আ.লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না তাই আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলি
নির্বাচন কমিশন সরকারের ‘বংশবদ ক্রীড়ানক’ হিসেবে কাজ করছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘মধ্যবর্তী নয়, ফ্রেশ নির্বাচনের’ দাবি জানিয়েছেন।
‘কেনও মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে না’- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘আমরা তো একথা (মধ্যবর্তী) এখনও বলিনি। আমরা গত নির্বাচন যেটা হয়েছে সেটাই তো মানছি না, আমরা ওইটাকে অবৈধ বলছি, আমরা ওইটাকে বাতিল করার কথা বলছি। আপনারা দেখেন, আমাদের প্রত্যেকটা স্টেটমেন্টে একথা বলেছি যে, ২০১৮ সালের নির্বাচন আমরা মানি না, এই নির্বাচন বাতিল করে ফ্রেশ নির্বাচন দেয়া হোক।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মধ্যবর্তী-টড্ডবর্তী নির্বাচনের কথা আমরা তো বলিনি ভাই। যখন বলব তখন দল থেকে বলা হবে তখন অবশ্যই বলা হবে। এখন ব্যক্তিগতভাবে কেউ কিছু বললে, যারা সিভিল সোসাইটিতে আছেন তাদের মধ্যে কেউ বলতে পারেন- দ্যাট ইজ দ্যায়ার অপিনিয়ন। আমরা বিশ্বাস করি যে, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। যে কারণে আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলে এসেছি, এটাতে আমরা বিশ্বাস করি।’
গতকাল রবিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
পাবনা-৪, ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনের অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনের ভোট নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিনটি উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের মতোই ত্রাস সৃষ্টি করে এবং ভোট ডাকাতি করে জাল ভোট মেরে বিরোধী দলের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে জোর করে বের করে দিয়ে ভোট ছিনতাই করেছে। নির্বাচন কমিশন নির্বিকার দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। রিটার্নিং অফিসার ধানের শীষের প্রার্থীদের অভিযোগ গ্রহণ করেননি।’
তিনি বলেন, ‘গতকালকে অবলীয়লায় মিথ্যা কথা বলেছেন চিফ ইলেকশন কমিশনার (সিইসি)। কোনও অভিযোগ নাকি তারা পান নাই। ঢাকা থেকেই ১৬২টা অভিযোগ দেয়া হয়েছে। বিনা ভোটের স্বঘোষিত সরকার একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য ভোট ডাকাতির কৌশলে জনগণকে আবারও প্রতারিত করলো। অযোগ্য এবং সরকারের বশংবদ নির্বাচন কমিশন ক্রীড়ানকের থেকে এই ভূমিকা পালন করছে।’
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘এই অবৈধ সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দেশে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে একদিকে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও দুঃশানন অন্যদিকে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে ফ্যাসিস্ট রাজত্ব কায়েম করেছে। সুপরিকল্পিভাবে নির্বাচন কমিশন জনগণকে ভোটাধিকার বঞ্চিত করে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
এসময় সদ্য শেষ হওয়া উপনির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল বাতিল ও পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে ২ দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আগামী ১৯ অক্টোবর সারা দেশে মহানগর ও জেলায় এবং ২০ অক্টোবর থানা-উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ।
পাবনা-৪, ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ উপনির্বাচনে ক্ষমতাসী দল ও সরকারের প্রশাসনের ভোট কারচুপির ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের মারধর করে বের করে ওরা (ক্ষমতাসীন) জাল ভোট দিয়ে ভোট ডাকাতি করেছে, ত্রাস সৃষ্টি করেছে। নির্বাচন কমিশন ইভিএম দিয়ে ভুয়া ফলাফল তৈরি করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করেছে।’
‘আমরা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করেছি এবং সেই নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি’- বলেন মির্জা ফখরুল।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে গত শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত তুলে ধরা হয়।
‘সিন্ডিকেটে নিত্যপণ্যে দাম বাড়ছে’
চাল-ডাল-পেঁয়াজ-আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারি দলের মদদপুষ্ট এক শ্রেণির ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা ও দুর্নীতির কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে। একদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মসংস্থানের অভাব অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊধ্বগতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে ফেলেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির রাশ টেনে ধরতে সরকারের ব্যর্থতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে স্থায়ী কমিটি।’
‘পুলিশের ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ লোক দেখানো’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সারাদেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি প্রতিরোধে সরকারের চরম ব্যর্থতা সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংযোজন –সমস্যার একমাত্র সমাধান নয়। ধর্ষকদের সরকারি দলের প্রশ্রয় অথবা ধর্ষক সরকারি দলের সদস্য বলে কোনও বিচার হয় না।’
‘গতকাল ধর্ষণবিরোধী লং মার্চে আন্দোলনকারীদের ওপর ফেনীতে পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলা প্রমাণ করেছে যে, পুলিশ গতকাল সারাদেশে যে ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ করেছে তা শুধুমাত্র লোক দেখানো। প্রকৃত অর্থে সরকারের সদিচ্ছার অভাব ও ব্যর্থতাই ধর্ষণের মতো অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচারের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করার দাবিও জানান তিনি।
‘জিডিপিসহ অর্থনীতির উন্নূয়ন শুভঙ্করের ফাঁকি’
মির্জা ফখরুল বলেল, ‘আইএমএফের যে রিপোর্ট আমরা দেখছি ভারতের জিডিপি ১০% কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের জিডিপি বেশি করে দেখানো, বাংলাদেশে অর্থনীতি এতো চমৎকার ইকনোমি দেখানো – একটা সাকসেসফুল দেখানো হচ্ছে। এর পেছনে আরো অনেক উদ্দেশ্য আছে।’
‘প্রথম থেকে বাংলাদেশকে বলা হয়েছে রোল মডেল। আপনারা দেখবেন যে, একটা বিশেষ মহল জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এই রোল মডেলের কথা বলছে, এটা প্রচার করছে। যেখানে বাংলাদেশের মানুষের চাকরি নেই, বেকারত্ব, যে হারে বেকারত্ব বেড়েছে, শিক্ষিত ছেলে-পেলেদের চাকরি নেই। সেক্ষেত্রে রোল মডেল কিভাবে বলবেন? কোন শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে’- বলেন ফখরুল।
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি জারির এবং গত রাতে যশোরে দলের স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য তরিকুল ইসলামের বাসভবন, জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ জেলা নেতাদের বাসায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলা ঘটনার নিন্দা জানান ফখরুল। যশোরের ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতিকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিও জানান তিনি।