জনগণের দুঃসময়ে দেশে ফিরতে চান তারেক রহমান,পথে প্রধান বাধা ক্ষমতাসীন আ.লীগ সরকার

0

গত এক যুগ ধরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জনগণের দুঃসময়ে দেশে ফিরতে চান, রাজনীতি করতে চান বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

দলটির নেতারা বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথে প্রধান বাধা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান তার পাসপোর্ট নবায়ন করতে দিলেও বাংলাদেশ হাইকমিশন তার পাসপোর্ট নবায়ন করেনি। পাসপোর্টের বাইরে তার মাথার ওপর খড়গ হয়ে ঝুলছে আদালত কর্তৃক (ষড়যন্ত্রমূলক) মামলায় যাবজ্জীবন দন্ড। এছাড়া নিরাপত্তা সংকটসহ একাধিক বাধা রয়েছে।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে চান জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চান দেশে ফিরতে। কিন্তু তার দেশে ফেরার পথে প্রধান বাধা আওয়ামী লীগ সরকার। দেশে আসতে চাইলে প্রথমেই দরকার পাসপোর্ট। পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলেও সরকারের নির্দেশনা না থাকায় যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশন তার পাসপোর্ট দিচ্ছে না। একটা দলের প্রধান পাসপোর্ট ছাড়া তো কোনোভাবেই দেশে ফিরতে পারবেন না।’

(ষড়যন্ত্রমূলক) মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হলে তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে বিএনপি।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জিয়া পরিবারের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের সময় ৭ মার্চ ঢাকা সেনানিবাসের ভেতরে মইনুল রোডের বাড়ি থেকে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের কারণে তার মেরুদন্ড ভেঙে দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘১৮ মাস কারাভোগের পর সে সময় তার বিরুদ্ধে হওয়া ১৩টি মামলায় জামিন পান। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালে মুক্তি পান তিনি। পরে ১১ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পান এবং একইদিন রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে যান তারেক রহমান।

লন্ডনে থাকাবস্থায় আলোচনায় আসে তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিক নন। তখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে তিনি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তাকে পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল তারেক রহমান ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন এবং এক বছরের মধ্যেই সেটি গৃহীত হয়। বর্তমানে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন তারেক রহমান।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জিয়া পরিবারের এক সদস্য বলেন, তারেক রহমান দেশে ফিরতে চান। কিন্তু সে ক্ষেত্রে একাধিক বাধা রয়ে গেছে। বাধাগুলো হলো প্রথমত দেশে ফিরতে প্রথমেই নিজের পাসপোর্ট দরকার। অথচ নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেও তা পাননি তারেক রহমান। দ্বিতীয়ত তার বিরুদ্ধে হওয়া (ষড়যন্ত্রমূলক) মামলায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা। আমরা মনে করছি, দেশে এখন সরকারি দল ছাড়া অন্য কারও ন্যায়বিচার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য দেশে ভিন্ন আইন। তৃতীয়ত নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা। তারেক রহমান দেশে ফিরলে তার যে নিরাপত্তার দরকার হবে তা সরকার দেবে না। এটা স্পষ্ট। কারণ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়ার পর তার গুলশানের বাসভবনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।

সর্বশেষ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কয়টি মামলা রয়েছে জানতে চাইলে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন থানায় (ষড়যন্ত্রমূলক) ২৪টি মামলা রয়েছে। এগুলো অন্যায়ভাবে তারেক রহমানের ইমেজ নষ্ট করতে সরকার করেছে। এসব রাজনৈতিক মামলা। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ভুঁইফোড় কিছু নেতা সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য, গুরুত্বপূর্ণ হতে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সারা দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা করেছেন। সারা দেশে এমন শতাধিক (ষড়যন্ত্রমূলক) মামলা রয়েছে। যদিও দীর্ঘদিন তিনি দেশে নেই।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জিয়া পরিবারের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘২০০৭ সালের মার্চ মাসে যৌথ টাস্কফোর্সের হাতে গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। পরের বছর ৩ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান। সে সময় তার বিরুদ্ধে মোট ১৩টি মামলা করা হয়েছিল।’

তারেক রহমান দেশে ফিরলে আইনজীবীদের কী কী করণীয় রয়েছে জানতে চাইলে দলের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বলছেন, এই মুহূর্তে পাসপোর্ট ছাড়া তারেক রহমানের পক্ষে দেশে আসা সম্ভব নয়। পাসপোর্ট পেলে এবং দেশে ফিরলে প্রথমেই তাকে কারাগারে যেতে হবে। এরপর আইনজীবী হিসেবে আমরা তার জামিনের আবেদন জানাব। তবে জামিনের আবেদন করলেও তা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ আমরা দুই বছর লড়াই করার পরও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্ত করতে পারিনি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে একই অবস্থা হবে। ফলে তাকে (ষড়যন্ত্রমূলক) মামলায় অন্যায়ভাবে দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com