সরকার দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা জটিল করে তুলেছে: ফখরুল

0

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা ও জাতিগত নিপীড়ন-নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার তিন বছর পূর্তির প্রাক্কালে মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ সংকট সমাধানে বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিক ফল। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সমস্যা দূর করতে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।’

শুক্রবার (২ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১ টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে অগ্রাধিকারের বিষয় হওয়া উচিত ছিল রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান। সরকারের সামগ্রিক কার্যকলাপ বিবেচনায় এ ধরনের অগ্রাধিকার সর্বত্রই অনুপস্থিত। এর বড় প্রমাণ হচ্ছে, এখন পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রী কোনও বিশ্বনেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি, বিশ্ব সফর করেননি এবং জাতিসংঘে গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি তুলে ধরেননি। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমরা বৈশ্বিক,  আঞ্চলিক ও দ্বি-পাক্ষিক সকল স্তরেই ব্যর্থ হচ্ছি।’

বিএনপির পক্ষ থেকে সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এহেন সেনা সমাবেশের তীব্র নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ ধরনের অপতৎপরতা রুখতে সর্বাত্মক প্রস্তুতিগ্রহণপূর্বক আন্তঃআঞ্চলিক কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বর্তমান নতজানু সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে সকলেই অবগত যে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্তে গত ১১ সেপ্টেম্বর অন্তত তিনটি পয়েন্টে সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার সৈন্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে। দু’দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের অন্তত তিন পয়েন্টে কা নিউন ছুয়াং, মিন গা লার গি ও গার খু এ ট্রলার থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সৈন্যদের নামতে দেখা গেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা, মিয়ানমার সেনাবাহিনী একদিনেই এক হাজারের বেশি সৈন্যের সমাবেশ ঘটিয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে গণহত্যা শুরুর সময়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ঠিক একইভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সৈন্য সমাবেশ করেছিল। ফলে ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ভোরে শুরু হওয়া সেনা সমাবেশের কারণে রাখাইনে এখন যেসব রোহিঙ্গা রয়েছেন, তাদের মধ্যে নতুন করে ভীতি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সন্দেহজনক গতিবিধির মাধ্যমে এ ধরনের সেনা সমাবেশ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ও মিয়ায়নমারের রাখাইনে আবদ্ধ রোহিঙ্গাদের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। একই সাথে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত সেনা তৎপরতা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি রক্তচক্ষুর বার্তার সমতুল্য।’

তিনি বলেন, ‘বিনা উসকানিতে সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিতর্কিত আন্তর্জাতিক সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ ধরনের সমাবেশ শুধু যে মিয়ানমারের নৃ-তাত্ত্বিক রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর জন্য আতঙ্কের বিষয় তা নয়, একই সাথে এটা চলমান আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারের প্রতি মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্র কর্তৃক আইন অবমাননার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার শুরু থেকে দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে বিষয়টি জটিল থেকে জটিল করে তুলেছে। বর্তমান সরকারের এই দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণেই জাতিসংঘের সর্বোচ্চ সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধসহ কোনও ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাবে আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু চীন ও রাশিয়ার সমর্থন লাভে আমরা ব্যর্থ হই।’

‘এমনকি, তথাকথিত বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় চিত্রিত করতে যখন বর্তমান নতজানু সরকারের অবৈধ মন্ত্রীবর্গ নিয়ত ব্যতিব্যস্ত, এরকম সময়েও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের নেওয়া নিপীড়নমূলক পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধ’ বলে সমর্থন করে ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের সমগ্র জনগণকে গভীরভাবে হতাশ করেছিল’- যোগ করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে সমগ্র বিশ্বের সার্বিক পরিকল্পনা আর দৃষ্টভঙ্গিতেই বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। করোনা পরবর্তী বিশ্বে যে পরিবর্তন তা সমগ্র বৈশ্বিক নীতিতেই বড় ধরনের প্রভাব রাখবে। রোহিঙ্গা সমস্যাও এর বাইরে নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী। বিশ্বের মানচিত্রে এ জাতিগোষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনায় বেসামরিক তদারকিতে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলকে একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে যথাযথ নাগরিক অধিকার ও মর্যাদায় রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের আবাসভূমিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার কোনও বিকল্প নাই।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানাই, রোহিঙ্গা সমস্যা দূর করতে হলে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন, গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করুন, বহির্বিশ্বে দেশের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করুন।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com