আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী সরকার তারা ভিন্নমত সহ্য করতে চায় না: মির্জা ফখরুল
দেশের জনগণের কাছে কোন দলের কতটা জনপ্রিয়তা রয়েছে সেই জনমত জরিপে ‘নরমাল ফেয়ার ইলেকশন’ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আওয়ামী লীগের মুখে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না মন্তব্য করে সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘আসুন না, নরমাল ফেয়ার ইলেকশন করুন। আপনারা কোথায় কতটুকু আছেন, জনগণের কাছে কতটা জনপ্রিয় আছেন, সেটা দেখা যাবে। তবে মনে রাখতে হবে, দেশের জনগণ কোনোদিন পরাজয় মেনে অধিকার হারিয়ে নিশ্চুপ থাকে না।’
শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এগ্রিকালচারিস্টস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাব) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
‘কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের কৃষি সেক্টরে কৌশল শীর্ষক’ এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন এ্যাবের আহবায়ক কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. একে ফজলুল হক ভূইয়া।
এসময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের প্রতিনিয়ত বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলার কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ‘একদলীয় সরকার’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘তারা (সরকার) ভিন্নমত সহ্য করতে চায় না। আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং লাগে। তারা আগে বলেছে যে বিএনপি নেই। বিএনপি নাকি একেবারে নিঃশেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের সাধারণ সম্পাদকের প্রত্যেকদিন একটাই কাজ, আর তা হলো বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলা। উনি শুধু বলছেন, বিএনপি নাই, বিএনপি নাই। অথচ আপনি (ওবায়দুল কাদের) দেশের অর্থনীতি, আপনার দল এসব নিয়ে কথা না বলে শুধু শেখ হাসিনাকে নিয়ে আর বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলেন। আসলে বিএনপি এত বেশি করে এত প্রবলভাবে জনমনে শেকড় গেড়ে আছে যে, আপনি প্রত্যেকদিন বিএনপিকে নিয়েই কথা বলেন।’
‘এখন চতুর্দিকে দুর্নীতি’- এমন দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার একটা কথাও সত্য বলে না। সরকার যে ভাষ্য দেয়, তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনও মিল নেই। চতুর্দিকে দেখি যে সবাই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। আমার ভাই, চাচা-খালা-বোন সবাই আক্রান্ত হয়েছে। খবর নিয়ে দেখবেন খুব কম পরিবার আছে যাদের কেউ না কেউ আক্রান্ত হয়নি। ঢাকা উত্তরের মেয়রের পরিবারের ১৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জেলাগুলোতে এখন কোনও টেস্ট হয় না। ওই যে ট্রাম্প বলেছে- ‘নো টেস্ট নো করোনা’।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য যে আজকে ভারত স্বীকার করে যে তাদের প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ কমে গেছে, অথচ এরা (বাংলাদেশ সরকার) বলে প্রবৃদ্ধি নাকি ১০ ভাগ বেড়ে গেছে। ইউ জাস্ট ইমাজিং। একটা সরকার কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে জনগণের সাথে মিথ্যা কথা বলে। এর একমাত্র কারণ জনগণের সাথে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। এই সরকার সম্পূর্ণভাবে জনবিচ্ছিন্ন, সেকারণে জনগণের প্রতি তাদের কোনও দায়িত্ব নেই।’
তিনি বলেন, ‘আজকে পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনে জিডিপির ১৮ শতাংশ আর কৃষি ক্ষেত্রে ১.৮ শতাংশ। কেন? কারণ হলো জনগণের প্রতি যদি স্টিম রোলার চালাতে হয়, তাহলে তাদের এই পাবিলক এডমিনিস্ট্রেশন বাড়াতে হবে। তাদের খুশি রাখতে হবে। সবাইকে একটার পর একটা প্রণোদনা দিতে হবে। গাড়ি দিতে হবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিশেষ বাহিনীর লোকদের গাড়ি কেনার জন্য ৩০ লাখ করে টাকা দিয়েছে। এখন উপ-সচিব পর্যন্ত গাড়ি কেনার টাকা পায়। সেই গাড়ি মেইনটেনেন্সের জন্য মাসে ৫০ হাজার টাকা পাবে। আর আমার কৃষক ভাই খাবার পাবে না, আমার ভ্যানচালক ভাই খাবার পাবে না।’
‘এক/এগারো আওয়ামী লীগ করিয়েছে’ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে তারা কোন মুখে গণতন্ত্রের কথা বলেন। যারা জনগণের ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নেয়, যারা জনগণের সাথে মিথ্যা বলে প্রতারণা করে, তারা বলে গণতন্ত্রের কথা। আওয়ামী লীগের কোনও অধিকার নেই গণতন্ত্রের কথা বলার। তারা হারিয়ে গেছে, দেউলিয়া হয়ে গেছে বলেই আজকে তাদের গায়ের জোরে বন্দুক-পিস্তল দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হয়। আসুন না নরমাল ফেয়ার ইলেকশন করুন। আপনারা কোথা কি আছেন, জনগণের কাছে দরদী হয়ে গেছেন, সেটা দেখা যাবে। কেন আপনারা ২০১৮ সালে আগের রাতে নির্বাচন করে নিয়ে গেলেন। ২০১৪ সালে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো না, আপনারা ১৫৪ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করে কেন একটি জনবিচ্ছিন্ন সরকার প্রতিষ্ঠা করলেন? এটা শেষ হবে, শেষ হতে বাধ্য। আমাদের দেশের জনগণ কোনোদিন পরাজয় মেনে অধিকার হারিয়ে নিশ্চুপ থাকে না।’
দলীয় নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, ‘আপনারা কখনই হতাশার কথা বলবেন না। হতাশা দিয়ে কখনও লড়াই করা যায় না। যা করবেন আশা নিয়ে করবেন। সামনে সেই আশার লক্ষ্য রাখতে হবে। গণতন্ত্রের সূর্য উঠবেই।’
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, এ্যাব নেতা কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ইবরাহিম খলিল, গোলাম হাফিজ কেনেডি, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল ফারুক ও অধ্যাপক আব্দুল করিম প্রমুখ।