আ.লীগ বিনাভোটে যে সরকার তৈরি করেছেন, সেই সরকারের সঙ্গে জনগণের কোনও সম্পর্ক নেই: বিএনপি
দেশের জনগণের ওপর সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে সরকার ক্ষমতা দখল করেছে। সরকারকে এখন মানুষ ভয় পায় না। মানুষ ভয় পায় পুলিশকে। পুলিশ তো এখন আওয়ামী লীগ সরকারকে বলে- ‘দেশের মালিক আমরা’। তাহলে সরকার কিভাবে পুলিশকে বলবে- দেশে চলমান ধর্ষণ-গণধর্ষণ, নারী নির্যাতন, অন্যায়-অবিচার, মাদক কারবারি নিয়ন্ত্রণ করতে। কারণ সরকারের লোকেরাই তো এসব অন্যায়-অপকর্মের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি জড়িত।’
‘সরকার শুধু নারী নির্যাতন নয়, গোটা বাংলাদেশকে ধর্ষণ করেছে’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের এ আন্দোলন কর্মসূচি প্রেসক্লাবের সামনে শুধু সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। সারাদেশে আমাদের এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ শুধু নারী ও শিশুদের রক্ষার জন্য নয়, নিজেদের অধিকার ও দেশকে রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এ দেশের মানুষ কখনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না। বাংলাদেশের মানুষ কখনও অত্যাচারী স্বৈরাচারী সরকারের কাছে মাথা নত করেনি। ইতিহাস কথা বলে। দেশের মানুষ বারবার স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে। যুবারা, তরুণরা গণতন্ত্রের জন্য আজীবন লড়াই করেছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত এক মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে জাতি মহাসঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। এই সংকট তাদের অস্তিত্বের সংকট। এই সংকট এদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ধ্বংস করে দেয়ার সংকট। আমরা অনেক আগেই লড়াই শুরু করেছিলাম আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। আমাদের মা-বোনেরা সেই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আমরা দেখেছি ব্রিটিশ আমলে নারীরা কিভাবে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আমাদের দেশেও এর অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। অতীতেও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমাদের দেশের নারীরা, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা লড়াই করেছেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে অনেক নারী আছেন যারা লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, তাদের সম্ভ্রমহানি হয়েছে কিন্তু তারা কখনও মাথা নত করেননি। এই যে শুরু থেকেই লড়াই করছেন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। একজন নারী হয়েও তিনি লড়াই করছেন এদেশের মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য। আমি বিশ্বাস করি, এ লড়াইয়ে আমরা জয়ী হবো। আমাদের এই লড়াইয়ে পরাজিত হবে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচার সরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখলাম, জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশের যে নারী নির্যাতনের হার বেড়ে গেছে, বাংলাদেশের ধর্ষণের সংখ্যা বেড়ে গেছে, সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি একটা স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। তার এই স্টেটমেন্টে বাংলাদেশের মানুষের সম্মান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এই স্টেটমেন্টে দেশের মানুষের শান্তি ও সম্মান নষ্ট হয়ে গেল।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই ধর্ষণের দায় তারা এড়াতে পারেন না। আমি বলি কি, তারা যে সরকার তৈরি করেছেন, এই সরকারের সঙ্গে জনগণের কোনও সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করে যে অধিকার অর্জন করেছে আপনারাও গায়ের জোরে, বন্দুক ধরে, আগের রাতে ভোট চুরি করে, সে অধিকার হরণ করেছেন। ন্যূনতম যে গণতান্ত্রিক অধিকার সে অধিকার বাংলাদেশের মানুষের নেই। এই সরকারের বিরুদ্ধে একটা কথা বললেও জেল হয়। সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে। সরকারের বিরুদ্ধে যে কিছু একটা বলতে চায়, তাকেই ধরে নিয়ে কারাগারে ঢুকিয়ে দেয়া হয়।’
টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা নিয়ে হলো কী? কিছুই হলো না। কয়েক দিন পত্রপত্রিকায় লেখা হলো। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রধান একসঙ্গে বৈঠক করলেন। তারা বললেন, ‘এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা’। বিষয়টাকে হালকা করে দেয়া হলো। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা তো মনে করল যে, আমরা বিচারের বাইরে চলে গেছি। দেশের মানুষকে অধিকার দিয়েছে যে সংবিধান সেই সংবিধানকে আপনারা (সরকার) শেষ করে দিয়েছেন।’
দেশের নারীসমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমার মা-বোনদের প্রতি আহ্বান রইল, আপনাদের প্রতি যে অন্যায়-অবিচার চলছে আপনারা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আপনাদের বলতে চাই, আর ঘরে বসে থাকা নয়। তরুণদের প্রতি আহ্বান জানাবো, এদেশে যখন যতটুকুই পরিবর্তন হয়েছে তরুণরাই পরিবর্তন করেছে। এদেশে তো যা পরিবর্তন হচ্ছে ছাত্ররা এসেই তা করেছে।’
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘গত এক বছর আগে বুয়েটের এই মেধাবী শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ। নোয়াখালীতে যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তার পেছনেও আছে এই আওয়ামী লীগ। সিলেটের গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায়ও জড়িত ছাত্রলীগ। এ সরকারের কারণে এসব হচ্ছে। সরকার যে সমাজব্যবস্থা তৈরি করেছে সে সমাজে ভালো মানুষ হওয়ার উপায় নেই। যারা এদেশে গুন্ডা-বদমাশ, তারাই আপনাদের সাথে টিকে থাকবে। আর যারা এদেশের ভালো চায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে চায় তাদের ধ্বংস করে দেয় সরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সংগ্রাম শুধু বিএনপি নয়, এ সংগ্রাম সারা জাতির। এ সংগ্রামে সারা দেশের মানুষকে, দেশকে ও মা-বোনদের রক্ষা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতি, গোত্র, বর্ণ, নারী-পুরুষ সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, যে দানব সরকার আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে তাদেরকে সরানোর জন্য। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, সরকারে শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আপনারা মানুষের চোখের ভাষা বুঝুন। মনের ভাষা বুঝুন। দেশের মানুষ স্বাধীন মুক্ত বাংলাদেশ চায়। আপনারা এদেশের মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, এসব আর আপনারা করতে পারবেন না।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব ও যুবদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন ও সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।