বেরিয়ে আসছে ‘অপকর্মের’ ফিরিস্তি

0

পুরান ঢাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে ও কাউন্সিলর (বরখাস্ত) ইরফান সেলিমের। সশস্ত্র দেহরক্ষীদের মাধ্যমে তিনি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। দখল, চাঁদাবাজি থেকে হেন কোনো অপকর্ম নেই যা করেননি সেলিম। প্রত্যেক রাতে বাড়িতে মদের আড্ডা বসাতেন, সেখানেই পরিকল্পনা হতো জমি দখল কিংবা চাঁদাবাজির। পরিকল্পনা অনুযায়ী সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী পাঠিয়ে ব্যর্থ হলে জমি ও দোকান মালিকদের ধরে এনে টর্চার সেলে নির্যাতন করা হতো।

নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলায় রিমান্ডে নিয়ে ইরফান সেলিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এসব তথ্য দেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে ডিবির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, ‘দুই সহযোগীসহ ইরফানকে আমরা হেফাজতে এনেছি। আমরা শুধু নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলা তদন্ত করছি। রিমান্ড শেষ হলে এ বিষয়ে পাওয়া বিস্তারিত তথ্য জানানো যাবে।’

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, তিন দিন রিমান্ডের অংশ হিসেবে গতকাল দুপুরে ধানমণ্ডি মডেল থানার হাজতখানা থেকে মিন্টো রোডে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নেওয়া হয় ইরফান সেলিম, তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদ ও হাজী সেলিমের প্রটোকল অফিসার এ বি সিদ্দিক ওরফে দীপুকে। সেখানে ডিবির তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। গত বুধবার রাতেও ধানমণ্ডি মডেল থানায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা অপকর্মের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দখলদারিত্ব হাজী পরিবারের পুরনো ঐতিহ্য। চকবাজার, ইমামগঞ্জ, বেগমবাজার, বীরেন্দ্র বোস স্ট্রিট, কেল্লার মোড়ের জোলাপট্টিতে জমি, ভবন ও মার্কেট এবং গাবতলী ও বাবুবাজারের মধ্যে ভাওয়াল এস্টেটের ইমামগঞ্জ রাজারবাড়ির জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে। বাবার দখলে থাকা জমি ও প্রতিষ্ঠান দেখভাল করতেন ইরফান।’

একটি সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর ও হত্যাচেষ্টায় ইরফান জড়িত থাকলেও তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন দুই সহযোগী। তারা সেদিনের ঘটনার দায় নিজের ওপর নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিন আসামির মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে জাহিদ ও দীপু জানান সেদিন ইরফান সেলিমের কোনো নির্দেশনা ছাড়াই তারা গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর করেন।

এদিকে ইরফান সেলিম এবং তার দেহরক্ষী জাহিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনের পৃথক মামলায় সাত দিন করে মোট ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন।

এ বিষয়ে চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, ‘অস্ত্র ও মাদক আইনের পৃথক মামলায় সেলিম ও জাহিদকে গ্রেপ্তার দেখানো এবং রিমান্ডের আবেদন আদালতে পাঠানো হয়েছে। তারা এখন অন্য মামলায় রিমান্ডে রয়েছেন। এজন্য আদালত আমাদের আবেদনের বিষয়ে পরে শুনানির দিন ধার্য করবে।’

গত ২৫ অক্টোবর রাতে স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খান। রাজধানীর কলাবাগান ট্রাফিক সিগন্যালে সংসদ সদস্যের স্টিকারযুক্ত একটি গাড়ি তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। ওই গাড়িতে ছিলেন হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান ও তার লোকজন। ওয়াসিফ নিজের পরিচয় দিয়ে গাড়িটিকে থামতে ইশারা করেন ও কথা বলতে চান। তখন তাকে মারধর করে রক্তাক্ত করেন ইরফান ও তার লোকেরা।

এ ঘটনায় গত সোমবার ধানমণ্ডি মডেল থানায় হাজী সেলিমের ছেলে, দেহরক্ষী, গাড়িচালকসহ অজ্ঞাতদের নামে মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন ওয়াসিফ। পরে র‌্যাব পুরান ঢাকার চকবাজারে হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ইরফান সেলিম ও জাহিদকে গ্রেপ্তার করে। অভিযানকালে বাড়িতে অবৈধ মদ, অস্ত্র ও ওয়াকিটকি পাওয়ায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের এক বছর করে কারাদণ্ড দেয়। পরে তাদের নামে মাদক ও অস্ত্র আইনে দুটি করে চারটি মামলা দেয় র‌্যাব।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com