‘শুদ্ধি অভিযানে’ গ্রেফতাররা বিভিন্ন আর্জি নিয়ে হাইকোর্টে
সরকারের শুদ্ধি অভিযানে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা বিভিন্ন আর্জি নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে জামিন আবেদন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়াসহ টেন্ডারের চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে আবেদন।
রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীরা বলছেন, উচ্চ আদালতে আসা তাদের আইনগত অধিকার। তবে এ সমস্ত ব্যক্তিদের এসব আবেদনের বিরুদ্ধে জোরালেভাবে আইনগত জবাব দেওয়া হবে। কোনোভাবেই কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে দল-মত নির্বিশেষে বিভিন্ন খাতের অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও অবৈধ অর্থের বিরুদ্ধে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করে আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন বাহিনী। প্রথম দিকে ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে এ অভিযান শুরু হয়।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ফকিরাপুলে ইয়ং মেন্স ক্লাবে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু করে র্যাব। এরপর একে একে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য ক্লাবগুলোতে র্যাবের ধারাবাহিক অভিযানে বেরিয়ে আসতে থাকে ক্যাসিনোর অন্ধকার জগৎ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ একে একে গ্রেফতার হন ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন বড় নেতা।
সরকারের অন্যতম আলোচিত এ ‘শুদ্ধি অভিযান’ ছিল মূলত টেন্ডারবাজ, দুর্নীতিবাজ, মাদক এবং ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে।
র্যাব জানায়, রাজধানীতে আটটি ও বন্দর নগরীতে তিনটি ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে আনুমানিক ২৭০ কোটি টাকার মতো এফডিআর ও নগদ টাকা উদ্ধার হয়।
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে ফকিরাপুলের ইয়ং মেন্স ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব। ওইদিন রাতেই একে একে ওয়ান্ডার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ ক্লাবে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ক্যাসিনোর সন্ধান পাওয়া যায়। একই দিন রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (পরে বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের বাসা থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করেন র্যাব সদস্যরা।
২০ সেপ্টেম্বর আরেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীমকে গ্রেফতার করে র্যাব। ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় থাইল্যান্ডগামী এক বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয় অনলাইন ক্যাসিনোর জনক সেলিম প্রধানকে।
৬ অক্টোবর সবচেয়ে আলোচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি (পরে বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার সহযোগী এমরানুল হক আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। এছাড়া সাবেক কাউন্সিলরসহ আরও অনেককে গ্রেফতার করা হয়।
নিম্ন আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে এসব আসামিদের মধ্যে অনেকে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। অনেকে আবার জব্দ অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়াসহ অন্যান্য আবেদনও করছেন। এর মধ্যে জি কে শামীম, এনামুল হক আরমান, এনামুল হক এনু, রুপন ভূঁইয়া, তারেকুজ্জামান রাজীব, হাবিবুর রহমান অন্যতম।
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, যে কেউ উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। এটা তাদের আইনি অধিকার। কিন্তু দুদক কাউকে ছাড় দেবে না। সে যেই হোক না কেন। আইনি ফাঁকে যেন কেউ সুযোগ না নিতে পারে সে বিষয়ে দুদক সজাগ রয়েছে।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের সময় যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের বিষয়েও সরকার ছাড় দিচ্ছে না। একজন হাইকোর্টে জামিন পেয়েছিলেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদনের পর সেটি স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।