জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া সরকারের হাতে দেশ নিরাপদ নয়, দেশের মানুষ নিরাপদ নয়: বিএনপি
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কড়া সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের দেশে যে নির্বাচন কমিশন আছে এটা একটা ঠুটো জগন্নাথ। এদের লজ্জা শরম হায়া বলতে কিচ্ছু নাই।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলছে, ঢাকা-৫ আসনে ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে। আমরা মনে করি ৫ পার্সেন্ট ভোটও পড়ে নাই। তারা কি বলছে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে, একটা মানুষের তো লজ্জা শরম হায়া থাকে, এদের তা-ও নাই। নির্বাচন যেমনই হোক অবলীলায় কমিশন বলে যায়, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে’।’
সোমবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ঢাকা-৫ ও সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত সব উপনির্বাচন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন এখন একটা তামাশায় পরিণত হয়েছে বহু আগে থেকেই। গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন ‘নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে’, কথাটা তো তিনি মিথ্যা বলেননি। এই নির্বাচন তো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে ২০১৪ সাল থেকেই।’
ওবায়দুল কাদেরের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যখন ক্ষমতায় এসেছেন এর পর থেকেই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশের জনগণ যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারে তাদের পছন্দ মতো প্রার্থীকে যাতে ভোট দিতে না পারে সেজন্য সমস্ত ব্যবস্থা তৈরি করেছেন। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছেন, পুলিশকে ব্যবহার করেছেন র্যাবকে ব্যবহার করেছেন বিডিআরকে ব্যবহার করেছেন এবং দুর্ভাগ্য যে সশস্ত্র বাহিনীকে আমরা কখনও বিতর্কিত হতে দিতে চাই নাই তাদেরকেও আপনারা মাঝেমধ্যে ব্যবহার করতে চেয়েছেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে বাংলাদেশ নিরাপদ নয়, এই সরকারের অধীনে বাংলাদেশের মানুষ নিরাপদ নয়। তার প্রমাণ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। আমাদের মা-বোনেরা কেউ নিরাপদে চলাফেরা করতে পারছে না। ধর্ষণের মহোৎসব শুরু হয়েছে বাংলাদেশে এবং তার জন্য দায়ী কে? এই সরকারের ব্যর্থতা। সরকারের মতের সাথে যাদের মিল না পড়ে তাদেরকে হয় গুম করে দেয়া হয় না হয় হত্যা করা হয়। কিছু কিছু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এমন ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তারা অনেক সময় দেখামাত্রই গুলি করে দিচ্ছে মানুষকে। হত্যা করার পর বলা হয় মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, চোরাকারবারি ও জঙ্গি।’
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে কক্সবাজারের সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহাকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে যে থানার ওসি জড়িত ওই থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের নেতৃত্বে নাকি ২১৪ জন হত্যাকাণ্ড হয়েছে। পুলিশের ধারা বিনা বিচারে। কোথায় যাবে মানুষ? যাদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে রক্ষা করা তারাই এখন মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে, না হয় হত্যা করে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘নির্বাচনগুলো এখন তামাশায় পরিণত হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটের আগের রাত্রে সমস্ত ভোট ডাকাতি করে ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। ২০২৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই ১৫৪ জনকে এমপি ঘোষণা করা হয়েছিল। সেজন্য আজকে সমস্ত পৃথিবীর মানুষ বলছে, বাংলাদেশের মানুষের ভোটের যে অধিকার সে অধিকার নেই। দেশে এখন আর কোনও নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। অনেকে প্রশ্ন করেন- এমন নির্বাচন হয় তবুও আপনারা নির্বাচনে যান কেন? আমরা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে নির্বাচনে গিয়ে বারবার প্রমাণ করতে চাই, এই সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, হয় না।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে দুর্নীতি হচ্ছে। দুর্নীতি কোথায় নাই? সারা বাংলাদেশ এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সংগ্রামটা খুব কঠিন সংগ্রাম। একটা ফ্যাসিস্ট সরকার যাদের জনগণের সাথে কোনও সম্পর্ক নাই, জনবিচ্ছিন্ন এই সরকারের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সেজন্য আমরা খুবই স্পষ্ট করে বলেছি, আর তালবাহানা করবেন না অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করুন। অতীতের সকল নির্বাচনকে বাতিল করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। এটাই একমাত্র সমাধান।’
তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাস বলেন, ধর্ষণ বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবনতি বলেন, সবকিছুই নির্ভর করছে একটা নির্বাচিত সরকারের ওপরে। একটা নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণের প্রতিনিধি ছাড়া কখনও এসব সমস্যার সমাধান হবে না। তারা (সরকার) তো জনগণের কাছে আসেন না, জনগণও তাদেরকে চেনে না। তারা জনগণকে দেখে পালিয়ে পালিয়ে থাকে। ওই তক্তে বসে মসনদে বসে তারা মনে করছে খুব ভালোভাবে দেশ চালাচ্ছে। অবলীলায় মিথ্যা বলতে থাকে তারা, যত পরিসংখ্যান দেয় সব মিথ্যা।’
এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘এদেশের মানুষকে জেগে উঠতে হবে। আজকে খুব আশা পাচ্ছি আশান্বিত হচ্ছি এখানে যাদের দেখতে পাচ্ছি অধিকাংশই তরুণ। যুবক-তরুণ ছাত্রদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, তাদের নেতৃত্বে এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করতে হবে।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক মাহতাব হোসেন, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি ইউনুস মৃধা ও মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম নকি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এছাড়াও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম, আলিম হোসেন, কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ, লায়ন মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার, এম জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুর রাজি, যুবদল মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলা শাহিন, ছাত্রদল মহানগর পূর্বের সভাপতি এনামুল হক এনাম, সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মানিক ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেত্রী নাদিয়া পাঠান পাপন প্রমুখ।