নির্বাচন হলো গণতন্ত্রের বাহন, কিন্তু আ.লীগ সরকার সেটাকে ধ্বংস করেছে: বিএনপি
অটোপাসে বা বিনা পরীক্ষায় পাসে কোনও মর্যাদা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আমলেও যারা বিনা পরীক্ষায় পাস করেছিল, তাদের কোনও সামাজিক মর্যাদা ছিলো না।’
গতকাল রবিবার (২৫ অক্টোবর) এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পরীক্ষা ছাড়াই ‘এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট:শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর প্রভাব’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিক্ষক সমন্বয় কমিটি (বিএসএসসি)।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘করোনাকালে করুনা পাস। কেউ বলে অটোপাস। এটা জাতির জন্য, শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের জন্য কতটা অনুকূল বা প্রতিকূল? আজকে সেই প্রশ্ন উঠেছে। পরীক্ষা নেয়া হবে না কেনো? আসলে সরকার যে যুক্তি দেখিয়েছে, সেটা সরকারের মুখে শোভা পায় না। তারা অফিস, কলকারখানা, গার্মেন্টস ও গণপরিবহন চালু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘সবকিছু চালু করেছেন। কোনও কিছু বাদ নেই। মাস্ক পড়তে আইন করা হয়েছে। কিন্তু কেবল পরীক্ষা হবে না? অথচ আমাদের অনেক স্কুল-কলেজ রয়েছে। কমিউনিটি সেন্টার আছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুরো না হলেও আংশিক পরীক্ষা নেয়া যেতো। কিন্তু সরকার বললো সবাই পাস। এই ঘোষণা আগে দেয়া হলে তো যেসব অভিভাবক টাকা দিয়েছেন সেগুলো লাগতো না। এসব ফেরত দেয়া হবে কি-না তা অনিশ্চিত।’
নজরুল বলেন, ‘অটোপাস বা বিনা পরীক্ষায় পাসে কোনও মর্যাদা নেই। পাকিস্তান আমলে যারা পাস করেছিল তাদেরও কোনও মর্যাদা ছিলো না। সেসময় অনেকেই অটোপাস করে বিএ’তে ভর্তি হয়েছিল। তাদের বিয়ে-শাদী এবং সামাজিক কোনও মর্যাদা ছিলো না। এবারও তা-ই হবে। অনার্স আছে, মাস্টার্স আছে। কে কতোটা মেধাবী বা দক্ষ তা বুঝা গেলো না। এক্ষেত্রে শিক্ষাবিদদের মত নেয়া হলে ভালো মত বেরিয়ে আসতো। কিন্তু তারা এর প্রয়োজন মনে করে নাই। অর্থ উপার্জন করা যত গুরুত্ব আগামী প্রজন্মকে ভালোভাবে প্রস্তুত করার ততটা গুরুত্ব। যা নিয়ে সরকার ভাবছে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচন হলো গণতন্ত্রের বাহন। সেটাকে ধ্বংস করা হয়েছে, শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। কিছু লোভী ও মেরুদণ্ডহীন মানুষকে দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ঢাকায় কি শতকরা দশ ভাগ লোক ভোট দিতে যায়? এটাতো একজন মানুষের পরিবারের ভোট। নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনকে আরও সুষ্ঠু করার ব্যাপারে সরকারের কোনও আগ্রহ নেই। নির্বাচন কমিশনেরও নেই।’
বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে। অধিকাংশ স্কুলেও ক্লাস চলছে। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া হলো না কেনো? সবকিছু বন্ধ থাকলে তো সরাসরি পরীক্ষা নেয়া যেতো। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরীক্ষা নেয়া যেতো। আসলে সরকার সে ব্যাপারে ভাবেনি। বস্তুতপক্ষে সরকার ক্ষমতার জন্য যত আগ্রহ ও দক্ষতা দরকার সব করছে। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু বললে বা লিখলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অনেককে গ্রেফতার করা হচ্ছে। জামিনও দেয়া হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের সাথে আলাপ করে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারতো।’ পরীক্ষা নেয়াটা খুবই জরুরি ছিল বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সেলিম ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল করিম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের অধ্যাপক ড. মোঃ কামরুল আহসান প্রমুখ।
এ সময় বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ছাত্রদলের সাবেক নেতা মো. আবুল হাসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব উপস্থিত ছিলেন।