সাংবাদিককে অর্ধমৃত ফেলে রাখা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়: টিআইবি
অপহরণের পর চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারকে অবর্ণনীয় নির্যাতনের ঘটনাকে স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে আরও একটি হুমকি বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর তাকে খুঁজে পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করলেও, নির্যাতনে অর্ধমৃত ও অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় তাকে ফিরে পাওয়াকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মানতে নারাজ সংস্থাটি। অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে টিআইবি।
সোমবার (২ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারের নিখোঁজ হওয়া এবং নির্যাতনের পর আধামরা অবস্থায় তাকে খুঁজে পাওয়া মোটেও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং মুক্ত সাংবাদিকতা তথা স্বাধীন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধে চলমান হুমকি, ভয়ভীতি ও নির্যাতনের নিষ্ঠুর ধারাবাহিকতা মাত্র।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী উদ্ধারকালে সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারের আর্তনাদ ‘ভাই, আমাকে মাইরেন না, আমি আর নিউজ করব না’- শুধুই নির্যাতনে অপ্রকৃতস্থ অসহায় ব্যক্তির স্বগোক্তি নয় বরং সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের ওপর নির্যাতন এবং সাহসী সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধের ভয়াবহ মধ্যযুগীয় বর্বরতার প্রমাণ। গণমাধ্যমের সার্বিক অবস্থার প্রতিচ্ছবিই যেন ফুটে উঠেছে গোলাম সরোয়ারের এই আর্তনাদের মধ্য দিয়ে!
ড. জামান বলেন, নিয়মিত বিরতিতে সাংবাদিক নির্যাতন এবং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে হামলা-মামলার ঘটনা ঘটলেও কঠোর আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে যথোপযুক্ত শাস্তির দৃষ্টান্ত কার্যত অনুপস্থিত, যা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছি। বরং এ কথা বলাও অত্যুক্তি হবে না যে, মুক্ত গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতা বিষয়ে সরকারের বারবার উচ্চারিত কথামালা শুধুই ‘রাজনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা’ মাত্র!
‘স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদের জেরে সরোয়ারকে অপহরণ ও নির্যাতন করা হয়ে থাকতে পারে’ গণমাধ্যমে প্রকাশিত সরোয়ারের সহকর্মীদের এমন আশঙ্কার সূত্র ধরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের আরও বেশকিছু ঘটনার উদাহরণ আছে, যার কোনো সুষ্ঠু তদন্ত কিংবা বিচারের দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই না। তাহলে কি আমরা ধরে নেব যে, সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা-মামলা ও নির্যাতন-নিপীড়ন এমনকি অপহরণ-গুমের মতো ঘটনাও সরকার, তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা গুরুত্বসহকারে দেখছেন না?
তিনি বলেন, আমরা আতঙ্কিত বোধ করছি, যখন দেখতে পাই সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং সে কারণেই স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে! প্রভাবশালীদের অবৈধ স্বার্থসুরক্ষা এবং তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশে বাধা সৃষ্টিতেই কি তাহলে এসব ঘটছে? অথচ প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মুক্ত সাংবাদিকতা এবং সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা বিষয়ে একাধিকবার তার অঙ্গীকার ও সদিচ্ছার কথা বলেছেন! এসব ঘটনার পুনঃপৌনিকতা প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের শুধু অবমাননাই করছে না বরং মুক্ত সাংবাদিকতার সাংবিধানিক অঙ্গীকারকে ধারাবাহিকভাবে পদদলিত করছে।
ইতোপূর্বে নিখোঁজ সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান না করে উল্টো নিজ দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের দৃশ্যত বানোয়াট মামলায় তাকে গ্রেফতার এবং অমানবিকভাবে হয়রানির উদাহরণ টেনে ড. জামান আরও বলেন, একজন মানুষ নিখোঁজ হলে যেখানে রাষ্ট্র তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সে বিষয়ে ত্বরিত অনুসন্ধানের মাধ্যমে ঘটনার মূল উদঘাটন করার কথা, সেখানে এক ধরনের ঐচ্ছিক ব্যর্থতাই নিয়মিত উদহারণ হয়ে উঠেছে।