ধর্ষকদের স্বীকারোক্তি: গাড়িতেই ধর্ষণ করা হয়েছিল গৃহবধূকে
সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে তরুণী গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি সাইফুল ইসলাম, এজাহারভুক্ত আসামি অর্জুন লস্কর ও রবিউল ইসলামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পর আরো তিন ধর্ষক অনুরূপ জবানবন্দি দিয়েছে। শুক্রবার সাইফুল, অর্জুন ও রবিউল তাদের জবানবন্দিতে গৃহবধূকে গাড়িতে ধর্ষণ ও আলামত নষ্ট করার চেষ্টা করেছিলো বলে জানিয়েছেন। এদিকে, শনিবার ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এজাহার নামীয় আসামি তারেক ও মাছুমের ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. জিয়াদুর রহমানের আদালতে রাজন, মহানগর হাকিম সাইফুর রহমানের আদালতে আইনুল ও মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন খানম নীলার আদালতে রণি দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
আলামত নষ্ট করতে চেয়েছিল ধর্ষকরা
ছাত্রাবাসে প্রাইভেট কারের ভেতরই চারজন ধর্ষণ করে তরুণী গৃহবধূকে। এরপর আলামত নষ্ট করতে প্রাইভেট কারটি ধুয়ে ফেলার চেষ্টা চালায় ধর্ষকররা। তবে, ততক্ষণে পুলিশ ঘটনাস্থলে চলে আসায় সে চেষ্টা সফল হয়নি । আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে দুই আসামি এমনটি বলেছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
গত শুক্রবার রাতে সিলেটের অতিরিক্ত মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দেন তিন আসামি।
জবানবন্দিতে সাইফুর ও অর্জুন জানান, তারা দু’জনসহ চারজন তরুণীকে ছাত্রাবাসের ভেতরে গাড়িতেই চারবার ধর্ষণ করেন। জবানবন্দিতে তারা আরো বলেন, ধর্ষণের ঘটনা আড়াল করার জন্য গাড়ি থেকে ধর্ষণের আলামত মুছতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু পুলিশ দেখে ফেলায় তারা গাড়ি ফেলে পালিয়ে যান। অপর আসামি রবিউল জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি ধর্ষণ করেননি । তবে ধর্ষকদের সহযোগিতা করেছেন।
আসামিদের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, ধর্ষকরা আলামত নষ্ট করার চেষ্টা করছে এমন খবর পেয়ে দ্রুত ছাত্রাবাসের ভেতরে প্রবেশ করেন শাহপরান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সোহেল রানা। অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা তখন ছাত্রাবাসের প্রধান ফটকে কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষায় ছিলেন।
এ ব্যাপারে এসআই সোহেল রানা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ওই সময় ঘটনাস্থলে না গেলে শুধু ধর্ষণের আলামত নষ্ট নয়, সাইফুরের দখল করা ছাত্রাবাস কক্ষ থেকে একটি পাইপগান, চারটি রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারও হতো না। জব্দ তালিকা করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন, গাড়িটি ধুয়ে মুছে ফেলার সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছিলেন ধর্ষণকারীরা। মিনিট দশেক সময় পেলেই সব আলামত নষ্ট করে ফেলতেন তারা।
একটি সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেল পাঁচটা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা জবানবন্দি দেন সাইফুর। জবানবন্দিতে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে সাইফুর বলেছেন, তরুণীকে আগে থেকে চিনতেন তিনি। তরুণীর সঙ্গে থাকা যুবককে চিনতেন না। ওই যুবককে স্বামী বলে পরিচয় দেন তরুণী। সাইফুর বলেন, তারা তরুণীর স্বামীর কাছে টাকা-পয়সা দাবি করেন।
জবানবন্দিতে এই আসামি আরো বলেন, প্রাইভেটকারটি টিলাগড় মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিল, সেখান থেকে তারেক কারটি চালিয়ে ছাত্রাবাসে নিয়ে আসেন। এ সময় সাইফুর ও অর্জুন গাড়িতে ছিলেন। পরে মোটরসাইকেল চালিয়ে শাহ রনি তাদের সঙ্গে যোগ দেন। গাড়িতে তারা তরুণীকে নিয়ে নানা রকম খিস্তি করেন। গাড়িটি নিয়ে তারা এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের ১০৫ নম্বর কক্ষের সামনে আসেন। স্বামীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে সেখানেই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। ১০৫ নম্বর কক্ষটি মাহফুজুর রহমানের (এজাহারে ৬ নম্বর আসামি) নামে বরাদ্দ থাকলেও কক্ষটি ব্যবহার করতেন সাইফুর। কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া পাইপগানসহ অস্ত্রগুলো তার ছিল বলে জবানবন্দিতে বলেছেন।
আরও ২ ধর্ষকের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ
সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় এজাহার নামীয় আরও দুই আসামির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে গণধর্ষণ মামলার এজাহার নামীয় দুই নম্বর আসামি তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮) ও ছয় নম্বর আসামি মাহফুজুর রহমান মাছুমের (২৫) ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দু’জনকে পুলিশি প্রহরায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এ নিয়ে মামলার আট আসামির সবার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। আসামিদের ডিএনএ নমুনার সঙ্গে ধর্ষণের শিকার ধর্ষিত তরুণীর ডিএনএ’র সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে।