ছাত্রলীগের দখলে থাকা এমসি কলেজ ছাত্রাবাস যেন অস্ত্রের গোদাম, মাদকের আড্ডাখানা
সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকার শতবর্ষী বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজের যাত্রা শুরু ১৮৯২ সালে। বৃহত্তর সিলেটের প্রথম কলেজ দেশের সপ্তম প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। ১৮৯২ সালে রাজা গিরিশচন্দ্র রায় তার পিতামহ মুরারিচাঁদের (এমসি) নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রিটিশ আমলে ১৯২০ সালে ৬০০ শতক জায়গার ওপর আসাম ঘরানার স্থাপত্যরীতির সেমিপাকা কাঠামোর ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়।
এ স্থাপত্যরীতির ফলে ছাত্রাবাসটি দেশে-বিদেশে ‘হেরিটেজ’ হিসেবে পরিচিত। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দুই বছরের মাথায় অবিকল আগের কাঠামোয় ছাত্রাবাস পুনর্র্নির্মাণ করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাস ছাত্রলীগের দখলে।
বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, ছাত্রাবাসের ভেতরে রীতিমতো আস্তানা গড়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এরফলে ছাত্রদের পাশপাশি অনেক অছাত্রও এখানে রয়েছে। নগরীর টিলাগড় এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার প্রশ্রয়ে এসব চলছে। এমনকি ছাত্রাবাসের ভেতরে মাদক সেবন, জুয়ার আসর বলে নিয়মিত। অস্ত্রের মজুদও রয়েছে সেখানে।
কোন ঘটনা ঘটলেই কেবল ছাত্রাবাসের ভেতরের চিত্র গণমাধ্যমে কিছুটা প্রকাশ পায়। এরপর আবার আগের মতোই চলে সবকিছু।
২০১২ সালের ৮ জুলাই সন্ধ্যায় ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের সংঘ’র্ষের জেরে এতিহ্যবাহী ছাত্রাবাসে আগুন দেয়া হয়। এতে ৪২টি কক্ষ ভস্মীভূত হয়। অভিযোগের তির ছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিকে।
এরপর ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম।
এছাড়া কিছুটা বিরতি দিয়ে এমসি কলেজ ও তার আশেপাশের এলাকায় নিয়মিত অস্ত্রের মহড়া চলে ছাত্রলীগের। গত কয়েক বছরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী নি’হত হয়।
সর্বশেষ গত শুক্রবার এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে ধ’র্ষণের শিকার হন এক তরুণী। তিনি এখন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি রয়েছেন ওই তরুণী। এঘটনায় ছাত্রলীগের ৬ নেতাকর্মীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মা’মলা হয়েছে।
ইতিমধ্যে ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে।