ভিআইপি স্টাইলে কারাগারে ‘আয়েশেই’ আছেন সাহেদ, সাবরিনা ও পাপিয়া
করোনার জাল সনদ, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, অস্ত্র ও মাদক মামলাসহ নানা অভিযোগে কারাগারে আছেন বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ, ডাক্তার সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও শামীমা নূর পাপিয়া। কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন মোহাম্মদ সাহেদ। ডাক্তার সাবরিনা ও শামীমা নূর পাপিয়া আছেন গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে। তারা তিনজনই অনেকটা ভিআইপি স্টাইলে কারাগারের দিনগুলো পার করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
বিভিন্ন টেলিভিশনে টকশো করে পরিচিতি পান রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ। কয়েক বছর আগে একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতা ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালান। হাসপাতালসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংক্রমণ শুরু হলে রিজেন্ট হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে অনুমোদন করিয়ে নেন। কিন্তু র্যাবের অভিযানে ধরা পড়ে করোনার জাল সনদ দেওয়ার বিষয়টি। এছাড়া আরও একাধিক অভিযোগে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় তাকে গত ১৫ জুলাই সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব।
বেশ কিছুদিন রিমান্ডে থাকার পর এখন মোহাম্মদ সাহেদকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। কারাগারের আলাদা একটি সেলে এককভাবে রাখা হয়েছে তাকে। চাইলেই টাকা দিয়ে কারাবিধি অনুযায়ী নিজের পছন্দের খাবার খেতে পারেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, মোহাম্মদ সাহেদকে একজন সাধারণ বন্দি হিসেবেই কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি কোনও ভিআইপি কিংবা ডিভিশন পাওয়া বন্দিও নন। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতেই তাকে আলাদাভাবে একটি সেলে রাখা হয়েছে। যে সেলে আর কাউকে রাখা হয়নি। আর কারাবিধি অনুযায়ী কারাগারের ক্যান্টিন থেকে যেকোনও বন্দি বাড়তি খাবার কিনে খেতে পারেন।
করোনাভাইরাস পরীক্ষার জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডাক্তার সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে। গত ১২ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও জোনের একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে এনআইডি কার্ড জালিয়াতিসহ একাধিক মামলা দায়ের করা হয়।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জালটাকা বহন ও অবৈধ টাকা পাচারের অভিযোগে যুবলীগ নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউসহ চার জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দু’টি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি অস্ত্র ও একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।
এসব মামলায় ডাক্তার সাবরিনা আরিফ ও শামীমা নূর পাপিয়া আছেন গাজীপুরের কাশিমপুরের কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে। তাদেরও সেখানে সাধারণ বন্দিদের থেকে আলাদা রাখা হয়েছে। আলাদা আলাদা সেলে (কক্ষে) এককভাবে রাখা হয়। বাইরে থেকে উন্নতমানের খাবার ও কসমেটিকসসহ বিভিন্ন সুবিধা দিতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আছে তাদের নানা আবদার। তবে কারাবিধির বাইরে কোনও সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় না বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের জেলার আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, ডাক্তার সাবরিনা আরিফ ও শামীমা নূর পাপিয়াকে আলাদা আলাদা সেলে (কক্ষে) রাখা হয়েছে। অন্যান্য বন্দির সঙ্গে কমন সেলে রাখা হয়নি। আর চাইলে কারাবিধি অনুযায়ী কারাগারের নিজস্ব ক্যান্টিন থেকে আলাদাভাবে কিনে খেতে পারবে। যত আবদারই থাকুক তাদের কারাবিধির বাইরে কোনও সুবিধা দেওয়া হয় না। শুধুমাত্র কমন সেলে সমস্যা হতে পারে এমন আশঙ্কায় তাদের আলাদা সেলে এককভাবে রাখা হয়েছে।