শুধু আইন করলেই হবে না উৎস বন্ধ করতে হবে : নূর হোসাইন কাসেমী
ধর্ষণ ও জেনা-ব্যাভিচার প্রতিরোধে ছয় দফা দাবি আদায়ে রাজধানীতে গণমিছিল করেছে সমমনা ইসলামীদলসমূহ। আজ শুক্রবার বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে মিছিল শুরু হয়ে বিজয়নগরে গিয়ে পুলিশি বাধায় শেষ হয়।
সেখানে এক সমাবেশে সভাপতির বক্তৃতায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, ধর্ষণ-নির্যাতন বন্ধে শুধু আইন করলেই হবে না আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। জেনা, ব্যাভিচার, ধর্ষণের উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশে একদিকে করোনাভাইরাসের আক্রমনে অন্যদিকে মা-বেনদের ইজ্জত-আব্রু লুণ্ঠিত হচ্ছে। হায়েনার মতো নারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে, হত্যা নির্যাতন করা হচ্ছে। ধর্ষণের উৎস পশ্চিমা নগ্নতা, বেহায়াপনা বন্ধ না হলে ধর্ষণ বন্ধ হবে না। পশ্চিমা সংস্কৃতির কারণে সমাজ থেকে লজ্জা-শরম উঠে যাচ্ছে। অপসংস্কৃতিক আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। শিক্ষানীতি ও পাঠ্যসূচিকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সাজাতে হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রচার সম্পাদক মাওলানা ফয়সল আহমদের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তৃতা করেন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির ড. মোহাম্মদ ঈশা সাহেদী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদী, মুসলিম লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা তোফাজ্জল হোসনে মিয়াজী, মাওলানা আজিজুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা এনামুল হক মুসা, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের মহাসচিব ড. মোস্তফা তারেকুল হাসান, খেলাফত আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব মাওলানা ফিরোজ আশরাফী প্রমুখ।
ড. মোহাম্মদ ঈশা সাহেদী বলেন, সারাদেশে যখন জেনা-ব্যভিচারের উৎসব চলছিলো সরকার তখন নিরব ছিলো। কিন্তু সারাদেশে মানুষ ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলো তখন ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আইন করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে জেনা-ব্যাভিচার সম্পর্কে কোনো কথা বলা হয়নি। যদিও কুরআনে জেনা-ব্যাভিচারের কঠিন শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের আইনে জনগণ সন্তুষ্ট নয়। জেনা-ব্যাভিচার, ধর্ষণ বন্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন করতে হবে।
মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, সমমনা দলসমূহের আজকের গণমিছিল প্রমান করে ধর্ষণ ও জেনা-ব্যভিচার প্রতিরোধে সমমনা ইসলামী দলসমূহের ৬ দফা দাবী সরকারকে মানতে হবে। সমমনা দল ঘোষিত দফাগুলো হচ্ছে- ১। জিনা, ব্যাভিচার ও ধর্ষণ প্রতিরোধে জনসম্মুখে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ২. পর্ণোগ্রাফির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৩. মাদকদ্রব্যের অবাধ প্রাপ্তি ও ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ৪. নারীর অশ্লীল উপস্থাপনা ও পণ্য হিসাবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ৫. আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ এবং বিচার কাজকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখতে হবে এবং ৬. নারীর মর্যাদা এবং অধিকার সংরক্ষণে কুরআন-হাদীসের শিক্ষাসমূহ জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনভাইরাসের মতো সারাদেশে ধর্ষণের মহামারি ছড়িয়ে পরেছে। ধর্ষণ বন্ধে শুধু মৃত্যুদণ্ডের আইন করলেই হবে না, তার সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। বিচার দ্রুত করতে হবে। বেয়াপনা, পর্নোগ্রাফি, মাদকদ্রব্যের সয়লাব বন্ধ করতে হবে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ধর্ষণের শাস্তি প্রকাশ্যে ও জনসম্মুখে দিতে হবে। ধর্ষণের উৎসগুলো বন্ধ করেতে হবে। নারীকে অশ্লীলভাবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। মাদকের অবাধ সরবারহ ও প্রাপ্তি বন্ধ করতে হবে। যারা বিলবোর্ড, টিভি, সিনেমার পর্দায় নারীকে পণ্য হিসেব ব্যবহার করে তারা মাতৃজাতির কলঙ্ক করছে। আজকে ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করে সিনেমা হল খুলে দেয়া হচ্ছে। যদি ওয়াজ মাহফিল, কুরআনের মাহফিল বন্ধের ষড়যন্ত্রর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে।
মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদী, ময়মনসিংহে নারীর যে অশ্লীল মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে অবিলম্বে তা সরিয়ে নিতে হবে। তা নাহলে ময়মনসিংহের অশ্লীল মূর্তি অপসারণে ময়মনসিংহ অভিমুখে লংমার্চ করা হবে।