প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন হলেই উনি ক্ষমতা হারাবেন: জাফরুল্লাহ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে জনগণের কাছে ‘আমি ফাঁসি এনেছি’ স্লোগান নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সরকারপ্রধানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে শুধু খারাপ কাজ করেছেন তা নয়, তিনি ভালো কাজও করেছেন। তাহলে একটা মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে দেখেন না। আর জনগণের কাছে গিয়ে বলবেন- ‘আমি ফাঁসি এনেছি’। এই ফাঁসির পক্ষে জনগণ যদি আপনাকে ভোট দেয় তাহলে মনে করবো আমরা ভুল ছিলাম। আপনি সঠিক ছিলেন।’
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু উনি (প্রধানমন্ত্রী) জানেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন হলেই উনি ক্ষমতা হারাবেন। জনগণ নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। জনগণ যদি নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাহলে দেশ কল্যাণকর হবে। যে জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম সেই সোনার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে।’
মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয় স্মরণ মঞ্চের উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল স্মরণে নাগরিক শোক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংশোধিত আইন প্রসঙ্গে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নয়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেন। তাহলে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘কয়েকদিন যাবত আমরা দেখছি ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। হঠাৎ করে মানুষ এতো খারাপ হয়ে গেল? না। দেশে অনাচার থাকলে, দুর্নীতি থাকলে, সুশাসনের অভাব থাকলে এসব হয়। এসব জিনিস নিজে থেকে ঘটছে, তা না। এটা ভারত উপলক্ষ সৃষ্টি করছে। যাতে আমাদের এখানে তারা হস্তক্ষেপ করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘দেখেন কত দ্রুত সরকার একটা আইন করে ফেললো। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ‘ফাঁসি’। এটা কোনও উত্তর হতে পারে না। এটা শুধুমাত্র ড্রাইভেশন, একটা পথকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়া। আসলে এর প্রতিকার কী? এর প্রতিকার হল ন্যায়বিচার। আর এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভুল কাজ করছে। ফাঁসি অত্যন্ত একটি ভুল কাজ। এরচেয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেন। ন্যায়বিচার কোনও কঠিন কাজ না। দ্রুত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করলে ১৫ দিন বা ৭ দিনের মধ্যেই যারা ধর্ষক তাদের ৮০ পার্সেন্ট ধরা পড়ে যাবে। তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠন করে বিচার করেন। আর যারা ধরা পড়বে না তাদের জন্য আলাদা মামলা করেন। তাহলে দেখবেন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।’
গণস্বাস্থ্যে কেন্দ্রের এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘২০১৮ সালে দিনের নির্বাচন রাতে হয়েছিল। সেই নির্বাচনের পরে বিএনপির ৭০ জন প্রার্থী মামলা করেছিল। সেই মামলার জন্য একদিনও কোর্ট বসেনি। বিচারপতিরা তাদের বিবেকের কাছে এর জবাব কী দেবেন? কিন্তু তাদের কাজ হলো অপরাধীদের মুক্তি দিয়ে দেয়া। আর যারা নির্দোষ তাদেরকে আটক করে রাখা এবং কোর্টের বারান্দায় বারান্দায় ঘোরানো।’
বিরোধী দলের সকল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আপনারা রাস্তায় নামুন। আমি হাঁটতে পারি না। আপনাদের সাথে চলতে না পারলেও আপনাদের পেছনে পেছনে থাকবো।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ঘরে বসে আজান দিলে কেউ শুনবে না। সত্যিকারের ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন। আমরা আপনাকে সম্মান করবো। বঙ্গবন্ধু যে ভুল করেছিলেন আপনি সে ভুল করবেন না। বঙ্গবন্ধুর অনেক গুণ ছিল, কিন্তু অন্যের কথায় বাকশাল কায়েম করেছিলেন। সিরাজ সিকদারকে হারিয়েছিল। তাই ন্যায়ের পথে চলেন। দেশে কোনও কিছু ঘটলে তার জন্য কিন্তু জনগণ দায়ী থাকবে না।’
সংগঠনের সহ-সভাপতি লায়ন আলামীনের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি চেয়ারপারসন উপদেষ্টা কবি আবদুল হাই শিকদার, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি উলফাত আজিজ, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, গণস্বাস্থ্যের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, লেখক এস এম নজরুল ইসলাম ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল ইসলাম প্রমুখ।