ময়মনসিংহে ২৫ দিনে ১৩ ধর্ষণ

0

চলতি অক্টোবর মাসের ২৫ দিনে ধর্ষণের ঘটনায় ময়মনসিংহ জেলার আট থানাতেই ১৩টি মামলা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ধর্ষণের ঘটনার শিকার শিশু ও কিশোরী। এছাড়াও রয়েছেন একাধিক নারী শিক্ষিকাও। পুলিশ প্রতিটি মামলাতেই আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। তবুও এমন অপরাধের ঘটনা কমছে না।

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার তারাটী ইউনিয়নে পাঁচ বছরের শিশু গত ২৭ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে বাড়ির পাশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সহপাঠীদের নিয়ে খেলছিল। এ সময় তাদের প্রতিবেশী ফজলু মিয়া (৫৫) ওই শিশুকে স্কুলের পাশে ধানক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করে। শিশুটির চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে ফজলু মিয়া পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় ওই দিনেই শিশুটির মা মুক্তাগাছা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে ধর্ষক ফজলু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে।

অপরদিকে গত ১৮ অক্টোবর ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় নাচের শিক্ষিকাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে রাজিব পরিবহনের হেলপার ও তার সহযোগী। এ ঘটনায় ১৯ অক্টোবর সোমবার বিকেলে ওই শিক্ষিকা বাদী হয়ে মুক্তাগাছা থানায় আরিফ ও আজিজুলকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় বাসের হেলপার আরিফকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছে।

ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষিকা জেলার নান্দাইল উপজেলার কাবাড়ি গ্রামের আমোদপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি নৃত্যু সঙ্গীতালয়ের প্রশিক্ষক। গ্রেপ্তার আরিফ উপজেলার রামাকানা গ্রামের বাসিন্দা। তার সহযোগী আজিজুল একই গ্রামে বসবাস করেন।

মুক্তাগাছা থানার ওসি বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, পৃথক মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে ধর্ষক ফজলু মিয়া ও বাস হেলপার আরিফ এখন কারাগারে রয়েছেন।

গত ২৬ অক্টোবর সোমবার রাতে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় তৃতীয় শ্রেণির এক মাদরাসা ছাত্রীকে (১১) ধর্ষণের অভিযোগ উঠে আব্দুস সাত্তার(৬০) নামে এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী উপজেলার কলসিন্দুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। সে স্থানীয় একটি কওমী মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত কলসিন্দুর বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তারকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধোবাউড়া থানায় মামলা করেছেন ওই ছাত্রীর মা।

ধোবাউড়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, কলসিন্দুর বাজারের আব্দুস সাত্তারের মুদি দোকানে গেলে কাজ আছে বলে শিশুটিকে দোকানের ভেতরে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন তিনি। দোকান থেকে বাড়িতে ফিরে মাকে বিষয়টি খুলে বলে শিশুটি।

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবাকে বিয়ের প্রলোভনে স্থানীয় পাঁচকাহনিয়া গ্রামের রহম আলীর ছেলে সেলিম মিয়া(৪২) একাধিকবার শারীরিক মেলামেশা করেন। এতে বিধবা নারী গর্ভবতী হয়ে যান। পরে একটি ফুটফুটে মেয়ে জন্ম হয়। এ ঘটনায় ২৫ অক্টোবর রবিবার রাতে ওই বিধবা নারী বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় মামলা করেন।

গত ১৪ অক্টোবর বুধবার বিকালে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের কলতাপাড়া সড়কের গুজিখাঁ এলাকা থেকে দুলাভাইয়ের গলায় ছুরি ধরে শ্যালিকাকে উঠিয়ে নিয়ে যায় চার-পাঁচজন যুবক। পরে পৌর শহরের পশ্চিম দাপুনিয়ার জুয়েল মিয়ার বাড়িতে নিয়ে দুলাভাইয়ের সামনে শ্যালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। পরে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দিলে দ্রুত পুলিশ আসায় রক্ষা পায় তারা।

ভিকটিমের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। ভগ্নিপতির বাড়ি গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নে বেড়াতে এসে এ দুর্ঘটনার শিকার হন শ্যালিকা।

গৌরীপুর থানার ওসি বোরহান উদ্দিন জানান, মামলার পর ২৭ অক্টোবর রাতে অভিযুক্ত সেলিম মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অন্যদিকে দুলাভাইয়ের কাছ থেকে শ্যালিকাকে উঠিয়ে নিয়ে ধষণের চেষ্টার ঘটনায় পৌরসভার পশ্চিম দাপুনিয়ার আব্দুল গণির ছেলে মো. জুয়েল মিয়াকে (২৬) ওই দিনেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা এখন কারাগারে।

গত ১৯ অক্টোবর রাতে ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় পরিবারের সবাইকে অচেতন করে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে জাকারিয়া নামে এক যুবক। পরে ২২ অক্টোবর সদর উপজেলার দাঁপুনিয়া বাজারের গাঘড়া মধ্যপাড়া র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন জাকারিয়া। জাকারিয়া সদর উপজেলার চর হাঁসাদিয়া গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে। ময়মনসিংহ র‌্যাব-১৪ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

গত ৯ অক্টোবর উপজেলার ঈশ্বরগঞ্জ ইউনিয়নের খৈরাটি গ্রামের এক ভিক্ষুকের কন্যা (১৪) পাশের বাড়ির অনিক চন্দ্র দাসের বাড়িতে যায়। আগে থেকেই ঘরের ভেতরে থাকা অনিকের বন্ধু পার্শ্ববর্তী হারুয়া কুমরাশাসন গ্রামের আ. রহিমের ছেলে আরাফাত হোসেন (২২) কিশোরীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ওই কিশোরী বিষয়টি তার পরিবারকে জানায়। পরিবারের লোকজন প্রতিবেশীদের কাছে বিচারপ্রার্থী হলেও কোনো প্রতিকার পায়নি। পরে কিশোরীর মা বাদী হয়ে ২১ অক্টোবর বুধবার মামলা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মোখলেছুর রহমান। তবে ওসি মোখলেছু রহমান ঘুষের দায়ে প্রত্যাহার হয়ে বর্তমানে পুলিশ লাইনে রয়েছেন।

গত ৭ অক্টোবর ত্রিশাল উপজেলার কানিহারি দক্ষিণপাড়া গ্রামের প্রাইভেটকার চালক জুয়েল মিয়া (৩৫) প্রেমের সূত্র ধরে একই উপজেলার একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে বিয়ের আশ্বাসে ময়মনসিংহ নগরীর দুই বন্ধুর ব্যাচেলর ম্যাসে নিয়ে যায়। পরে সেখানে ওই ছাত্রীকে তিন দিন আটকে রেখে ধষণ করে। পরে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এই ছাত্রীকে সদরের চুরখাই উইনারপর সিবিএমসি হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায় জুয়েল।

এ ঘটনায় ১১ অক্টোবর রোববার রাতে ওই ছাত্রী বাদী হয়ে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানায় জুয়েল মিয়া ও তার দুই সহযোগীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার।

ময়মনসিংহের ভালুকার ভরাডোবা ইউনিয়নের কডোর মার্কেটের এলাকায় গত ১১ অক্টোবর রবিবার দুপুরে সাড়ে চার বছরের কন্যা শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে ১৩ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে সেলিম মিয়াকে আসামি করে ভালুকা থানায় মামলা করেন।

১৭ অক্টোবর শনিবার রাতে জেলার গফরগাঁও উপজেলার গো-হাটা এলাকা থেকে তাকে সেলিমকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১৪।

র‌্যাব-১৪-এর সিনিয়র এএসপি সমীর সরকার বলেন, ধর্ষক সেলিম ভালুকা উপজেলার ভরাডোবা ইউনিয়নের কডোর মার্কেট এলাকায় বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই হিসেবে থাকেন।

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ধলীয়া গ্রামে ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরী শ্যালিকাকে ভয় দেখিয়ে ভগ্নিপতি একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন । বর্তমানে ওই কিশোরী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বড় বোন বাদী হয়ে গত ৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে অভিযুক্ত ভগ্নিপতি মানিক চন্দ্র দেবনাথকে আসামি করে মামলা করেছেন।

মানিক চন্দ্র দেবনাথ জেলার ইশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের বিঘাগ্রা গ্রামের মৃত অবনি চন্দ্র দেবনাথের ছেলে।

ভালুকা মডেল থানার ওসি মাইন উদ্দিন জানান, আসামি মানিক চন্দ্রকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে এক ছাত্রীকে (১৩) অপহরণ করে গাজীপুরে নিয়ে টানা চারদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে লিমন(২০) নামে এক যুবক। পরে ১১ অক্টোবর রবিবার সকালে এই কিশোরীকে গফরগাঁও উপজেলার বিহারী মোড় এলাকায় একটি বাড়িতে এনে রাখেন লিমন। গোপন সংবাদে খবর পেয়ে দুপুরে তাকে লিমনকে গ্রেপ্তার এবং ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

অন্যদিকে উপজেলার বারবাড়িয়া ইউনিয়নের চারিপাড়া গ্রামের সাদেক হাসান কর্তৃক ১৪ বছরের এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে ধর্ষিত কিশোরী এখন সাড়ে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। প্রভাবশালী মহলের চাপে ভুক্তভোগী কিশোরীর পরিবার এতোদিন থানায় মামলা করতে সাহস পায়নি। সারাদেশে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে সাহস পেয়ে তার পরিবার গফরগাঁও থানায় মামলা করে। পরে ১০ অক্টোবর রাতে পুলিশ সাদেক হাসানকে গ্রেপ্তার করে।

গফরগাঁও থানার ওসি অনুকুল সরকার বলেন, উভয় ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠানো হয়েছে।

গত ৪ অক্টোবর চিপস দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘরে ডেকে নিয়ে ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার রামপুর চারিয়ায় সাড়ে তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে করে একই এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম নামে এক যুবক। পরে ৬ অক্টোবর মঙ্গলবার শিশুটির মা তারাকান্দা থানায় জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন।

৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর র‌্যাব-১৪ এর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছে।

ময়মনসিংহের সদর উপজেলায় এক নারী শিক্ষিকা তার অন্য সহকর্মী শিক্ষক কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় ওই নারী শিক্ষক ৬ অক্টোবর মঙ্গলবার ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা করেছেন। ধর্ষিত ওই নারী সদর উপজেলার বয়ড়া ইউনিয়নের দীঘারকান্দা আদর্শ মডেল স্কুলের শিক্ষিকা। আর অভিযুক্ত আবু সাঈদ একই স্কুলের শিক্ষক ও পরিচালক।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বলেন, গত ৩ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে আবু সাঈদ ওই নারীকে তার দীঘারকান্দার বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই ঘটনায় স্কুলশিক্ষিকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। পুলিশ আবু সাঈদকে ধরতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com