মৃত রোগীকে ‘উন্নত চিকিৎসার’ জন্য পাঠালো ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ
পটুয়াখালীর বাউফলে সিজারের সময় নিপা রানী (২৫) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিজার করা ওই ক্লিনিকের নাম সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ক্লিনিক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অন্তঃসত্ত্বা নিপা রানীকে তার স্বজনরা বাউফল হাসপাতলের সামনে সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ক্লিনিকে ভর্তি করেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় তার সিজার হয়। পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক নয়ন সরকার তাকে অ্যানেস্থেসিয়া প্রদান করেন এবং তার স্ত্রী পুঁজা ভান্ডারী সিজার করেন। ৩৯তম বিসিএসের অপেক্ষমান তালিকা থেকে নয়ন সরকারকে করোনাকালীন সময় নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
নিপা রানীর মা শিখা রানী বলেন, তার মেয়ের সিজার করার পর থেকে আর জ্ঞান ফেরেনি। মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তার মেয়েকে নবজাতকসহ উন্নত চিকিৎসার নামে একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সযোগে বরিশালের উদ্দেশে পাঠায়। এ সময় তাদের সন্দেহ হলে পথে তারা দুমকি উপজেলার লুথান হেলথ কেয়ারে ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তার মেয়েকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরও তারা বিষয়টি নিশ্চিত হতে মেয়েকে নিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকও তার মেয়েকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
নিপা রানীর স্বামী সুজন দাস বলেন, ভুল চিকিৎসার কারণে তার স্ত্রী মারা গেছে। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তার মৃত স্ত্রীকে বরিশাল পাঠিয়েছে।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, ‘ডা. নয়ন সরকার ও তার স্ত্রী পুজা ভান্ডারীর সিজার করার কোনো এখতিয়ার আছে কিনা তা আমার জানা নেই।’
অভিযুক্ত ডা. নয়ন সরকার বলেন, ‘যেকোনো এমবিবিএস ডাক্তার সিজার করতে পারেন। তবে অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো হয়। তার অ্যানেস্থেসিয়া দেয়ার ৬ মাসের সনদ আছে। তার স্ত্রী পূজা ভান্ডারীরও সিজার করার অনুমোতি আছে।’
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন জানান, সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে জেলা সিভিল সার্জন চিঠির মাধ্যমে বন্ধ করার ঘোষণা দিলেও অদৃশ্য কারণে প্রতিষ্ঠানটি চলমান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায়ই প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলছে।
পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম শিপন বলেন, আমরা ৪০টি ক্লিনিক বন্ধের চিঠি দিয়েছি। এইসব ক্লিনিকের কাগজপত্র ঠিক নেই। তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সেবা ক্লিনিক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে খোলা রেখেছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।