সীমান্তে গুলি করে মারা হয় আমাদের নাগরিকদের কিন্তু সরকার তার প্রতিবাদ জানান না: ফখরুল
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র (কার্টুন) প্রকাশের নিন্দা জানিয়ে এ ব্যাপারে মুসলিম উম্মাসহ সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে বিএনপি।
গতকাল রবিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে গুলশোনে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এর আগে গতকাল শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘পবিত্র ধর্ম ইসলাম এবং মহানবী মুহাম্মদ (সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র (কার্টুন) প্রকাশ ও তার পক্ষে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের অবস্থান গ্রহণকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বের ২০০ কোটিরও বেশি মুসলমানসহ সকল ধর্ম-বর্ণের কোটি কোটি যুক্তিবাদী ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং বিভিন্ন রাষ্ট্র যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চলেছে, বিএনপি তার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছে।’
তিনি বলেন, ‘সকল ধর্মের মানুষের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বিএনপি মনে করে যে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে কোনও ধর্মীয় নেতার অবমাননা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। রাসুল (সা.) এর কার্টুন প্রকাশকে বিএনপি তাই একটি গর্হিত অপরাধ বলে গণ্য করে এবং এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘ধর্মীয় সহিষ্ণুতায় বিশ্বাসী বিএনপি মনে করে যে, মহানবী (সা.) এর কার্টুন প্রকাশ ও তা সমর্থন করা যেমন ধর্মবিদ্বেষকে উস্কিয়ে দেয়ার মতো অপরাধ, তেমনই প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে মানুষ হত্যাও গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠার মহান ব্রত নিয়ে যিনি মানবতার ধর্ম ইসলাম প্রচার করেছেন সেই মহানবী (সা.) এর দীক্ষাই হোক আমাদের নির্দেশক।’
‘বিএনপি আরো মনে করে যে, পবিত্র ইসলাম ও মহানবী (সা.) এর অনুসারীদের আবেগকে আহত করে বিশ্বব্যাপী যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে তা গোটা মানবজাতির ঐক্য ও মিলনের জন্য এক অনতিক্রমনীয় হুমকিতে পরিণত হয়েছে। এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মূল্যবোধকে স্বীকৃতি দেয়ার মত মানবিক ও গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে উদ্যোগী হতে হবে। কারণ ঘৃণা ও সন্ত্রাস- কোনটাই বিশ্ববাসীর কাম্য নয়’- বলেন ফখরুল।
মহানবী (সা.) কার্টুন প্রকাশ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার কোনটাতে প্রতিবাদ জানায় আর কোনটাতে জানায় না- এটা বলা দুরূহ। কারণ আপনারা লক্ষ্য করে দেখেছেন যে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব যেখানে প্রশ্নের সম্মুখিন হয়, সীমান্তে গুলি করে মারা হয় আমাদের নাগরিকদের সে বিষয়ে কিন্তু আমাদের সরকার কোনও প্রতিবাদ জানান না বা প্রতিবাদ করেন না। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের যে ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা বা তাদের যে সমস্ত চিন্তা-ভাবনা সেগুলোকে লক্ষ্য করে বা সেগুলোকে কেন্দ্র করে সরকার কখনও সেই ধরনের স্ট্যান্ড নেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, সেই কারণে হয়ত তারা (সরকার) এখন পর্যন্ত কোনও রি-অ্যাকশন দেয়নি। সেটাতে তাদের যে চরিত্র তা পরিষ্কার হয়ে উঠে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যে আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে বা প্রস্তাব করেছে এই আইনগুলো করলে তা গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। যেটা আমরা বলি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সেটা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে আগামীকাল সোমবার বিকেল ৪টায় আমাদের সুপারিশগুলো আপনাদের মাধ্যমে জাতির সামনে উপস্থাপন করবো।’
তিনি জানান, ‘নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন-২০২০ বিষয়ে ইতোপূর্বে নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বিস্তারিত পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, যা গতকাল স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গৃহিত হয়। আজকে বিকাল ৩টায় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের এই সংক্রান্ত সুপারিশ ও চিঠি নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে দিয়ে আসবে।’
সংবাদ সম্মেলন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।