সরকার ও তার এমপি-মন্ত্রীদের যদি লজ্জা-বিবেক থাকতো তাহলে প্রতিদিন কান ধরে উঠবস করতো: রিজভী
‘বিএনপি নেতাদের ‘টপ টু বটম’ পদত্যাগ করা উচিত’- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের যদি বিবেক থাকতো যদি মানবতা থাকতো তাহলে সারা দেশে চলমান অন্যায়-অনাচারকে প্রশ্রয় দেয়ার জন্য, নারীর সম্ভ্রমহানিকারীদের প্রশ্রয় দেয়ার জন্য প্রতিদিন আপনারা কান ধরে উঠবস করতেন।’
‘সারা দেশে এত অত্যাচার, গুম-খুন, নারী নির্যাতন, নারীর সম্ভ্রমহানির ঘটনার পরও আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখ থেকে কথা বের হয় কীভাবে’- এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েও ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করেন রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘আজকের প্রত্যেকটা ঘটনার সাথে সরকারের অঙ্গ সংগঠন জড়িত। প্রতিদিন তাদের নাম আসছে। ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদ আপনাদের টনক নড়ে না? উল্টো আপনারা বলেন, বিএনপির ‘টপ টু বটম’ পদত্যাগ করা উচিত। আরে আপনাদের বিবেক-মানবতা থাকলে তো প্রতিদিন কান ধরে উঠবস করতেন।’
গতকাল শুক্রবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে দেশব্যাপী অব্যাহতভাবে ধর্ষণের প্রতিবাদে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের হালচাল তুলে ধরে ক্ষমতাসীন দলেন নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আজকে দেশে ভয়ঙ্কর নৈরাজ্য চলছে। কেউ ন্যূনতম নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে না, কারো কোনো নিরাপত্তা থাকবে না, মানুষ রাস্তা দিয়ে নিরাপদে হেঁটে যেতে পারবে না, বাজার করতে গেলে রাস্তা থেকে টাকা কেড়ে নেয়া হবে। মানুষের লাশ পড়ে থাকবে ফুটপাতে আর রাস্তায়, এটাই হচ্ছে নৈরাজ্য। ফরাসি বিপ্লবের সময় বলা হয়েছিল- ‘রেনডম টেরর’, অর্থাৎ ত্রাসের রাজত্ব। সেই ত্রাসের রাজত্ব এখন বাংলাদেশে কায়েম হয়েছে।’
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা বলেছেন, ‘আমরা করোনার চাইতেও শক্তিশালী’। আজকের সংবাদপত্রের রিপোর্ট হচ্ছে বাংলাদেশের পৌনে ৪ লক্ষ লোক করোনায় আক্রান্ত। এত অহমিকা! তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব মোকাবিলা করে ফেলেছেন’। গতকাল সাহিত্যে এ বছরের নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন নারী কবি (লুইস গ্লাক)। তাঁর একটি কবিতা পড়ছিলাম। বাংলাদেশের মন্ত্রীদের কথার সাথে যেন মিলে যায়। তার কবিতার প্রথম লাইনের অর্থ হচ্ছে, কেউ টিকে থাকবে না, এমনকি গ্রিক বীর একিভিসও নয়। অথচ যে গ্রিককে মানুষ মনে করত ঈশ্বরের কাছাকাছি। তাই আমি সরকারকে বলি- আপনারাও টিকে থাকবেন না, টিকে থাকার কোনও কারণও নেই। আপনাদের মন্ত্রীরা যারা আস্ফালন করছেন সেই আস্ফালন একটি বিয়োগান্তক পরিণতির দিকে চলে যেতে পারে। ক্ষমতা হারিয়ে পথে-ঘাটে বসতে হতে পারে।’
ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘কাদের সাহেব বলেছেন, ‘বিএনপির ‘টপ টু বটম’ পদত্যাগ করা উচিত। ওবায়দুল কাদের সাহেব- আজকে রিফাতের কান্না, ফেনীর নুসরাতের কান্না, নারায়ণগঞ্জের ত্বকীর কান্না, সিরাজগঞ্জের রুপার কান্না, সিলেটের এমসি কলেজে ধর্ষিত নববধূর কান্না; তার চাইতেও মর্মান্তিক ভয়ঙ্কর বেগমগঞ্জের একলাশপুরের সেই নারীর কান্না, যে নারী তার লজ্জা নিবারণের জন্য হাতের সামনে কাঁথা চাদর যা সামনে পেয়েছেন সেটাই আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সম্ভ্রমহানিকারীরা তাকে সেই সুযোগটুকুও দেয়নি- সেইসব মানুষের কান্না কান পেতে শুনুন। এসব বীভৎসতার বর্ণনার কোনও ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় না, এগুলোকে কী বলে অভিহিত করব?’
রিজভী বলেন, ‘সরকার এত শক্তিশালী? এই তাদের শক্তির নমুনা? তারা শক্তিশালী তাদের জন্যই যারাই দুষ্কর্ম করছে অনাচার করছে। সেই দুষ্কর্মকারীদের পৃষ্ঠপোষক সরকার। সরকার যে পৃষ্ঠপোষক তার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। ২০০৯ অথবা ২০১০ সালে নাটোরের বড়াইগ্রামের উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন বাবুকে যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতারা হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্য করেছিল। এতদিন অতিবাহিত হয়ে গেল সেই মামলার চার্জশিট দেয়া হয়নি। কারণ ওই হত্যাকারীদের বাঁচাতে চায় সরকার। কারণ ওরা তার দলের লোক।’
তিনি বলেন, ‘আজকে সরকার চারদিক থেকে ব্যর্থ, এই ব্যর্থতা ঢাকার জন্য তারা জনগণের দৃষ্টিকে একেক সময় একেক দিকে নিয়ে যায়। পানি বলেন বিদ্যুৎ বলেন প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে নৈরাজ্য চলছে। কত ভয়ঙ্কর ঘটনা সমাজে ঘটছে, মানুষের ওপর এত উৎপীড়ন-নিপীড়ন-নির্যাতন হচ্ছে সেই নিপীড়ন-নির্যাতন ঢাকার জন্য একটার পর একটা ঘটনার জন্ম হচ্ছে। প্রত্যেকটি ঘটনার সাথে সরকারি দলের লোকেরা জড়িত। এগুলোতো বানিয়ে বলা কথা না, এগুলো ঘটে যাওয়া সত্য থেকে বলা।’
রিজভী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘এত অনাচার নির্যাতনের পরও আওয়ামী লীগ নেতাদের গলা থেকে কথা বের হয় কীভাবে? তারা লাজলজ্জার পোশাক নদীতে ফেলে দিয়েছেন, তারা নিজেরাই সমস্ত লাজলজ্জা বিসর্জন দিয়েছেন বলেই আজকে এই অপরাধী দুষ্কৃতিকারীরা এই সম্ভ্রমহানিকারীরা এই নির্যাতনকারীরা এই হত্যাকারীরা এই সন্ত্রাসীরা লালিত পালিত হয়েছে রাষ্ট্রের প্রশ্রয়ে। না হলে কেউ কি বলে ‘একটা মারলে তোমরা দশটা মারো’। আজকে যিনি রাষ্ট্রের প্রধান (শেখ হাসিনা) তিনিই তো বলেছিলেন- ‘তোমরা কি চুড়ি পরে থাকো, একটা মারলে দশটা মারো’। এই ধরনের কথা যখন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ জায়গা থেকে বলা হয় তখন দেশের সমস্ত দুষ্কৃতিকারীই আওয়ামী লীগে যোগদান করে। তাদের কারণেই আজকে জনপদের পর জনপদ মা-বোনের আর্তচিৎকারে আকাশ বাতাস একেবারে ভারি হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল যে প্রতিবাদ করছেন এই প্রতিবাদ থামলে হবে না, এই প্রতিবাদ আরও বেশি ছড়িয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে দাঁড়াতে হবে। শুধু প্রতিবাদ নয়, প্রতিরোধ গড়তে হবে এবং ব্যাড়িকেডের সময় এসেছে। এই ব্যাড়িকেড জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আগেই তৈরি করবেন, ইনশাল্লাহ।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহিলা দলের নেত্রী শাম্মী আক্তার, নিলুফা ইয়াসমিন মনি ও আরিফা সুলতানা রুমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।