ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রতিরোধে ৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট

0

ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রতিরোধে ৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন রিট আবেদনকারীর আইনজীবী এমাদুল হক বসির। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পী। পরে সারোয়ার হোসেন বাপ্পী সাংবাদিকদের বলেন, আদালত ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রতিরোধে ৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। একইসঙ্গে, আদেশ বাস্তবায়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, মহা-কারাপরিদর্শক ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বলা হয়েছে। রায় ও আদেশটি প্রত্যেক দায়রা জজ ও মেট্রোপলিটন দায়রা জজ, সব ট্রাইব্যুনাল, বিশেষ জজ আদালতের বিচারক, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের অবগত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এর আগে গত বছরের ৩০শে অক্টোবর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কৃষি বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার মো. আওলাদ হোসেনকে কোনো থানায় কোনো মামলা না থাকলেও প্রথমে কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের নামে ভুয়া পরোয়ানায় আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে একই মামলার ভুয়া পরোয়ানায় রাজশাহী, বাগেরহাটের আদালত, কারাগার হয়ে শেরপুর কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। কিন্তু কোনো আদালতেই মামলার কোনো নথি পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় গত বছরের  ৯ই ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ আদেশ দেন। একইসঙ্গে তাকে ভুয়া পরোয়ানায় জড়ানোর ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আর কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না থাকলে, যাচাই সাপেক্ষে তার মুক্তির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। আওলাদের বিরুদ্ধে আর কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না থাকায় চলতি বছরের ৬ই জানুয়ারি তাকে মুক্তি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। মুক্তি পেয়ে আওলাদ ১৫ই জানুয়ারি আদালতে হাজির হন। আদালত ৯ই মার্চ পরবর্তী আদেশের জন্য রাখেন। এর মধ্যে সিআইডি ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করে। চারজনের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিসহ গত ৯ই মার্চ ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে সিআইডি তদন্ত প্রতিবেদন দেয় আদালতে। এরপর গতকাল রুল শুনানির জন্য উঠলে শুনানি না করে ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে ৭ দফা নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত।
হাইকোটের ৭ দফা নির্দেশনা
১. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রস্তুতকারী ব্যক্তিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৭৫-এর বিধান অনুয়ায়ী নির্ধারিত ফরম সঠিক ও সুস্পষ্টভাবে পূরণ করতে হবে।
ক. যে ব্যক্তি বা যে সকল ব্যক্তি পরোয়ানা কার্যকর করবেন, তার বা তাদের নাম, পদবি ও ঠিকানা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
খ. যার প্রতি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে অর্থাৎ তার নাম ও ঠিকানা এজাহার/নালিশি মামলা কিংবা অভিযোগপত্রে বর্ণিত মতে সংশ্লিষ্ট মামলার নম্বর ও ধারা (এক্ষেত্রে জিআর/নালিশি মামলার নম্বর) এবং ক্ষেত্রমতে আদালতের মামলার নম্বর ও ধারা সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
গ. সংশ্লিষ্ট জজ বা ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরের নিচে নাম ও পদবির সিলসহ সংশ্লিষ্ট আদালতের সুস্পষ্ট সিল ব্যবহার করতে হবে।
ঘ. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রস্তুতকারী ব্যক্তির (অফিস স্টাফ) নাম, পদবি ও মোবাইল নম্বরসহ সিল ও তার সংক্ষিপ্ত স্বাক্ষর ব্যবহার করতে হবে; যাতে পরোয়ানা কার্যকরকারী ব্যক্তি পরোয়ানার সঠিকতা সম্পর্কে কোনো সন্দেহের উদ্বেগ হলে পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে নিশ্চিত হতে পারেন।
২. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রস্তুত হলে স্থানীয় অধিক্ষেত্র কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট পিয়ন বহিতে তা এন্ট্রি করে বার্তাবাহকের মাধ্যমে পুলিশ সুপারের কার্যালয় কিংবা সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠাতে হবে। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের বা থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পিয়ন বহিতে স্বাক্ষর করে তা বুঝে নিতে হবে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রেরণ ও কার্যকর করার জন্য পর্যায়ক্রমে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার কাজে লাগানো যেতে পারে।
৩. স্থানীয় অধিক্ষেত্রের বাইরের জেলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার ক্ষেত্রে পরোয়ানা জারি করা কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সিলগালা করে এবং অফিসের সিলমোহরের ছাপ দিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠাতে হবে।
৪. সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকতা সিলমোহরের ছাপ দেয়া খাম খুলে প্রাপ্ত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। তবে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ক্ষেত্রে সন্দেহ হলে পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
৫. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরকরণের জন্য পরোয়ানা গ্রহণকারী কর্মকর্তা পরোয়ানা কার্যকর করার আগে পুনরায় পরীক্ষা করে যদি কোনোরূপ সন্দেহ পোষণ করেন, তবে পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়ে পরোয়ানা কার্যকর করবেন।
৬. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুযায়ী আসামি বা আসামিদের গ্রেপ্তারের পর সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিকটস্থ আদালতে পরোয়ানাসহ হাজির করতে হবে। এবং ম্যাজিস্ট্রেট বা জজ গ্রেপ্তার করা আসামি বা আসামিদের জামিন না দিলে আদেশের অনুলিপিসহ জেলহাজতে পাঠাতে হবে। প্রয়োজনে সম্পূরক নথি তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা আদালতে পাঠাতে হবে।
৭. সংশ্লিষ্ট আসামি বা আসামিদের কোন্‌ থানার কোন্‌ মামলায়, কোন্‌ আদালতের আদেশে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট জেলসুপার কিংবা অন্য কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিকারী আদালতকে জানাবেন। পরবর্তীতে আর কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেলে তা নিশ্চিত হয়ে কার্যকর করবেন জেলসুপার।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com