নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির ভিডিও ‘এক মাস পর’ প্রকাশ কেন, এটাই বিরাট প্রশ্ন: রিজভী

0

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টা ও শ্লীলতাহানির ভিডিও প্রকাশ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ঘটনার একমাস পর ভিডিও প্রকাশকে ‘বিরাট প্রশ্ন’ বলে মন্তব্য করেছেন। একইসঙ্গে এত দেরিতে ঘটনাটি প্রকাশের কারণ কী, তিনি সেই প্রশ্নও রেখেছেন।

এ ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জড়িত দাবি করে রিজভী বলেছেন, ‘মোবাইলে মোবাইলে সামাজিক মাধ্যমে যে ভিডিওটা ভাইরাল হয়েছে বিভিন্ন  সে ঘটনার সঙ্গেও কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী জড়িত। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই ঘটনাটি ঘটেছে ২ সেপ্টেম্বর, অর্থাৎ ১ মাসেরও বেশি সময় আগে। তাহলে এক মাস আগের ঘটনা কালকে কেন প্রকাশ হলো? কালকে কেন এটা ভাইরাল হল? এটা তো একটা বিরাট প্রশ্ন? এর কারণ কী?’

এসব ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাক রহিত হয়ে যায় কণ্ঠস্বর, স্তব্ধ হয়ে যায়। যাকেই জিজ্ঞেস করেছি আপনি কি এই ঘটনা দেখেছেন, সেই বলেছে ‘একটু দেখে আর দেখতে পারি নাই’। বিএনপির অনেক বড় বড় নেতাকে জিজ্ঞেস করেছি, কেউ কেউ বলেছেন ‘না, দেখতে পাইনি’, অধিকাংশই বলেছেন- ‘একটু দেখে আর দেখতে পারিনি’- এটা নোয়াখালীর সেই বেগমগঞ্জের ঘটনা।’

সোমবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃত করে নাটক নির্মাণের প্রতিবাদে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন নিজের ছায়া দেখলে ভয় পাচ্ছেন’ বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা বলেছেন- ‘সামরিক অভিধান থেকে মার্শাল ল উঠিয়ে দেয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী আপনার আইন কি? দেশে কোন আইন চলছে? এটাতো ভয়ঙ্কর আইন। এটা তো মার্শাল ল আইনের থেকেও ভয়ঙ্কর, মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। স্বামীকে বেঁধে রেখে যখন স্ত্রীকে নির্যাতন করা হয় তখন বঙ্গভবনে আপনার জন্মদিন পালন করা হয়। এই হচ্ছে আপনার পরিণতি, এই হচ্ছে আপনার সরকার।’ 

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বলেছেন সামরিক অভিধান থেকে মার্শাল ল’ তুলে দেয়া উচিত। বুঝলাম, মার্শাল ল তুলে দেয়া উচিত। তাহলে আপনারটা কি? আপনারটা কি আইন? আমরা তো ইতিহাসে দেখেছি, প্রতিটি সামরিক আইনের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা। শুধু স্বাধীনতার আগে নয়, স্বাধীনতার পরেও প্রথম মার্শাল ল যিনি জারি করেছিলেন তিনি একজন আওয়ামী লীগ নেতা। মর্মান্তিক ১৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত তিনি বাকশালের মন্ত্রী ছিলেন। আমরা খবরের কাগজে দেখেছি, সেই রাতে খন্দকার মোশতাক শেখ সাহেবকে কবুতরের মাংস দিয়েছিলেন। এত মিল ছিল তাদের মধ্যে, সেই লোকটাই এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন।’

এ প্রসঙ্গে রিজভী আরও বলেন, ‘তখন বাকশালের অধিকাংশ মন্ত্রী মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন। খন্দকার মোশতাক প্রথম মার্শালের অধিনায়ক। তারপরে এরশাদ আসলো, তখন ‘আই এম নট আনহ্যাপি’ কে বলেছেন? শেখ হাসিনা বলেছেন। তারপরে মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন ‘আমাদের আন্দোলনের ফসল’ কে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন। তাহলে এই ভূখণ্ডে সামরিক শাসনের সাথে কারা জড়িত, আওয়ামী লীগ জড়িত।’

সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আজ তারা বলছে, অভিধান থেকে মার্শাল ল তুলে ফেলা উচিত। এরপরই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন- ‘বিএনপি অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে’। অর্থাৎ পরিস্থিতি যা- রাস্তায় রাস্তায় রক্তাক্ত নারীর আর্তচিৎকার, রাস্তায় রাস্তায় শিশুর আর্তচিৎকার, রাস্তায় রাস্তায় গুম-খুনের কারণে যে ভয়ঙ্কর আর্তধ্বনি আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে এগুলো ঢাকার জন্যই সরকার এসব উদ্ভট কথা বলছে।’

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি যেদিকে সেটা এমনভাবে ভাবিয়ে তুলেছে প্রতিটি মুহূর্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। এখানে শুধু বক্তৃতা করে প্রতিবাদ করার কিছু নেই। আমরা তো এমসি কলেজের পৈশাচিকতা দেখেছি, তার দু’দিন পরে আবারও সিলেটে নারীর ওপর পৈশাচিকতা দেখলাম। ওদিকে পাহাড়ি নারীর ওপর পৈশাচিকতা দেখেছি। এগুলোতো প্রতিদিন হচ্ছে। শরীরের রক্ত এবং হাড় শীতল হয়ে যায় এসব কাহিনী শুনলে।’

তিনি বলেছেন, ‘নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক বলেছেন, ‘তিনি জানেন না’। এরপরে নাকি দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মানবতার বিরুদ্ধে এত বড় অপরাধ যেটা বেগমগঞ্জে ঘটেছে এর সাথে জড়িত সবাই আওয়ামী লীগের, আমরা সেটুকু জানতে পেরেছি। এত বড় ঘটনা পুলিশ প্রশাসন জানেনা সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানেনা- এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হ্যারল্ড লাস্কির একটা কথা আছে- ‘একটা সরকার বা রাষ্ট্রকে বোঝা যায় তার কর্মকর্তাদের দিয়ে’। আজকে নোয়াখালীর এসপি, ডিসি তারা ১ মাস পর বলছেন এ ঘটনার সত্যতা। এত বড় উৎপীড়নের ঘটনা এত বড় সম্ভ্রমহানির ঘটনা এত বড় শ্লীলতাহানির ঘটনা কী বীভৎস কী মর্মান্তিক, যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।’

ছাত্রদলের সাবেক এ সভাপতি বলেন, ‘আজকের অবস্থা ফরাসি বিপ্লবের মত। ফরাসি বিপ্লবে যেমন ত্রাসের রাজত্ব হয়েছিল আজকেও তেমন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। আজ যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে এর থেকে বাঁচতে হলে ফ্রান্সের জনগণ যেমন কমিটি গঠন করেছিল ঠিক তেমনই বাংলাদেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে পাড়ায়-মহল্লায় পাহারা দিতে হবে। তাহলে আপনার আমার মা-বোনেরা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাবে। আমার আপনার মা-বোন-কন্যাদের ছাত্রলীগ-যুবলীগের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। প্রশাসন দিয়ে কিছুই হবে না। আমরা একটি আতঙ্ক ও ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আজ শুধু কথার মধ্যে শেষ নয়। আরও যে কত আর্তনাদ ও বিপদ শুনতে হবে তার কোনও ঠিক নেই। এজন্য বলেছি, পাড়া-মহল্লায় যারা গণতন্ত্রকামী মানুষ তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কুৎসিত, দানব, নারীর সম্ভ্রম হরণকারী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে।’

ইতিহাস বিকৃত করে ‘ইনডেমেনিটি’ নাটক বানানোর প্রতিবাদ জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘নাটকের কথা বারবার বলছি। ওরা তো করবেই। এখানে শামীমের এত টাকা, সম্রাটের ক্যাসিনোর এত টাকা! যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছেন সেই নেতার বিরুদ্ধে ‘কিছু করলে কিছু একটা পাওয়া যাবে’। সাংস্কৃতিক মন্ত্রী হওয়া যাবে অথবা সম্রাটের মত টাকাওয়ালা হওয়া যাবে। শেখ হাসিনার কাছে নীতি কোনও ব্যাপার না। যারা মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে গালি দেবে, তাকে নিয়ে বিদ্বেষ পোষণ করবে, এই সরকারের কৃপাদৃষ্টিতে তারা উপকৃত হবে। যারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি বাজে কথা বলবে কুরুচিপূর্ণ কথা বলবে তারাও পুরস্কৃত হবে।’

তিনি বলেন, ‘আপনাদের কি মনে আছে হাসানুল হক ইনু ১৫ আগস্টের পর ট্যাংকের উপরে লাফালাফি করেছিলেন। কিন্তু উনি এখন একটি কাজ ভালোভাবেই করছেন, প্রতিদিন গলা ছেড়ে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। এর পুরস্কারস্বরূপ তাকে তথ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল। কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরে যে যিনি লাফালাফি করলেন, শেখ হাসিনা এটাকে কিছু মনে করলেন না। মতিয়া চৌধুরী বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বাবাকে নিয়ে বলেছিলেন- ‘পিঠের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানাবেন’। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ওটা ভুলে গেছেন। ওটা তিনি মনের মধ্যে রাখেননি। কারণ এই মতিয়া চৌধুরী সকাল-সন্ধ্যা এত কুৎসিতভাবে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বাজে কথা বলতে পারেন তার জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজেও আনন্দিত। আওয়ামী লীগের যে যাই পাপ করুক না কেন, যদি জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলে তাহলে তার কবিরা গুনাহও শেখ হাসিনার কাছে মাফ।’

আয়োজক সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সংগঠনের সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার ও সহ-দফতর সম্পাদক নাজমুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com