খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে
ক্ষমতাসীনরা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সংসদ সদস্য হাজী সেলিম পুত্র ইরফান সেলিম কর্তৃক নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের প্রসঙ্গ টেনে মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় এটা প্রমাণিত হচ্ছে, যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি, যে সরকারের ক্ষমতার নৈতিক ভিত্তি নেই, সেই সরকারের আমলে মন্ত্রীরা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়। সরকার দলের নেতারা দুর্নীতিগ্রস্ত হয় এবং সবাই স্বেচ্ছাচারী হয়ে যায়। এর প্রমাণ আমরা দেখলাম কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার ঘটনা এবং নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনা।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই যে স্বেচ্ছাচারী মনোভাব, এই মনোভাব দূর হওয়া কিংবা সম্রাট-পাপিয়া, ফরিদপুরের নেতারা এবং আরও অনেক নেতা, তাদের যেসব দুর্নীতি-অনাচার সেটা থেকে বের হওয়ার একটাই পথ। আর তা হলো জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা এবং জনগণকে জবাবদিহিমূলক একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আর সেটা সম্ভব শুধু অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। তার জন্য প্রয়োজন ক্ষমতায় একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকা এবং আর একটা যোগ্য নির্বাচন কমিশন থাকা।
সেজন্য জনগণের দাবি যে, নিরপেক্ষ সরকার ও যোগ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। সেই নির্বাচনে জনগণ তার পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। তারা রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিচালনার দায়িত্ব নেবে এবং তাদেরকে যেহেতু জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে, জবাবদিহি করতে হবে সেহেতু সেই সরকারের কোনও মন্ত্রী কিংবা কোনও নেতা দুর্নীতিবাজ কিংবা স্বেচ্ছাচারি হতে পারবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারের ভিত্তি যেখানে অনৈতিকতার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে, যেখানে সরকারের মন্ত্রী বলেন, কর্মকর্তা বলেন আর তার দলের নেতা-কর্মী বলেন- কারোই নৈতিক মূল্যবোধ কাজ করে না। সবাই স্বেচ্ছাচারী-দুর্নীতিবাজ হয়ে যায়।’
জাতীয়তাবাদী যুব দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু যুব দলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন। তারা প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।
পরে নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এ সময় যুব দলের মোরতাজুল করীম বাদরু ও মামুন হাসানসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ করোনায় আক্রান্ত। কী দুর্ভাগ্য আমাদের! দেশে কতজন আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছে সরকারের পক্ষ থেকে যে তথ্য প্রতিদিন দেয়া হচ্ছে সেই তথ্য বিশ্বাস করে না জনগণ। কারণ সরকারের মন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান বা আইসিডিডিআরবি‘র মতো প্রতিষ্ঠান যখন বলে, ঢাকা শহরের শতকরা ৪৫ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলো বা আক্রান্ত আছে তার যার সংখ্যা দাঁড়ায় ৯০ লক্ষ। সেখানে সরকার বলছে, সারা দেশে প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়। কাজেই এই কথা কেউ বিশ্বাস করে না।
যে সরকারের ওপর জনগণের বিশ্বাস নেই, যে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের আমলে ঢাকা মহানগরীতে শতকরা ৫ ভাগ বা ১০ ভাগ লোক ভোট দিতে যায়। তার মানে ভোট প্রক্রিয়া, ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার, এই বিষয়গুলোর ওপর মানুষ নিরাশ হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ মানুষ গণতন্ত্র সম্পর্কে হতাশ ও নিরাশ হয়ে যাচ্ছে। এটা হতে দেয়া যাবে না। কারণ মহান মুক্তিযুদ্ধের সূবর্ণ ফসল গণতন্ত্রকে আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে। সেই রক্ষা করার লক্ষ্যেই বার বার যারা এদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে সেই বিএনপি, সেই শহীদ জিয়ার আদর্শে উদ্দীপ্ত হয়ে, সেই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। আমি বিশ্বাস করি, জাতীয়তাবাদী যুব দল অতীতের মতো এবারও এই লড়াইয়ে সামনের কাতারে থাকবে ইনশাল্লাহ।’
বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রের লিপ্ত-আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেবের অনেক মন্তব্যই আসে, যেগুলো নিয়ে মন্তব্য করা প্রয়োজনই বোধ করি না। কারণ মানুষ তার কোনও মন্তব্যকে গুরুত্ব দেয় না। আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই তাকে (ওবায়দুল কাদের) ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিলেন। তারা কি পদত্যাগ করেছিলেন নাকি রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছিলেন? এখন তো ২১ বছর হয় নাই। সুতরাং তাদের মুখে এই ধরণের কথা শোভা পায় না।’
সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা মওকুফে মুক্ত দলের চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে তার সুচিকিৎসার জন্য আবারও তার মুক্তির দাবি জানান তিনি।