেষ্টা। ক্ষমতার হস্তান্তরকে সৌহার্দ্যপূর্ণ করতে প্রেসিডেন্ট ওবামা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাকে।

আমেরিকান গণতন্ত্রের একটা মূল দিক হলো শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার হস্তান্তর। মার্কিন সংবিধানে বলা আছে যে, নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার নির্বাচন হতে হবে, আর প্রেসিডেন্ট শপথ নেবেন জানুয়ারির ২০ তারিখ। ফলে নতুন সরকারে যারা আসবেন তাদের জন্য তৈরি হওয়ার সময় হচ্ছে মাত্র ৭০ দিনের মতো। এই পরিবর্তন শুধু নতুন ও বিদায়ী প্রেসিডেন্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। কারণ হোয়াইট হাউজের কার্যক্রমের সঙ্গে অসংখ্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত থাকেন। তাই নতুন প্রেসিডেন্টের আগমনের মধ্য দিয়ে পুরনো প্রশাসনের সবাই অনেকটা পেছনের দরজা দিয়ে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে বেরিয়ে যান। ফলে সেই সব পদের জন্য নতুন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগ দেয় নতুন প্রেসিডেন্টের নতুন প্রশাসন।

ইতিহাস বলে কিছু কিছু দায়িত্ব হস্তান্তর খুব ভালোভাবেই হয়ে গেছে। এর একটা ছিল জর্জ বুশের পর বারাক ওবামার দায়িত্ব গ্রহণ। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও এটা হয়েছিল খুবই সহযোগিতামূলক পরিবেশে। কিন্তু তার আগের বার বিল ক্লিনটনের বিদায়ের পর যখন জর্জ বুশ ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন, তখন ব্যাপারটা ছিল ঠিক উল্টো। মোটেও সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল না। তাই প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের দৃঢ় অঙ্গীকার ছিল যেন ক্ষমতার হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে হয়, তিনি নিজে যখন হোয়াইট হাউজে ঢুকেছিলেন সেই সময়টার মতো না হয়।

যখন রিপাবলিকান জর্জ ডব্লিউ বুশ সামান্য ব্যবধানে ২০০০ সালের নির্বাচন জিতলেন, তার দল হোয়াইট হাউজে এসে দেখলেন সেখানে নানা ধরনের ফাঁদ পাতা রয়েছে, জিনিসপত্র ভেঙেচুরে রাখা হয়েছে, লোককে বোকা-বানানোর, ঠাট্টা-বিদ্রƒপের নানারকম আয়োজন করে রাখা হয়েছে এবং সেগুলো নাকি করে রেখেছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্টাফরা।

কফম্যানের ভাষ্য অনুযায়ী, বুশ প্রশাসন যখন হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করে সেই সময়টিতে দেখা গেছে সুবিশাল বাড়িটির পুরুষদের বাথরুমে কারা যেন দেয়ালে নানা ধরনের কথা লিখে রেখে গেছে। এগুলোর বেশিরভাগই ছিল আক্রমণাত্মক ও অশ্লীল। নতুন প্রেসিডেন্ট বুশের জন্য যা অবমাননাকর। অফিসের ডেস্কগুলোতে তৈলাক্ত এবং আঠালো কিছু একটা জিনিস ঢেলে দিয়ে সেগুলো নষ্ট করে রাখা হয়েছে। টেলিফোনের স্বয়ংক্রিয় উত্তরের মেশিনে অশ্লীল বার্তা রেখে যাওয়া হয়েছে। বেশ কিছু কম্পিউটারের কিবোর্ড থেকে ডব্লিউ অক্ষরটা খুলে নেওয়া হয়েছে, বা ওটাকে চেপে উল্টো করে আটকে দেওয়া হয়েছে।

২০১০ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা কীভাবে এই ক্ষমতার পালাবদল প্রক্রিয়া উন্নত করা যায় তা নিয়ে বিভিন্ন দলের মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন টেড কফম্যানকে। এরপরই কফম্যান রিপাবলিকানদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। সে সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রতিবার নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে আগস্ট মাসে যখন প্রধান দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়ে যাবে, তখন থেকেই পালাবদলের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। একই সময়ে ফেডারেল সরকারের সব বিভাগকেই একটা ক্ষমতার পালাবদলের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে যেন তারা পরবর্তী সরকারের জন্য তৈরি থাকে।

কিন্তু এ বছর ব্যাপারটি কিছুটা ভিন্ন। কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যেসব সহযোগী ও উপদেষ্টারা এসেছেন তারা ঐতিহ্যগতভাবে রাজনৈতিক জগৎ থেকে আসেননি। অনেকের সরকারি পদে কাজ করার কোনো আগের অভিজ্ঞতাও নেই।

এছাড়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোভাব দেখেও মনে হচ্ছে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে তার ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো পূর্বপরিকল্পনা নেই। তাই এবার যদি বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প কীভাবে তার কাছে হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন তার দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ব।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com