১১ বছর পর বিচারাধীন মামলার ফের তদন্ত
সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে থাকা মামলার তদন্ত আবার করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তদন্তের জন্য মামলাটি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়েছে। চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিলের ১১ বছরের বেশি সময় পর তা আবার তদন্তের জন্য পাঠানো হল।
অবসরপ্রাপ্ত এক মেজরের প্লট দুর্নীতির মামলায় চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম ‘বিধিসম্মত’ না হওয়ায় যথাযথ তদন্ত সংস্থাকে (দুদক) মামলাটি ফের তদন্তের আদেশ দেয়া হয়। সম্প্রতি ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএ ইমরুল কায়েস মামলাটি ফের তদন্তের আদেশ দেন।
তবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখতিয়ারবহির্ভূত এমন তদন্তের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ কিংবা কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এখতিয়ারবহির্ভূত এ ধরনের তদন্তে পুলিশের জবাবদিহিতার বালাই নেই। এ ধরনের ভুলে পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতও তেমন কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। বিভাগীয় পর্যায়েও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এখতিয়ারবহির্ভূত কৃতকর্মের জন্য পুলিশ সদস্যের সাজার ব্যবস্থা না থাকায় এ ধরনের ‘ইচ্ছাকৃত ভুল’ থামছে না।
জানতে চাইলে দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) ও সাবেক সিনিয়র জেলা জজ মো. মঈদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন ফেলে রেখে তদন্তের জন্য মামলা দুদকে পাঠনোর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। হরহামেশাই এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
একের পর এক ভুল হওয়ায় এমন ভুলকে ‘ইচ্ছাকৃত ভুল’ বলা যেতে পারে। এমন ভুলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর আদেশ দিতে পারেন আদালত। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। থানায় মামলা হলে সেটির নথিপত্র আদালতে যায়। নির্দিষ্ট সময় পরপর ম্যাজিস্ট্রেট সেগুলো দেখেন ও প্রতিবেদন দাখিলসহ অন্যসব আদেশ দেন। মামলাটি কী ধারায় হয়েছে, তদন্তের এখতিয়ার কার- এসব বিষয়েও সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট লক্ষ্য রাখতে পারেন। পুলিশের এমন এখতিয়ারবহির্ভূত তদন্তে একদিকে যেমন দীর্ঘ সময় পার হচ্ছে, অপরদিকে আদালতের প্রতি সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের ভরসার ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এখতিয়ারবহির্ভূত বিষয়ে পুলিশের তদন্তের সুযোগ নেই। পেনাল কোডের যেসব ধারা পুলিশের এখতিয়ারভুক্ত সেগুলোর তদন্ত করা হয়। এরপরও কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।এ প্রসঙ্গে জানতে চার্জশিট দাখিলকারী তদন্ত কর্মকর্তা মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই মো. শাহিন মামুনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে চার্জশিটে উল্লেখিত তার মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জানা গেছে, ২০ জুন দুদক বিধিমালা ২০০৭-এর সংশোধনী গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। এর ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়- আইনের তফসিলভুক্ত কোনো অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো ব্যক্তি থানায় অভিযোগ করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট থানা অভিযোগটি পাওয়ার পর উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেটি দুদকে পাঠাবে। তবে আলোচ্য মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলার ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।
বিচারাধীন মামলা ফের তদন্তে : মেজর (অব.) খাদিজা আনাম মিথ্যা হলফনামা ও অঙ্গীকারনামা দাখিল করে নিজ সম্পত্তির বিষয় গোপন করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে একটি প্লট বরাদ্দ নেন।
এ অভিযোগে ২০০৮ সালের ১৩ মে রাজউকের সহকারী পরিচালক (এস্টেট) মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ৩০ জুন মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই মো. শাহিন মামুন চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে ১২ জনকে সাক্ষী করা হয়। ইতিমধ্যে আটজনের সাক্ষ্যগ্রহণও করা হয়।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১০ মার্চ আট নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। সাক্ষ্য চলাকালে ২৯ এপ্রিল ঢাকা মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ উর রহমান নিজ থেকে মামলাটি ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েস মামলাটি ফের তদন্তের আদেশ দেন।
এটি দুদক সিডিউলভুক্ত হওয়ায় দুদককেই তদন্তের আদেশ দেয়া হয়। আদেশে আদালত বলেন, ‘মামলাটির অপরাধের ধারা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর তফসিলভুক্ত হওয়ায় পুলিশ বিভাগের তদন্ত কার্যক্রম বিধিসম্মত হয়নি। এ কারণে মামলাটি দুদক কর্তৃক তদন্ত হওয়া আবশ্যক মর্মে প্রতীয়মান হয়।’ একই সঙ্গে আগামী ১৮ নভেম্বর মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।