এক দরদি রাজনীতিবিদের স্মৃতি
একসময় রাজনীতির সাথে সমাজ রাষ্ট্র জনগণের সেবার ছিল অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। সাধারণভাবে রাজনীতিকে ‘রাজার নীতির’ সাথে সম্পর্কিত ভাবা হলেও কালক্রমে সমাজে গণতন্ত্র ও প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন বিস্তৃতির সাথে সাথে রাজনীতি কার্যকরভাবে ‘নীতির রাজাতে’ পরিণত হয়। উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের সময় ভারতীয় উপমহাদেশ অঞ্চলে রাজনীতিকে এক ধরনের দেশদ্রোহিতায় রূপান্তর করা হয়েছিল। পাকিস্তান শাসনামলে তা কিছুটা নমনীয় হয়। কিন্তু এরপর বৈষম্যবিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রাম এই ভূখণ্ডে একপর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির রূপ দাঁড়ায় ভিন্ন এক ধরনের। কিন্তু রাজনীতির চক্র যেন এখন আবার পুরনো জায়গায় ফিরে আসছে।
তরিকুল ইসলাম ছিলেন আগাগোড়াই একজন আদর্শবাদী রাজনীতিবিদ। মাটি মানুষের প্রতি অঙ্গীকার থেকে যারা রাজনীতি করেন, তাদের জীবন ধারায় সাফল্য ব্যর্থতা আর জেল-জুলুমের যে পর্বগুলো অনিবার্য হয়ে উঠে তরিকুল ইসলামেরও তাই। ঔপনিবেশিক আমলে জন্ম নেয়া এ ব্যক্তির পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের শিক্ষা জীবনকালে আদর্শবাদী রাজনীতির প্রধান অ্যাজেন্ডা ছিল বৈষম্য ও শোষণমুক্তি। ছাত্রজীবনেই তিনি সেই রাজনীতিতেই দীক্ষা নেন। ১৯৬৩-১৯৬৪ সালে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে মাইকেল মধুসূদন কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৬২ সালে যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজের জরাজীর্ণ শহীদ মিনার মেরামত করতে গেলে তৎকালীন সামরিক সরকার তাকে গ্রেফতার করে। এরপর ১৯৬৮ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন করে নয় মাস রাজশাহী এবং যশোরে কারাভোগ করেন তরিকুল ইসলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়ায় আবারো কারাভোগ করেন তিনি। এরশাদ শাসন এবং ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময়ও কারাবরণ করতে হয় তাকে।
মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ভাবধারার প্রতি একনিষ্ঠ ছিলেন তরিকুল ইসলাম। বাম ছাত্র রাজনীতির মাঠকর্মী থাকার পর রাজনৈতিক জীবনে স্থানীয় নেতা, সেখান থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারক হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন তরিকুল ইসলাম।
মওলানা ভাসানীর রাজনীতির বৈশিষ্ট্য ছিল ধর্মবিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতার সাথে শোষণমুক্ত সমাজ কাঠামোকে একাত্ম করে তা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা। ভাসানী আবুজর গিফারী র:-এর বিশ্বাস এবং মাও সে তুং-এর শোষণমুক্তির রাজনীতি থেকে নিজের কর্মপ্রেরণা নিয়েছিলেন।
এই মজলুম জননেতা সারা জীবন কাটিয়েছেন সংগ্রাম ও জনগণের কাতারে থেকে। তরিকুল ইসলাম যখন যশোর এম এম কলেজের ছাত্রনেতা ছিলেন, তখন মওলানার সেই আদর্শ তার গভীর মন ও মননে প্রতিষ্ঠিত হয়। মওলানা ভাসানীর জীবনটা যেমন ছিল ত্যাগ নিষ্ঠা ও জনগণের প্রতি দরদ ও আনুগত্যে ভরা, তরিকুল ইসলামও ছিলেন তাই। ১৯৭০ সালে তিনি আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন। সক্রিয় অংশ নেন করেন মুক্তিযুদ্ধে। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি থেকে প্রথমে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল আর পরে জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন তিনি। বিএনপির প্রথম আহ্বায়ক কমিটির ৭৬ সদস্যের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। যশোর জেলা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। তিনি বিএনপির যুগ্মমহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পঞ্চম কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
ভাসানচরের ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী জনগণের নেতায় পরিণত হন। আজীবন তাই তিনি ছিলেন। তিনি শেরেবাংলার লাহোর প্রস্তাব অনুসারে অখণ্ড বাংলা ও আসামকে নিয়ে একটি পৃথক রাষ্ট্র কামনা করেছিলেন। সেই স্বপ্ন পূরণ না হলেও পরে খণ্ডিত বাংলাদেশেই তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে চেয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন মওলানার স্নেহধন্য। তারা এক সাথে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করলেও পরে দু’জনের রাজনৈতিক পথে বেশ খানিকটা ভিন্নতা সৃষ্টি হয়।
মওলানা ভাসানী তার রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন পাকিস্তান থেকে শোষণমুক্তির জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ অনিবার্য হয়ে উঠবে। আবার পিন্ডির শোষণমুক্তির পর দিল্লির শৃঙ্খলমুক্ত হওয়ার সংগ্রামও একসময় অনিবার্য হয়ে দেখা দেবে। শহীদ জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের রাজনীতির প্রাথমিক শেকড়টি প্রোথিত ছিল ওখানে। মরহুম শেখ মুজিবকে যারা রাজনৈতিক আবেগের ঊর্ধ্বে উঠে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছিলেন তারা জানেন, এই রাষ্ট্রনায়ক শৃঙ্খল পরা স্বাধীন দেশের শাসক হতে চাননি।
এ জন্য তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে দ্রুততম সময়ে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। যে ৭ দফা গোপন চুক্তি সৈয়দ নজরুল-তাজউদ্দীনের প্রবাসী সরকার দিল্লির সাথে সম্পন্ন করার কথা বলা হয় এর কোনো ধারা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে বাস্তবে রূপায়িত করেননি। স্বাধীন দেশের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সশস্ত্রবাহিনী তিনি গঠন করেন। পাকিস্তান প্রত্যাগত বাঙালি সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের নিজ নিজ বাহিনী ও কর্মক্ষেত্রে বহাল করেছেন। ইসলামী সম্মেলন সংস্থার সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের বিরোধিতাকে উপেক্ষা করে লাহোর যান। চীন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর এই রাজনৈতিক কৌশলের ক্ষেত্রে মওলানা ভাসানীর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক প্রভাবের বিরাট ভূমিকা ছিল। ’৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর মওলানা ভাসানীর লালিত এই রাজনীতিই জিয়াউর রহমান ধারণ করে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক অনুসারী তরিকুল ইসলাম খুলনা বিভাগীয় অঞ্চলে আধিপত্যবাদবিরোধী স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে রাখা বাংলাদেশ গড়ার রাজনৈতিক সংগ্রামে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।
বিএনপির অনেক সমালোচক জাতীয়তাবাদী দলকে একটি ক্লাব বা ফোরামের সাথে তুলনা করেন। বলে থাকেন, সুবিধা-অসুবিধার বাঁকে বাঁকে দল পাল্টে এখানে অনেকে নেতা বা মন্ত্রী হয়েছেন। বিএনপির যেসব নেতা এর বিশেষ ব্যতিক্রম তাদের একজন হলেন তরিকুল ইসলাম। তিনি মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী হিসেবে সেই ধারাবাহিকতায় বিএনপি সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি এর মাঠপর্যায়ের সংগঠক নেতা মন্ত্রী এবং সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। বিএনপির রাজনীতির প্রতি একনিষ্ঠতার কারণে এরশাদের সেনাশ্রয়ী শাসন, ওয়ান ইলেভেন এবং পরবর্তী আওয়ামী লীগের আমলে তাকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, কিন্তু তিনি কোনো সময় রাজনীতির আদর্শগত পথ থেকে বিচ্যুত হননি।
তরিকুল ইসলাম বিএনপি সরকারের সময় তথ্য, সমাজকল্যাণ, রেল ও যোগাযোগ, টিঅ্যান্ডটি, খাদ্য এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে পূর্ণাঙ্গ কেবিনেটমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থনীতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন আর মাঠ রাজনীতির অভিজ্ঞতার সমন্বয় নিয়ে মন্ত্রণালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিতে পেরেছেন যশোরের এই জননেতা। মন্ত্রী থাকাকালে এবং বিরোধী রাজনীতির সময় তার শয়নকক্ষে বা হাসপাতালের কেবিনে শিয়রের পাশে বসে গল্প করা বা আলোচনার সুযোগ হয়েছে। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমার মনে হয়েছে, এই জননেতা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে অনেক গভীরভাবে বুঝতে পেরেছিলেন।
২০০৭ সালে বাংলাদেশের আকাশে যখন দুর্যোগের ঘনঘটা তখন বিএনপির অনেক নেতাকে বেশ খানিকটা নিরুদ্বিগ্ন মনে হতো। তাদের ধারণা ছিল, বিএনপি আবার ক্ষমতার ধারায় ফিরে আসবে। তারা বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার গভীর বলয়ের খেলাধুলাগুলোকে পাঠ করতে পারেননি। কিন্তু তরিকুল ইসলাম ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি এ ব্যাপারে সতর্ক করার চেষ্টা করেছেন। আমি যতটা জানি প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করার ফর্মুলাকে তিনি ভালো সিদ্ধান্ত বলে মনে করেননি। এ সিদ্ধান্ত বিএনপির জন্য পরে বিপর্যয়কর প্রমাণ হয়েছে।
তরিকুল ইসলামের পুরো রাজনীতি ছিল আধিপত্যবাদবিরোধী। কিন্তু তিনি বাস্তবতাকে উপেক্ষা করার মধ্যে কল্যাণ দেখতে পেতেন না। ভারতের সাথে সম্পর্ক তলানিতে নিয়ে যাওয়াকে তিনি দলের জন্য ক্ষতিকর মনে করতেন। তবে দলের মূল নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যের ক্ষেত্রে তিনি কোনো সময় নমনীয়তা দেখাননি। বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার প্রতি রাজনৈতিক পটভূমি ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে তার ছিল সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতা। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের কারিগরদের সাথে যোগাযোগ রেখে দলে ভিন্ন ধারা সৃষ্টির উদ্যোগে তিনি কোনো ধরনের সাড়া দেননি। এ জন্য তাকে ভঙ্গুর শরীর নিয়ে ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় কারা নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়েছে। জীবিত তরিকুল ইসলাম জেল থেকে বেরুতে পারেন কি না, তা নিয়ে পরিবারের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি হয়।
সংবাদকর্মী হিসেবে তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মামলার গভীরতা সম্পর্কে তখনকার নীতিনির্ধারকদের কারো কারো কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেছিলাম। আমার মনে হয়েছে, তরিকুল ইসলামের দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগগুলো ছিল একবারে ঠুনকো। আসলে তার অপরাধ ছিল জিয়াউর রহমানের রাজনীতি ও তার উত্তরাধিকারের প্রতি আনুগত্য। সে আনুগত্য ত্যাগে নমনীয়তা দেখালে তিনি তখন অনেকের মতো জেলের বাইরে ভালো থাকতে পারতেন। কিন্তু সেটি হলে যে আদর্শবাদী রাজনীতিবিদ ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তিত্ব এবং সার্বভৌমত্বের প্রহরী হিসেবে তরিকুল ইসলাম এখনো স্বীকৃত ও স্মরিত হচ্ছেন তা হয়তো হতো না।
একজন মন্ত্রীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তার মন্ত্রণালয়ের সচিব সবচেয়ে সম্যক অবগত থাকেন। তরিকুল ইসলাম যখন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ছিলেন তখন জাফর আহমেদ চৌধুরী ছিলেন সেই মন্ত্রণালয়ের সচিব। সংবাদকর্মী হিসেবে আমার শ্রদ্ধাভাজন ও ঘনিষ্ঠ আমলাদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। নীতিনিষ্ঠা এবং সততার ব্যাপারে ১৯৭৯ ব্যাচের এই মেধাবী বিসিএস কর্মকর্তা সব সময় তরিকুল ইসলাম সম্পর্কে অতি উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। মনে আছে একবার তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হারিছ চৌধুরীর এক তদবির না শোনার কারণে বন সচিব সরকারি কাজে বিদেশে থাকাকালেই তার বদলির আদেশে তিনি স্বাক্ষর করিয়ে নেন। তরিকুল ইসলামের অজ্ঞাতসারে এ ধরনের সিদ্ধান্ত হওয়ার বিষয়টি পরে জানতে পারেন মন্ত্রী। তরিকুল ইসলাম এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করতে বাধ্য করেন এবং পরে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাথে যোগাযোগ করে তা বাতিল করেন।
তরিকুল ইসলামের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রতি বিএনপিপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার ছিল বিশেষ আস্থা। জটিল কোনো সমস্যা দেখা দিলে বেগম জিয়া তরিকুল ইসলামের সাথে পরামর্শ করতেন এবং অনেক সময় সমস্যা সমাধানে তাকে দায়িত্ব দিতেন। তরিকুল ইসলাম যে বৃহত্তর খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন সেখানে দলীয় কোনো সঙ্কট অথবা নির্বাচনের সময় জোটের শরিকদের সাথে কোনো সমস্যা দেখা দিত না। এ অঞ্চলে স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচনে সমন্বয় অন্য অনেক এলাকার চেয়ে বেশি সুসংহত ছিল। বিএনপির রাজনীতিকে অনেক গভীরভাবে বুঝতেন বলেই সম্ভবত এটি হতো।
বেগম খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন, বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্ব তরিকুল ইসলামকে দিতে। তারেক রহমানও এ ব্যাপারে সম্মত ছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু ভঙ্গুর স্বাস্থ্যের কারণে তরিকুল ইসলাম এ দায়িত্ব নিতে চাননি।
৭২ বছর বয়সেই জনাব তরিকুল ইসলাম স্থায়ী জীবনে চলে গেছেন। সপরিবারে হজ থেকে ফেরার পর তাকে পরবর্তী জীবনের মানসিক প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। কিছু মানুষ থাকেন যাদের অন্তরের ভেতরের গভীর মমতা মুখের ভাষায় বোঝা যায় না। তরিকুল ইসলাম ছিলেন তেমন একজন ব্যক্তিত্ব। তার গভীর সান্নিধ্যে যারা গেছেন তারা অন্য এক তরিকুল ইসলামকে প্রত্যক্ষ করেছেন। যার মুখের ভাষার স্পষ্টবাদিতার গভীরে লুকিয়ে থাকত অন্তহীন দরদ ও শুভ কামনা। পরম করুণাময় তার ভুলত্রুটি মার্র্জনা করে জান্নাতের উন্নত বাগানে তাকে স্থান করে দিন- সেই আকুতি তার এই মৃত্যু দিবসে।