মাতারবাড়ি ও মহেশখালীর কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে পরিবেশবাদীদের সতর্কতা

0

পরিকল্পনা অনুযায়ী কক্সবাজারের মাতারবাড়ি ও মহেশখালীর আটটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে ৩০ বছরে ৩০ হাজার মানুষ বায়ুদূষণজনিত রোগে ভুগে মারা যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন পরিবেশবাদীরা।

মঙ্গলবার গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যৌথ ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ কথা জানায়।

সিআরইএর প্রধান বিশ্লেষক লরি মিলিভিরতা বলেন, মহেশখালী ও মাতারবাড়িতে প্রস্তাবিত আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রভাব নিরূপণ করায় চরম গাফিলতি করা হয়েছে এবং এগুলোর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিও খুব দুর্বল।

তিনি বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণ হতে পারে। যেমন বায়ুতে বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতি বেড়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ও সংলগ্ন এলাকায় পর্যটকের সংখ্যা হ্রাস পেতে পারে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বাংলাদেশে কোভিড১৯-এর মতো মহামারী আরও ‘ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে’। দেশে বায়ুদূষণজনিত রোগে এমনিতেই বিপুলসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত, বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাতাসে আরও বিষাক্ত পদার্থ মিশলে এ ধরনের মহামারীতে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।

‘বায়ুর মান, স্বাস্থ্য পরিবেশের ওপর বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব’ শীর্ষক এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে মাতারবাড়ি ও মহেশখালীতে প্রস্তাবিত আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর, যেগুলোর সমন্বিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৮.৭ গিগাওয়াট।

লরি দাবি করেন, কক্সবাজার অঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম। এগুলোর বিষাক্ত পদার্থ নির্গমন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা খুবই অপ্রতুল। মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট (প্রথম পর্যায়) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিষাক্ত পদার্থ নির্গমনের সীমা চীন, ভারত বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়ে প্রায় ২৫ গুণ বেশি। জাপান ও চীনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি বেশিরভাগ প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাতারবাড়ি-মহেশখালীতে প্রস্তাবিত আটটি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র তাদের ৩০ বছরের জীবনকালে যে বিষাক্ত পদার্থ বাতাসে নিঃসরণ করবে, তা ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে। এর মধ্যে ৪১০০ জন দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ, ৭০০০ জন হৃদরোগ, ২০০ শিশুসহ ২৯০০ জন ফুসফুসের প্রদাহ, ১৩০০ জন ফুসফুসের ক্যান্সার, ৬৪০০ জন স্ট্রোক এবং ২৪০০ জন নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের বিষক্রিয়ায় মারা যেতে পারে।

গবেষণায় বলা হয়, প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বাতাসে ১৬০০ কেজি পারদ এবং ৬০০০ টন ফ্লাই অ্যাশ নির্গমন করবে। এর মধ্যে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া পারদের মধ্যে ৪০ শতাংশ মাটি ও স্বাদুপানির জলাশয়ে জমা হবে, এতে খাদ্যে পারদের পরিমাণ বাড়বে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা বাপার সহ-সভাপতি রাশেদা কে চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের লক হেভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া, বিএমএ’র সাবেক সভাপতি ডা. রশিদ-ই-মাহবুব, বাপা কক্সবাজারের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com