উন্নত বীজে উৎপাদন বাড়ালে পিঁয়াজের সংকট কাটবে: আবদুল আউয়াল মিন্টু

0

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, স্থায়ীভাবে পিঁয়াজের সংকট কাটিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করে আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এর মধ্যে যত দিন আমরা পিঁয়াজ আমদানি করব তত দিন একটি দেশের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে কয়েকটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। এই দুটি বিষয়ে নজর দিলে বাংলাদেশে পিঁয়াজের দাম স্থিতিশীল হবে। নইলে যত দিন ভারত পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখবে, আমরা তত দিন বেশি দামে পিঁয়াজ কিনব। সাময়িক সময়ে পিঁয়াজ আমদানি ছাড়া এই সংকট কাটানো যাবে না।

তিনি বলেন, এখন যে দেশ থেকেই পিঁয়াজ আনা হোক না কেন, পিঁয়াজের দাম ৫০ টাকার নিচে হবে না। যেদিন ভারত পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করল, সেদিন মিসর, চীন, মিয়ানমার-সবাই পিঁয়াজের দাম টনপ্রতি ৪৮০ ডলার থেকে ৫০০ ডলারে নিয়ে গেছে। বিশ্বায়নের এই যুগে এক জায়গায় যদি আমদানি নির্ভরতা থাকে তাহলে সর্বত্রই দাম বেড়ে যাবে। আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ভালো বীজ ও উপকরণ দিয়ে আমরা যদি উৎপাদন বাড়াতে পারি, তাহলে আমাদের পিঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। আমেরিকায় একরপ্রতি পিঁয়াজ উৎপাদন হয় ২৬ টন। এ ছাড়া কোরিয়াতে ২৪ টন, ভারতে ৮ টন, পাকিস্তানে ৭ টন এবং বাংলাদেশে ৪ টন পিঁয়াজ উৎপাদন হয়। তবে বাংলাদেশের পিঁয়াজের মান ভালো। এখানে যে জাত, সেটা কখনই ২৬ বা ২৪ টন উৎপাদন হবে না। তবে বাংলাদেশের পিঁয়াজ ১০ বা ১১ টন উৎপাদন করা কোনো সমস্যাই না। আমরা যদি আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারি, যত একর এখন বাংলাদেশে উৎপাদন করে তাতেই কিন্তু পিঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে উদ্বৃত্বও করা যায়। এদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।তিনি বলেন, আমরা এখন অন্য দেশকে দোষারোপ করছি। ভারত কেন পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করল তা নিয়ে কথা বলছি, এটা ঠিক না। মনে রাখতে হবে, ভারতে দুই তিন মাসের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন। পিঁয়াজ নিয়েও তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি রয়েছে। তাই ভারত চায় না, তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে পিঁয়াজের দাম বেড়ে যাক। তারপর ভারতেও পিঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। তাদের গত বছর রবি মৌসুমে যে পিঁয়াজ উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল, তা অতি বৃষ্টির কারণে হয়নি। এখনো কিন্তু খরিব-২ তে পিঁয়াজের উৎপাদন কম হচ্ছে। কারণ, দুই সপ্তাহ আগে অতি বৃষ্টি হয়েছে। খরিব-২ তে ভালো উৎপাদন হলেও এ সমস্যা হতো না। কার্যত, ভারত অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্যই পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, অন্য দেশেও রপ্তানি বন্ধ করেছে। মধ্যপ্রাচ্য পুরোটাই ভারত থেকে পিঁয়াজ আমদানি করে। তাদেরও রপ্তানি বন্ধ করেছে ভারত। তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, দোষ আমাদের। আমরা আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারছি না।

বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আমরা এ মুহূর্তে ৬ লাখ হেক্টর জমিতে পিঁয়াজ উৎপাদন করছি। এখানে যদি একরপ্রতি ৭ টন করে উৎপাদন করতে পারতাম, তাহলে ৪২ লাখ টন পিঁয়াজ হতো। এর ভিতরে নানাভাবে নষ্ট হয়ে ৪০ লাখ টন পিঁয়াজ থাকত। কিন্তু পিঁয়াজ উৎপাদন করি ২০ বা ২২ লাখ টন।

এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আমাদের অনেকেই টিভি টকশোতে বলছেন, পিঁয়াজ হিমাগারে সংরক্ষণ করলে ভালো হবে। মনে রাখতে হবে, পিঁয়াজ হিমাগারে রাখা যায় না। তবে বাংলাদেশে যে পিঁয়াজ উৎপাদন হয়, তাতে হিমাগারও লাগে না। ভারত, মিসর, তুরস্ক বা মিয়ানমার থেকে আমরা যে পিঁয়াজ আমদানি করি, এগুলো কোনোভাবেই তিন মাসের বেশি রাখা যায় না। ফ্রিজে রাখলেও তিন মাসেই পচে যাবে। কারণ, ওই পিঁয়াজে পানির মাত্রা অনেক বেশি, ঝাঁজ কম থাকে। এ জন্য আমাদের দেশের মানুষ আমাদের উৎপাদিত পিঁয়াজই বেশি পছন্দ করে। বাজারেও বাংলাদেশের পিঁয়াজের দাম অন্য পিঁয়াজের চেয়ে কেজি প্রতি অন্তত ১০-১৫ টাকা বেশি। বাংলাদেশি মানুষ যেই পিঁয়াজ পছন্দ করে তার উৎপাদন যদি বাড়ানো যায়, তাহলে আমাদের সমস্যা হবে না। নইলে পিঁয়াজে আমদানি নির্ভরতা থাকবেই।  আবদুল আউয়াল মিন্টু আরও বলেন, আমাদের পিঁয়াজের বাজার শুধু ভারতনির্ভর না করে অন্য দেশেরও সহযোগিতা নেওয়া উচিত ছিল। আগে থেকেই যদি আমরা ভারত ও মিয়ানমার থেকে পিঁয়াজ আনতাম, তাহলে ব্যবসায়ীরাও অভ্যস্ত থাকত। একটি পথও খোলা থাকত। বাংলাদেশে এখন ৩২ লাখ টন পিঁয়াজ দরকার, উৎপাদন ২০-২২ লাখ টন। আমরা প্রায় ১২ লাখ টন পিঁয়াজ আমদানি করি। এর মধ্যে ১০ লাখ টনই ভারত থেকে আসে। আগে থেকে যদি আমরা ভারত থেকে ৫ লাখ টন, মিয়ানমার থেকে ৩ লাখ টন বা অন্য দেশ থেকে ২ লাখ টন পিঁয়াজ আমদানি করতাম, তাহলে আজকে এই সংকট হতো না। ব্যবসায়ী ও জনগণ এতে অভ্যস্ত হতো। এখন আমরা বেশি দামেও ভারতের পিঁয়াজ কিনছি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com