রিফাত হত্যা মামলায় মিন্নিসহ ৬ জনের ফাঁসি

0

আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী মিন্নিসহ ৬ জনের ফাঁসির দণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।

গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডের ক্যালিক্স একাডেমির সামনে স্ত্রী মিন্নির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সহযোগীরা। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান। এরপর রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও পাঁচ/ ছয়জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করেছিলেন নিহত রিফাতের বাবা।

পরে ২ জুলাই ভোরে জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রধান আসামি নয়ন বন্ড (২৫) নিহত হন।  

প্রাথমিক অবস্থায় পুলিশ বিষয়টি আমলে না নিলেও ফেসবুকে এ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে বরগুনার পুলিশ প্রশাসন। দেশব্যাপী ওঠে সমালোচনার ঝড়। এরপর চেকপোস্ট, কড়া নিরাপত্তা ও তল্লাশিতে একে একে ধরা পড়ে অভিযুক্তরা।

হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর গত বছরের ১৬ জুলাই মিন্নিকে তার বাবার বাসা থেকে বরগুনা পুলিশ লাইনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে হওয়ায় ওইদিন রাতেই মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।

পরে গত বছরের ১৭ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে আদালত মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে গত বছরের ২০ জুলাই পাঁচদিনের রিমান্ডের তৃতীয় দিন একই আদালতে রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মিন্নি। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।

এরপর ৪৯ দিন কারাভোগের পর গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার শর্তে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বরগুনার কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন মিন্নি। জামিনের পর থেকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের জিম্মায় বাড়িতে ছিলেন তিনি।

মামলার তদন্তকারী সদর থানার কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) হুমাউন কবির ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক; দুইভাগে বিভক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন রয়েছেন। মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনও পলাতক।

গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালত। মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে এ মামলায়।

রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বী আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বী, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।

এদিকে, অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলেন- হাজতে থাকা রিসান, রিফাত হাওলাদার, রায়হান, অলিউল্লাহ (অলি), নাঈম, তানভীর এবং জামিনে থাকা চন্দন, রাতুল, নাজমুল হাসান, নিয়ামত, মারুফ বিল্লাহ, মারুফ মল্লিক, আরিয়ান শ্রাবণ এবং প্রিন্স মোল্লা।

মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় শিশু আদালতে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামি পরীক্ষা করা হয়।
এসময় আদালতে উপস্থিত সব আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বক্তব্য দেন। আগামী ৫ থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন আদালত।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com