শেখ হাসিনার পিতা যে কাজ করতে পারেনি, সে কাজ করেছেন জিয়াউর রহমান: রিজভী
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ ক্যাম্পাসগুলো ছাত্রলীগ-যুবলীগের অপকর্মে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ডেঞ্জার জোনে’ পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে যেখানে ছাত্রলীগ-যুবলীগের অফিস রয়েছে, সেসব স্থান সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ডেঞ্জার জোনে’ পরিণত হয়েছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের অফিসের কাছে কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠাতে ভয় পাচ্ছে অভিভাবকরা। বিশেষ করে মেয়েদের পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসগুলো ছাত্রলীগ-যুবলীগের দৌরাত্ম্যে এখন শিক্ষার্থীদের জন্য ডেঞ্জার জোন।’
বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ব্যঙ্গ করে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট কাহিনিনির্ভর কুরুচিপূর্ণ নাটক প্রচারের প্রতিবাদে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যত রাগ, যত ক্ষোভ সব জিয়াউর রহমানের প্রতি, বেগম খালেদার প্রতি। আর এ রাগ কী জন্য জানেন আপনারা? উনার পিতা যে কাজটি করতে পারেনি, সে কাজটি করেছেন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেছেন। তারা এটি অর্জন করতে পারেনি। তাই তাদের ক্ষোভ, ‘কেন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করলো? এটা পাকিস্তান থাকতো, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতো আমার বাবা। কেন তিনি ঘোষণা দিলেন? কেনো তিনি যুদ্ধ করলেন?’’
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, জিয়াউর রহমান নাকি পাকিস্তানের চর। যে লোক পাকিস্তানের কমান্ডারকে হত্যা করে যুদ্ধের সূচনা করলেন তিনি হলেন ‘চর’। আর যিনি পাকিস্তানের সেনাদের হাতে বন্দি হয়ে থাকলেন নয় মাস তিনি হলেন ‘নন্দিত’। আওয়ামী লীগের কাছে জিয়া ‘নিন্দিত’, কারণ তিনি বাকশাল চালু করেননি। তা করলে আওয়ামী লীগের কোনও অসুবিধা ছিল না। জিয়া সংবাদপত্র বন্ধ না করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেন দিলেন, এজন্য তিনি নিন্দিত।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘এখন শুধুই গুণগান শেখ হাসিনার শেখ পরিবারের। তারাই নাকি সবকিছু করেছে। তারা নাকি বাংলাদেশের মালিক। বিএনপির সোচ্চার কণ্ঠে এর প্রতিবাদ করে। বিএনপি যখন তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, যখন গণতন্ত্র হত্যার প্রতিবাদ করে, তখন তারা প্রতিহিংসায় সমালোচনায় লিপ্ত থাকে।’
‘ইনডেমনিটি’ নাটকের প্রতি ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, ‘তাদের কিছু বুদ্ধিজীবী আছে, সাংস্কৃতিকজীবী। তাদের দিয়ে একটা বস্তা পচা নাটক বানিয়েছে, এ নাটক জনগণ বিশ্বাস করে না। যারা অপপ্রচার করে মিথ্যা কথা বলে, তারা কোনো দিন টিকে থাকে না। সত্যের জয় অবধারিত।’
সিলেটের এমসি কলেজের ন্যক্কারজনক গণধর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ কর্তৃক নববধূকে গণধর্ষণের ঘটনার পর শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার আর কোনও বৈধতা আছে? না, নাই। আপনার (শেখ হাসিনা) মন্ত্রিরা আপনার জন্মদিন পালন করে। আপনার লজ্জা লাগে না? এমসি কলেজের দিকে তাকান, পাহাড়িদের দিকে তাকান। এগুলো ঢাকার জন্য কিছু সাংস্কৃতিককর্মী দিয়ে নাটক রচনা করেছেন। এই নাটক মানুষ দুই পা দিয়ে দলবে। সাধারণ মানুষ এই নাটকের বই নিয়ে এসে দুই পায়ে দলন করবে।’
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘আজ বিরোধী দলের উপর অত্যাচার করেন, যারা ভিন্নমত পোষণ করেন তাদেরকে অত্যাচার করেন। জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে মনে করেছেন মানুষ ভুলে যাবে। আপনার অত্যাচার, অবিচার, গুম-খুন চালিয়েছেন ১০ বছর। আপনি জানে না প্রত্যেকটি ঘটনা জনগণের মনে সব লেখা আছে। এই লেখা আপনি নির্যাতন করে, অত্যাচার করে মুছতে পারবেন না। আগে মুছতে পারেননি। প্রত্যেকটি কথা আমরা রেজিস্ট্রিশন করে রেখেছি। জনগণ রেজিষ্ট্রেশন করে রেখেছে।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি জিয়াউর রহমানকে বলেন পাকিস্তানের চর, আরে পাকিস্তানের চর তো আপনারা, দালাল তো আপনারা। আপনারা তৈরি হয়েছেন বিদেশি গোয়েন্দা ল্যাবরেটরিতে। এজন্য তাদের স্বার্থ ছাড়া দেশের স্বার্থ আপনারা দেখেন না।’
বিএনপি এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি নাকি রাজনীতির হাটে কেনাবেচা করে। একবার নিজের দিকে তাকান, আবুল মাল আব্দুল মুহিত কে ছিলেন? তিনি ছিলেন এরশাদের উপদেষ্টা, তাকে আপনারা মন্ত্রী বানিয়েছেন। এ আর খন্দকার সাহেব তিনিও এরশাদের মন্ত্রী ছিলেন, তাকেও আপনারা মন্ত্রী বানিয়েছেন। রাজনীতির হাটে কে কেনাবেচা করে নিজেদের দিকে একবার তাকান।’
‘ছাত্রলীগ-যুবলীগ যা ইচ্ছা তাই করছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই ছাত্রলীগ গতকাল, গত পরশু দিন ঢাকা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের ধানের শীষের প্রার্থীর মিছিলে হামলা করেছে। অতীতে প্রমাণ হয়েছে আবারও প্রমাণ হয়েছে, আওয়ামী লীগ যে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে সেটা লাঠিপেটার গণতন্ত্র। তারা লাঠিপেটার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই আজকে নির্বাচনী প্রচারণায় বলুন, মিছিলে বলুন বা গণতান্ত্রিক সংগ্রামে বলুন সবখানে তারা সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিচ্ছে। এ সন্ত্রাসের সন্ত্রাসীরা কাপুরুষ। যেদিন তাদের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকবে না, সেদিন তারা গর্তে লুকাবে।’
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জুমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মহানগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।