দেশে পাক বাহিনী না আসলেও তাদের প্রেতাত্মা আ.লীগ আছে, ফলে দেশে নারী শিশু বৃদ্ধা ধর্ষিত হচ্ছে: গয়েশ্বর
দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে ১৭ অক্টোবর আসন্ন ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোটারদের ‘ভোটে জবাব’ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘কেন্দ্রে যাওয়ার পর যদি ভোটারদের ভোট দিতে না দেয়া হয় তাহলে ১৭ তারিখ রাত ১২টা থেকে ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-সিলেট রুটে কোনও গাড়ি চলবে না। ১৭ তারিখের নির্বাচনে কোনও তালবাহানা মানা হবে না।’
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘অতীতে অনেক অপকর্ম করে হজম করলেও এবার বদহজম হবে। আন্দোলন ছাড়া কোনও পথ নাই। ভদ্র ভাষায় কথা বললে তারা বুঝে না। গণতন্ত্রের ভাষা তারা বুঝে না। মানবতাবোধ বলতে তাদের কিছু নেই। তারা পুলিশের ওপর ভর করে টিকে আছে।’
রবিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর ডেমরার সারুলিয়া এলাকায় ঢাকা-৫ এর উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদের নির্বাচনী মিছিলপূর্ব এক বিশাল পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে বেলা ১১টায় পথসভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ১০টা থেকে ঢাকা-৫ এর নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সভাস্থলে আসতে থাকেন দলীয় নেতাকর্মীরা। পরে পথসভা শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে অর্ধশত মোটরসাইকেলসহ নির্বাচনী র্যালিতে অংশ নেয় কয়েক হাজার নেতাকর্মী। এসময় র্যালির সামনে পেছনে পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেল নিয়ে তারা র্যালির নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। র্যালিটি সারুলিয়া রানীমহল সিনেমা হল থেকে শুরু হয়ে ডাগাইর, পশ্চিম ডগাইর, কোনাপাড়া, মাতুয়াল কবরস্থানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শনিরআখরা মৃধাবাড়ি এলাকায় এসে শেষ হয়। এসময় র্যালিতে থাকা কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন প্রকার সরকারবিরোধী ও ধানের শীষে ভোট চেয়ে স্লোগান দেন। নেতাকর্মীদের স্লোগানে পুরো এলাকা তখন মুখরিত হয়ে উঠে।
‘এ সরকার নানা রোগে রোগাক্রান্ত, তবে তাদের হজমশক্তি বেশি’ মন্তব্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘পিলখানার ৫৬ জন চৌকস সামরিক কর্মকর্তা জীবন দিলো, এটাও সরকার হজম করে ফেলেছে। শেয়ার মার্কেট থেকে ৮৬ হাজার কোটি টাকাও হজম করে ফেলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৬০০ কোটি টাকা, সেটাও হজম। খুন, গুম, নারী ধর্ষণ এরকম হাজার বিষয় হজম করেছে। সরকারের হজম শক্তিটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে আমি সরকারকে বলবো- ১৭ তারিখের নির্বাচনে তালবাহানা করলে কিন্তু বদহজম শুরু হবে। তখন কিন্তু হাসপাতালে নিতে হবে সরকারকে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘১৯৭০ এর নির্বাচনে ভোটের ফলাফল না মানার কারণে আমরা যদি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করতে পারি, যদি আমার মায়ের সম্ভ্রম নষ্ট হতে পারে, যদি আমার পাশ থেকে আমার ভাই শহীদ হয়, তবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে পাক বাহিনী যে কাণ্ডটা করেছে সেটা কি আজও দেখতে চাই? প্রশ্ন জাগতে পারে, এখানে পাক বাহিনী আসলো কোথা থেকে? পাক বাহিনী না আসলেও তাদের প্রেতাত্মা আসছে। ফলে নারী ধর্ষণ হচ্ছে, শিশু ধর্ষণ হচ্ছে।’
গয়েশ্বর বলেন, ‘পাকিস্তানিরাও কিন্তু ৯ মাস যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত নষ্ট করেছে। কিন্তু আমাদের ছোট ছোট শিশুদের বা ৭০ বছরের বৃদ্ধাদের সম্ভ্রমহানি করেছে এমন সংবাদ আমরা পাইনি। এখন ৯ থেকে ৯০, কারো রেহাই নাই। ৭১ এ যুদ্ধকালীন সময়ে পাক বাহিনীর যে বর্বরতা ছিলো তার চাইতেও কিন্তু কঠিন বর্বরতা চলছে এখন। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই আমরা সেটা দেখতে পাই।’
এসময় নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের উদ্দেশ্যে উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘১৭ তারিখ ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থেকে আপনাদের ভোট আপনারা দিবেন। এই সরকার আপনাদের ভোট হরণ করেছিলো। আর সেটা করার পেছনে কারণ একটাই, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। তাই আপনাদের হরণকৃত ভোট আমরা আবার প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আগামী ১৭ তারিখের নির্বাচনে আমাদের সাংবিধানিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ভোটের মাধ্যমে ফেরাতে হবে। ‘আমার ভোট আমি দিবো, যাকে খুশি তাকে দিবো’- এ অধিকারকে আমরা ১৭ তারিখ প্রতিষ্ঠিত করবো।’
ধানের শীষের এই প্রার্থী বলেন, ‘আমরা যখনই কোনো কিছু করি নির্বাচন কমিশন তখনই আমাদের বাধা দেয়। অথচ আমার প্রতিপক্ষকে (আওয়ামী লীগ প্রার্থী) কোনও বাধা দেয় না। আমি নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করবো, একটা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করেন। আপনাদেরতো কোনও ক্ষতি হবে না। দয়া করে ১৭ তারিখ সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক অধিকার, আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আমি নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যদি এই নির্বাচনে কোনও কারচুপি করার চেষ্টা করা হয় তাহলে এখান থেকেই এ সরকার পতনের আন্দোলন ডাকা হবে এবং সে আন্দোলন এই নির্বাচন কমিশন পতনেরও আন্দোলন হবে।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘এই সরকারের উন্নয়ন হলো খুন, গুম, হত্যা ও ধর্ষণের উন্নয়ন। তাই আসুন শহীদ জিয়ার ধানের শীষে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ধানের শীষে ভোট দিয়ে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করি।’
বিএনপির আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, ‘বাংলাদেশে আপনারা এখন যে নির্বাচন দেখছেন, একে কি নির্বাচন বলে? সূর্য পশ্চিম দিকে উঠে পূর্ব দিকে অস্ত যায় এটা বিশ্বাস যোগ্য হতে পারে, যদি বঙ্গোপসাগরের পানি একরাতে শুকিয়ে যায় এটাও সম্ভব হতে পারে, তবে আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনও সম্ভব না।’
তিনি বলেন, ‘আগে ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে যেতো জনগণ, এখন যায় চতুষ্পদী প্রাণী। আগামী ১৭ অক্টোবর কোন টালবাহানা সহ্য করা হবে না। যদি নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তবে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।’