পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই এখন আইসিইউতে: এহছানুল হক মিলন

0

করোনাভাইরাসের কারণে এ বছরের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) বা সমমানের পরীক্ষা হচ্ছে না। জেএসসি ও এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে এবার এইচএসসির রেজাল্ট নির্ধারণ করা হবে। আর এ পরীক্ষায় পাস করানো হবে সব পরীক্ষার্থীকেই। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যেও। শিক্ষাবিদদের কেউ কেউ বলছেন, অটো পাস কোনো শিক্ষায় ভালো উদ্যোগ হতে পারে না। এতে শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্য সব চলতে পারলে পরীক্ষাও নেওয়া যেত। প্রয়োজনে উপকেন্দ্র বাড়িয়ে দেওয়া যেত। চাকরির বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলেও মনে করেন তারা। আবার কেউ কেউ বলছেন, করোনাকালে ভালো সিদ্ধান্তই নিয়েছে সরকার। এজন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই। করোনাকালে অনিশ্চয়তায় থাকা পরীক্ষার্থীদের একটি সন্তোষজনক সমাধান দেওয়া হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগের ব্যবস্থায় ফিরে যেতে হবে। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কেউ কেউ করোনা পরিস্থিতিতে ঝুঁকি না নিয়ে মূল্যায়নের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। জেএসসি ও এসএসসিতে তুলনামূলক কম ফল পাওয়া কয়েক পরীক্ষার্থী জানিয়েছেন, দীর্ঘ সাত মাস তারা বাড়তি পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। এইচএসসি পরীক্ষা নিলে তারা ভালো করতেন। এ নিয়ে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও কয়েকজন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়। তারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন বলেন, মানুষের শরীরে অক্সিজেনের লেভেল ৯৫ এর নিচে এলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিতে হয়। ঠিক তেমনি এসএসসি ও জেএসসির ফলাফল মূল্যায়নের মাধ্যমে এইচএসসির রেজাল্ট নির্ধারণের সিদ্ধান্তও তাই। শিক্ষাব্যবস্থাটাকেই এখন আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হলো। অটো পাস কোনো যুক্তিতেই হতে পারে না। ১৯৭২ সালেও এমন অটো পাসের ব্যবস্থা করা হয়। তখন থেকেই শুরু হয় নকল প্রবণতা। তার খেসারত জাতি দিচ্ছে।

তিনি বলেন, যে দেশে করোনাকালীন নির্বাচন হয়, সে দেশে পরীক্ষা হতে পারবে না কেন? পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপকেন্দ্র বাড়িয়ে দিতেন। এক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে অন্য প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব দেওয়া যেত। সংসদের উপনির্বাচন হচ্ছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হচ্ছে, তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে বাধা কোথায়? বলা হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই ব্যবস্থায় তো পরীক্ষা নেওয়া হলো না। তাহলে কোথায় ডিজিটাল বাংলাদেশ? আর যদি আগের ফলাফলের মূল্যায়নেই পরীক্ষা নেন, তাহলে এপ্রিলে কেন এটা করেননি? তাহলে এই বিড়ম্বনা কেন করলেন? তাহলে উপনির্বাচনের প্রয়োজন কি? যেখানে আওয়ামী লীগ জয়ী ছিল সেটা আওয়ামী লীগকে দিয়ে দেওয়া হোক। যেখানে বিএনপি বা অন্য দলের এমপি ছিল সেখানে তাদের দল থেকেই কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা হোক। কিন্তু তা তো হচ্ছে না। তাহলে শিক্ষায় কেন অটো প্রমোশন। আজকে কি ডিজিটাল মানে অটো প্রমোশন? এ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে তো পরীক্ষা নেওয়া যেত। সরকার তো অনেক সময় পেয়েছে এ পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষাটি নেওয়া অসম্ভব ছিল না। মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে এইচএসসির ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তার বিকল্প ব্যবস্থাও ছিল। তিন ধাপে বা জোন ভাগ করে অথবা জেলাভিত্তিক গুচ্ছভাবে এ পরীক্ষা নেওয়া যেত। অনেক পরীক্ষার্থী ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে জেএসসি পরীক্ষায় বসে না। জেএসসিকে মূল্যায়ন করাকে আমার পছন্দ হয়নি। এ সিদ্ধান্তের ফলে গ্রাম পর্যায়ের পরীক্ষার্থীরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, আরও ভেবেচিন্তে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। আমি মনে করি, সরকারের এ সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য। জেএসসি ও এসএসসির ফলের ওপর ভিত্তি করে এইচএসসির মূল্যায়ন গ্রহণযোগ্য সমাধান নয়। জেএসসি পরীক্ষাই তো অপ্রয়োজনীয়। এ পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ পুরোপুরি হয় না। তাই এ পরীক্ষাকে মূল্যায়ন করা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি না। এ ছাড়া অনেক শিক্ষার্থী এসএসসির পর এইচএসসি পরীক্ষার জন্য তুলনামূলক ভালো প্রস্তুতি নেন। যারা ভালো প্রস্তুতি নিল এই শিক্ষার্থীরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানান এ শিক্ষাবিদ। তিনি আরও বলেন, সবাইকে পাস করিয়ে দেওয়া বা এই অটো পাসের কারণে এই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে চাকরির বাজারে বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। পরীক্ষার্থী ছাত্রছাত্রীরা তো করোনার কারণে ঘরে বসে নেই। তারা সবাই জনস্রোতে মিশে গেছে। তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেন পরীক্ষা নেওয়া যেত না?

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com